July 3, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, June 30th, 2024, 1:52 pm

ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে চলতি বছরেই আসছে নেপালের বিদ্যুৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চলতি বছরের মধ্যেই ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে দেশ। বিদ্যুৎ আমদানিতে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ১৭ পয়সা। এ বিদ্যুতের জন্য বছরে প্রয়োজন প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। সম্প্রতি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নেপাল থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ কেনার এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে চলে আসবে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করে এ বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য পাঁচ বছরের চুক্তি করা হবে। এতে নেপালের বিদ্যুতের জন্য পাঁচ বছরে ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে ভারতের মোজাফফরবাদ সাবস্টেশনে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৪০ ইউএস সেন্ট। এনভিভিএন ট্রেডেং মার্জিন হবে দশমিক শূন্য ৫৯৫ ভারতীয় রূপি। আর ট্রান্সমিশন চার্জ হবে ভারতের সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন (সিইআরসি)-এর নিয়ম অনুযায়ী। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আসলে আমরা কী ধরনের সুবিধা পাবো?

এমন প্রশ্নে বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এটা মাত্র ৪০ মেগাওয়াট। ৪০ মেগাওয়াট হলো সাগরের মধ্যে এক বালতি পানি ফেলার মতো। এটা হলো প্রতীকী, যাতে ভবিষ্যতে আরও বেশি জলবিদ্যুৎ আমরা আনতে পারবো নেপাল থেকে। সেটার একটা সম্ভাবনা হয়তো তৈরি হবে। আমার এখনকার চাহিদার তুলনায় এটা তেমন কিছু না। জানা গেছে, বিদ্যুৎ আমাদনির বিষয়ে গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে একটি চুক্তি হয়।

চুক্তি অনুযায়ী নেপালের ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াটসহ মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। ভারত হয়ে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে এ বিদ্যুৎ আসবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সংস্কার ও সমন্বয়) মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎ আনতে ভারতকে ট্রেডিং মার্জিন হিসেবে দিতে হবে ইউনিটপ্রতি ঘণ্টায় দশমিক শূন্য ৫৯ ভারতীয় রুপি। পাঁচ বছরের জন্য এ বিদ্যুৎ কিনতে ৬৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)।

সচিব জানান, নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) ও বিউবো এ বিষয়ে চুক্তি করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেপাল সফরের কথা রয়েছে। বাংলাদেশে কবে থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে, বিষয়টি তখন নির্ধারণ করা হবে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, পানিবিদ্যুতে এত খরচ হওয়ার কথা নয়। আমার প্রশ্ন, ৮ টাকা ১৭ পয়সা কীভাবে নির্ধারণ হলো? ভারত কি এখানে আন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের অংশীদার? বিষয়গুলো পরিষ্কার নয়।

তিনি আরও বলেন, ভারতকে আমরা অনেক ধরনের সুবিধাই দিচ্ছি। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে ভারত কী দিচ্ছে, তা-ও আমাদের দেখার বিষয়। সূত্রগুলো জানায়, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে দরকার হবে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির। আর এর মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা হবে। অন্যান্য দেশ থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির পথও খুলবে। উল্লেখ্য, নেপাল থেকে এ বিদ্যুৎ আমদানি করতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বৈঠক করে ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন ও আমদানি’-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়ার জন্য এ মন্ত্রিসভা কমিটি গঠিত হয়।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছিল, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানিও করতে চায় নেপাল। বাংলাদেশের শীতের মৌসুমে দেশটি বিদ্যুৎ নিতে আগ্রহী। এদিকে গত বছরের মে মাসে বিউবো এবং ভারতের বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিদ্যুতের দাম নিয়ে সমঝোতা স্মারক হয়েছে। সে অনুযায়ী, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সঞ্চালন ও সেবা মাশুল পরিশোধ করতে হবে ভারতকে।