November 12, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, November 19th, 2023, 8:35 pm

ভারতীয় সেনাদের কেন বের করে দিতে চান মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট?

অনলাইন ডেস্ক :

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে মোহাম্মদ মুইজু বলেছিলেন, তিনি নিশ্চিত করবেন, ছোট দ্বীপের দেশটির ‘মাটিতে কোনো বিদেশি সামরিক উপস্থিতি থাকবে না’। এর পরই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নয়াদিল্লিকে সামরিক কর্মীদের প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেন। তবে ভারতীয় সরকারি সূত্রগুলো বলেছে, উভয় পক্ষ দ্বীপরাষ্ট্রের ভারতীয় সামরিক প্ল্যাটফরমগুলোর ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার জন্য ‘কার্যযোগ্য সমাধান’ নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে। কারণ তারা দেশটিতে জনগণের স্বার্থে কাজ করে।

মালদ্বীপে ভারতীয় সেনা
দ্বীপ দেশটিতে ভারতের মাত্র ৭০ জন সেনা রয়েছেন। এই কর্মীরা ভারতের পৃষ্ঠপোষকতার রাডার ও নজরদারি বিমান পরিচালনা করেন। এই অঞ্চলে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজকে দেশটির একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে টহল দিতে সাহায্য করেন। প্রেসিডেন্ট মুইজুর কার্যালয় থেকে জারি করা বিবৃতি অনুসারে, তিনি অসংখ্য জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থায় দুটি ভারতীয় হেলিকপ্টারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা স্বীকার করেছেন। ভারতীয় সেনাদের এই ছোট দলটি বেশ কয়েক বছর ধরে মালদ্বীপে অবস্থান করছে। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতা যৌথভাবে ভাগ করা চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকারের ওপর ভিত্তি করে। ভারতের সহায়তা ও প্ল্যাটফরমগুলো জনকল্যাণ, মানবিক সহায়তা, দুর্যোগকালীন ত্রাণ ও দ্বীপ দেশে অবৈধ সামুদ্রিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে।

ভূ-রাজনৈতিক হটস্পট
দিল্লির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ আয়তনের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে প্রায় পাঁচ লাখ লোক বাস করে।
দেশটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যও। কিন্তু ভারত মহাসাগর অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্ব এবং প্রধান এশীয় শক্তি ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে দ্বীপটি একটি ভূ-রাজনৈতিক হটস্পট হয়ে উঠেছে। নয়াদিল্লি ও বেইজিং-উভয়ই দীর্ঘমেয়াদি ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসেবে দ্বীপের উন্নয়নে উদারভাবে বিনিয়োগ করেছে। যদিও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেছেন, ভারত ও চীন-উভয়ের সঙ্গে তারা একসঙ্গে কাজ করতে চায়। দ্বীপ দেশটি ‘ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়ার জন্য খুব ছোট’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

চীনা দৃষ্টিভঙ্গি
ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট মুইজু। সোলিহের মেয়াদে দ্বীপদেশ ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। একজন সাবেক মন্ত্রী ও মালের সাবেক মেয়র মুইজু সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের ঘনিষ্ঠও, যিনি ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তার মেয়াদে বেইজিংয়ের কাছ থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছিলেন। এক বছর আগে মুইজু চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে বলেছিলেন, তিনি বেইজিংয়ের সঙ্গে আরো শক্তিশালী সম্পর্ক চান। তার দল নির্বাচনে জয়ীও হয়। প্রেসিডেন্ট মুইজু তখন আরো বলেছিলেন, ‘আমরা ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের নেতৃত্বে সরকারে ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছি, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্কের আরো একটি অধ্যায় লেখার জন্য।’ কিন্তু ইয়ামিনকে একটি দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং দুর্নীতির জন্য ১১ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়। ফলে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা হারান এবং মুইজুকে মনোনীত করেন।

ভারসাম্য বজায়
এরপর দেশটির শীর্ষ পদে নির্বাচনের পর মুইজু নিরাপত্তার কারণে মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিয়েছেন। শপথ নেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের নিরাপত্তার কথা আসবে, আমি একটি সীমা চিহ্নিত করব। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও মালদ্বীপ সম্মান রাখবে।’ এ ছাড়া এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট মুইজু স্পষ্ট করেছেন, তিনি চীনা সেনাদের দিয়ে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে প্রতিস্থাপন করে আঞ্চলিক ভারসাম্য নষ্ট করতে চান না। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট স্পষ্টতই ভারত ও চীনের সঙ্গে তার সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রিজিজুর সঙ্গে তার বৈঠকে তিনি মালদ্বীপে ভারত সমর্থন করছে-এমন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট মুইজু এবং মন্ত্রী কিরেন রিজিজু দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে শক্তিশালী করার নতুন প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বৈঠকটি শেষ করেছেন।’ সূত্র : এনডিটিভি