নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ রেলওয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন করছে। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণকে সেকশনটি পুনর্বাসনের কাজ দেয়া হয়েছিল। সেজন্যই রেলওয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ২০১৭ সালে চুক্তিও হয়। কিন্তু চুক্তির ৪ বছর পার হলেও প্রতিষ্ঠানটি মাত্র সিকি ভাগ কাজ করেছে। তার মধ্যে শেষ দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটি কোনো কাজই করেনি। বরং রেলওয়ে বারবার তাগাদা দিয়েও কালিন্দিকে কাজে সম্পৃক্ত করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে কালিন্দির সঙ্গে করা চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও প্রকল্পের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়াও। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলপথটি পুনর্বাসনের জন্য কালিন্দির সঙ্গে করা বাংলাদেশ রেলওয়ের চুক্তিমূল্য ৫৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ওই টাকায় ভারতীয় প্রতিতষ্ঠানটির সাড়ে ৫২ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ রেললাইন, স্টেশন ভবন ও প্লাটফর্ম নির্মাণ, রেল সেতু নির্মাণ এবং নন-ইন্টারলকড কালার লাইট সিগন্যাল ব্যবস্থা স্থাপন করে দেয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১৮ সালের মে মাস থেকে কালিন্দিকে কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়। কিন্তু কাজ শুরুর পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ঢিমেতালে কাজ করছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প এলাকায় প্রয়িাজনীয় জনবল ও নির্মাণ উপকরণও এখন পর্যন্ত আনতে পারেনি। পুরো রেলপথটির জন্য প্রয়োজন প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার ঘনফুট পাথর। কিন্তু এখন পর্যন্ত কালিন্দি মাত্র প্রায় ছয় হাজার ঘনফুট পাথর সরবরাহ করেছে। আর ২০২০ সালে করোনা মহামারী শুরুর পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছে।
সূত্র জানায়, করোনা মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে কালিন্দিকে নতুন কর্মপরিকল্পনা দাখিল করার জন্য একাধিকবার অবহিত করেছে। কিন্তু ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি এখনো তা দাখিল করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ রাখা এবং নির্মাণকাজের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি না হওয়ায় চুক্তি কেন বাতিল করা হবে না তার ব্যাখ্যা চেয়ে একাধিকবার নোটিসও দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সর্বশেষ গত বছরের ৭ ডিসেম্বর এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি বহুপক্ষীয় সভায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৫টি পয়েন্টে ৩০ দিনের মধ্যে কাজ শুরুর নির্দেশনা দেয়া হয়। পয়েন্টগুলো হলো ২২৬ নম্বর গার্ডার ব্রিজ, ২২ থেকে ২৮ নম্বর পর্যন্ত বক্স কালভার্ট, দক্ষিণবাগ স্টেশন ভবন, ৫টি বড় সেতুর উপকাঠামো খুলে ফেলা এবং দক্ষিণবাগ স্টেশন এলাকার ‘ক্লিয়ারিং’ কাজ শুরু করা। কিন্তু ওই সময়েও কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল।
সূত্র জানায়, দফায় দফায় কাজ শুরুর জন্য কালিন্দি রেল নির্মাণকে নির্দেশনা দেয়া হলেও প্রতিষ্ঠান তা আমলে নিচ্ছে না। এমন পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সঙ্গে করা নির্মাণ চুক্তি বাতিলের বিষয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে, ইআরডি এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া একমত পোষণ করেছে। আর বিগত ২০১৭ সালের নভেম্বর করা চুক্তিপত্র অনুযায়ী দুটি ধারায় কালিন্দির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তার মধ্যে জিসিসি ৯৫ দশমিক ১ (বি) অনুযায়ী ত্রুটি বা অক্ষমতার জন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে রেলওয়ে। একইভাবে চুক্তিপত্রের জিসিসি ৯৫ দশমিক ২ অনুযায়ী অসচ্ছলতা বা দেউলিয়াত্বের জন্য কালিন্দির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ইতিমধ্যে চুক্তি বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়াগুলো শুরু করেছে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১১ সালে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৭ কোটি টাকা। তবে সময়মতো কাজ শুরু করতে না পারা এবং বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় ইতিমধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৬৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আর চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে বর্তমান ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করার প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ। ফলে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাল ও নির্মাণ ব্যয় দুই-ই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে চুক্তি অনুযায়ী এবং আইন অনুযায়ী যেসব ব্যবস্থা নেয়া যাবে তার সবই নেয়া হবে। পাশাপাশি প্রকল্পটি যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা যায় সে বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২