November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, October 27th, 2023, 8:03 pm

ভারতের আইআইটি-তে স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের

ভারতের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি হায়দরাবাদে (আইআইটি হায়দরাবাদ) স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশসহ বিদেশের শিক্ষার্থীরা।

ভারতের তেলেঙ্গানার সাঙ্গারেডি জেলার কান্দি গ্রামে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা সরকারি এ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার অন্যতম পছন্দের হয়ে উঠেছে। এখানে প্রকৌশল, প্রযুক্তি, স্থাপত্য, কলা, মনোবিজ্ঞান, সাইবার নিরাপত্তা, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), শিল্প-বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন আধুনিক বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি (২০ অক্টোবর, শুক্রবার) বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধি দল পরিদর্শন যায় ভারতের এই প্রতিষ্ঠানটিতে। আইআইটি হায়দরাবাদ এর প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক বি এস মূর্তি এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আইআইটি হায়দরাবাদের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি জানান, ভারতের আইআইটিগুলোর মধ্যে আইআইটি-হায়দরাবাদ অন্যতম। বর্তমানে গোটা ভারতে তৃতীয় অবস্থানে

আইআইটি এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পড়াশোনা করছেন ৪ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী, যার মধ্যে স্নাতক পর্যায়ে ১ হাজার ৭৬০, স্নাতকোত্তর ১ হাজার ২৮০ ও ডক্টরাল শিক্ষার্থী আছেন ১ হাজার ১৬০ জন। ভবনগুলো এমন প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে যে এসির প্রয়োজন হচ্ছে না।

আইআইটি হায়দরাবাদে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে সিজিপিএ ১০-এর মধ্যে ন্যূনতম ৮ লাগে জানিয়ে তিনি বলেন, ফার্স্ট স্কিমের মাধ্যমে আমরা বিদেশি শিক্ষার্থীদের পূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ পিএইচডি করার সুযোগ দিচ্ছি। ফেলোশিপ হিসেবে প্রতিমাসে শিক্ষার্থী ৬০ হাজার রুপি করে পাবেন এবং বছরে গবেষণা সহায়তা হিসেবে এক লাখ রুপি করে পাবেন। এই ফেলোশিপের মেয়াদ থাকবে চার বছর।

ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা টেকনোলজি সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়ে ভালো ফলাফলসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকলে যে কেউ এই ফেলোশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে জানান পরিচালক।

তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কীভাবে দুটি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করা যায়। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষার্থীরা এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসুক। মেধা তালিকার ভিত্তিতে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

বি এস মূর্তি বলেন, আইআইটি হায়দরাবাদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আগ্রহী হলে তাদেরও সে ব্যাপারে সার্বিক সহায়তা করব আমরা। প্রয়োজনে আমরা বাংলাদেশিদের জন্য আরও বেশি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করব।

তিনি আরও জানান, অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি ও ডিকিন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথ ডক্টরাল ডিগ্রি প্রোগ্রাম আছে আইআইটি হায়দরাবাদের। নানা সুযোগ-সুবিধার কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে পিএইচডি শিক্ষার্থীর হার বাড়ছে। ২০২০ সালে এই প্রতিষ্ঠানে পিএইচডি করতে আসেন ২৩০ জন, পরের বছর সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭০ জনে।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের ডিন প্রফেসর তরুণ কান্তি পান্ডা বলেন, আমরা বাংলাদেশের বেশি বেশি শিক্ষার্থীকে এখানে দেখতে চাই। বাংলাদেশের সঙ্গে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাজ করবে। নিশ্চয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যথাসম্ভব ভালো কিছু করা হবে।

আরেক প্রশ্লে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ নেই। বাংলাদেশ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতাসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা করতে পারবো।

অধ্যাপক তরুণ কান্দি বলেন, ২৫ থেকে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, এখানে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি রয়েছে গবেষণার দারুণ সুযোগ। এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর প্রায় ১০০ স্টার্ট আপ দাঁড় করান।

আফগানিস্তান থেকে আসা শিক্ষার্থী ওয়ারেস আলি চলতি বছর নতুন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। তার উদ্ভাবিত ডিভাইসটি জানিয়ে দেবে অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসাধীন রোগীর পরবর্তী ৫ মিনিটের পালস রেট। এখন এই উদ্ভাবিত প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ চলছে। এ ডিভাইসটির সফলতা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন আশীর্বাদ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে আবুল হাসনাত ও উৎপল কুমার ঘোষ আইআইটি হায়দরাবাদে পড়ছেন। এর মধ্যে হাসনাতের বাড়ি চাঁদপুরে আর উৎপলের বাড়ি সাতক্ষীরায়।

হাসনাত এখানকার প্রথম বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তিনি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) থেকে বিএসসি সম্পন্ন করে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় আইআইটি হায়দরাবাদের স্কলারশিপের বিজ্ঞপ্তি তার নজরে আসে। অনলাইনে সাক্ষাৎকার দিয়ে স্কলারশিপ পেয়ে যান এখানে।

যশোরের এম এম কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স করা উৎপল কুমার, ওয়েবসাইটে স্কলারশিপের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন

করেন। এরপর অনলাইনে দেন সাক্ষাৎকার। পরে প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করে পেয়ে যান ফেলোশিপ।

ভারতের এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যে সব বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা দিচ্ছে— আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বায়োমেডিক্যাল, বায়োটেকনোলজি, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ক্লাইমেট চেঞ্জ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং, মেটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড মেটালজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল আন্ড অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, লিবারেল আর্টস, ডিজাইন, এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং হেরিটেজ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।

—-ইউএনবি