অনলাইন ডেস্ক :
প্রথম দিনের ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করলেন রোহিত শার্মা। তার সঙ্গে দারুণ এক জুটির পথে সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন শুবমান গিলও। অভিষিক্ত দেভদুত পাডিক্কাল ও সারফারাজ খানের ব্যাটে এলো ফিফটি। মাঝে দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারালেও লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায় আড়াইশ ছাড়িয়ে গেল ভারতের লিড। ধারামশালা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে দাপট দেখাল ভারত। শুক্রবারের খেলা শেষে প্রথম ইনিংসে তাদের রান ৮ উইকেটে ৪৭৩। এগিয়ে আছে তারা ২৫৫ রানে। এ দিন ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান যোগ করে স্বাগতিকরা। পুরো দিনকে ভাগ করা যায় দুটি ভাগে। প্রথম দুই সেশন মিলিয়ে স্রেফ দুটি উইকেট হারায় ভারত।
শেষ সেশনে ৫ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ড ঘুরে দাঁড়ালেও নবম উইকেট জুটিতে তাদের হতাশ করেন কুলদিপ ইয়াদাভ ও জাসপ্রিত বুমরাহ। ১০৮ বলে ৪৫ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন আছেন এই দুজন। রোহিত ১৬২ বলে ১৩ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ১০৩ রান। ১৫০ বলে ১২ চার ও ৫ ছক্কায় ১১০ রান করেন গিল। তাদের ২৪৪ বলের জুটিতে আসে ১৭১ রান। পাডিক্কাল ১০ চার ও এক ছক্কায় ১০৩ বলে করেন ৬৫ রান। ৬০ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৫৬ রান করেন সারফারাজ। আগের দিন ফিফটি করেন ইয়াশাসভি জয়সওয়ালও। এই নিয়ে চতুর্থবার এক ইনিংসে ভারতের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের সবাই স্পর্শ করলেন পঞ্চাশ। এখন পর্যন্ত ৪ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার অফ স্পিনার শোয়েব বাশির।
আট মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে বল হাতে নিয়ে প্রথম ডেলিভারিতেই উইকেটের স্বাদ পান বেন স্টোকস। ধারামশালার পিচে দ্বিতীয় দিনে টার্ন ও বাউন্স পেয়েছেন স্পিনাররা। তবে ব্যাটিংয়ের জন্য এখনও খুব বেশি কঠিন হয়ে ওঠেনি উইকেট। ১ উইকেটে ১৩৫ রান নিয়ে দিনের ব্যাটিং শুরু করে ভারত। রোহিত ৫২ ও গিল ২৬ রানে দিন শুরু করেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে ইংলিশ বোলারদের হতাশা বাড়ান দুজন। প্রথম সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১২৯ রান যোগ করে স্বাগতিকরা। লাঞ্চ বিরতির খানিক আগে ৯৯ থেকে সিঙ্গেল নিয়ে রোহিত সিরিজে দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৫৪ বলে।
ওপেনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রোহিতের সেঞ্চুরি হয়ে গেল ৪৩টি। এই তালিকায় তার ওপরে আছেন কেবল সাচিন টেন্ডুলকার (৪৫) ও ডেভিড ওয়ার্নার (৪৯)। ভারতের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় তিন নম্বরে রাহুল দ্রাবিড়ের পাশে বসলেন রোহিত, দুজনেরই ৪৮টি করে। তাদের ওপরে আছেন দুজন- ভিরাট কোহলি (৮০), টেন্ডুলকার (১০০)। রোহিত সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পরের ওভারে ৯৬ থেকে বাশিরকে স্লগ সুইপে চার মেরে ১৩৭ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন গিল। তারও এটি সিরিজে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, ক্যারিয়ারের চতুর্থ। বিরতির পর অবশ্য দুই থিতু ব্যাটসম্যানই বিদায় নেন পরপর দুই ওভারে। গত জুনে অ্যাশেজের লর্ডস টেস্টের পর প্রথমবার বল হাতে নিয়েই রোহিতকে বোল্ড করে দেন স্টোকস।
পরের ওভারে অ্যান্ডারসনের রিভার্স-সুইংয়ে বোল্ড হন গিল। টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় বোলার ও প্রথম পেসার হিসেবে ৭০০ উইকেট নেওয়া থেকে স্রেফ একটি দূরে ৪১ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন। দ্রুত দুই সেঞ্চুরিয়ানকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ভারত আরেকটি বড় জুটি পায় পাডিক্কাল ও সারফারাজের সৌজন্যে। এবারের রঞ্জি ট্রফিতে দারুণ পারফরম্যান্সে টেস্ট দলে আসা পাডিক্কাল চার মেরে খোলেন রানের খাতা। পরে আরও দারুণ কিছু বাউন্ডারি মারেন তিনি। অন্য প্রান্তে শুরুতে রয়েসয়ে খেলেন সারফারাজ। প্রথম ৩০ বলে তার রান ছিল ৯। সেখান থেকে রানের গতি বাড়িয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি ৫৫ বলে। তিন টেস্টে তার তৃতীয় ফিফটি এটি।
চা-বিরতির পর প্রথম বলেই সারফারাজের বিদায়ে ভাঙে ৯৭ রানের জুটি। বাশিরকে কাট করার চেষ্টায় স্লিপে ধরা পড়েন তিনি। খানিক পর পাডিক্কাল ছক্কায় ফিফটি পূর্ণ করেন ৮৩ বলে। তিনিও এরপর বেশিদূর টেনে নিতে পারেননি ইনিংস। বাশিরের দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হন ২৩ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। রবীন্দ্র জাদেজা ও ধ্রুভ জুরেল ভালো করতে পারেননি। দুজনই বিদায় নেন থিতু হয়ে। বাশিরকে ছক্কার চেষ্টায় লং-অন বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন জুরেল। পরের ওভারে টম হার্টলির শিকার জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। নবম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে শূন্য রানে ফিরলেন অশ্বিন। ৯ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোর পর দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন কুলদিপ ও বুমরাহ। প্রথম দিন বল হাতে ৫ উইকেট নেওয়া স্পিনার কুলদিপ ৫৫ বলে ২ চারে ২৭ রানে অপরাজিত আছেন। তার সমান বলে ২টি চারে ১৯ রানে খেলছেন পেসার বুমরাহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১৮
ভারত ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৩৫/১) ১২০ ওভারে ৪৭৩/৮ (রোহিত ১০৩, গিল ১১০, পাডিক্কাল ৬৫, সারফারাজ ৫৬, জাদেজা ১৫, জুরেল ১৫, অশ্বিন ০, কুলদিপ ২৭*, বুমরাহ ১৯*; অ্যান্ডারসন ১৪-১-৫৯-১, উড ১৫-১-৮৯-০, হার্টলি ৩৯-৩-১২৬-২, বাশির ৪৪-৫-১৭০-৪, স্টোকস ৫-১-১৭-১, রুট ৩-০-৮-০)
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা