ভারতের হিমালয়ের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি শহরগুলোতে বরফ-ঠাণ্ডা বন্যার পানিতে ডুবে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভেসে গেছে ঘরবাড়ি ও সেতু। হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
বুধবার মধ্যরাতের হিমবাহ হ্রদের পানি উপচে পড়ার পর পরই বন্যা শুরু হয়। এতে সিকিম রাজ্যের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধটি ভেঙে যায় এবং তারপরে উপত্যকার নীচের শহরগুলোতে ঢুকে পড়া পানিতে তলিয়ে যায়।
অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টিপাতের এক বছরের মধ্যে এটি উত্তর-পূর্ব ভারতে আঘাত হানা সর্বশেষ প্রাণঘাতী বন্যা ছিল। গত আগস্টে হিমাচল প্রদেশে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জুলাইয়ে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তর ভারতে দুই সপ্তাহে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়।
সিকিম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বুধবারের বন্যার পর দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং রাজ্য কর্তৃপক্ষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের জন্য ২৬টি ত্রাণ শিবির স্থাপন করেছে।
উদ্ধারকর্মীরা বৃহস্পতিবারও ২২ জন সৈন্যসহ প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজছেন বলে জানিয়েছে সিকিম রাজ্য সরকার।
রাজ্যের শীর্ষ কর্মকর্তা বিনয় ভূষণ পাঠক জানিয়েছেন, ২৬ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৩ হাজার পর্যটক এবং ৭০০ ট্যাক্সি চালক বন্যাকবলিত এলাকায় আটকা পড়েছেন।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের সহায়তায় আমরা তাদের সরিয়ে নিচ্ছি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ লোনাক হ্রদের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ উষ্ণ জলবায়ু হিমবাহগুলোকে গলিয়ে ফেলছে। ফলে এটি ধারণকারী বাঁধের উপর চাপ সৃষ্টি করে। তবে বুধবার কী কারণে ভাঙনের সূত্রপাত হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিবেদনে ওই এলাকায় আকস্মিক, তীব্র বৃষ্টিপাত এবং মঙ্গলবার বিকালে নেপালের নিকটবর্তী এলাকায় ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্পকে কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যার পানিতে লাচান উপত্যকার ১১টি সেতু ভেসে গেছে, যার ফলে পাইপলাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং চারটি জেলায় ২৭০টিরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।
তিস্তা অববাহিকার ডিক্চু ও রংপোসহ বেশ কয়েকটি শহর প্লাবিত হয়েছে এবং চারটি জেলার স্কুল রোববার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা বিভাগ।
রাজ্যের রাজধানী সিকিমকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্তকারী একটি মহাসড়কের কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, বন্যায় বেশ কয়েকটি সেনা ছাউনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই) প্রতিবেশি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চার জন সৈন্যের লাশ পাওয়া গেছে। তবে তারা নিখোঁজ ২২ সৈন্যের মধ্যে ছিলেন নাকি আলাদাভাবে মারা গেছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
বুধবার নিখোঁজ হওয়া এক সৈন্যকে কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করেছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
সেনা বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী উত্তর সিকিমের চুংথাং, লাচুং এবং লাচেন এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের চিকিৎসা সহায়তা এবং ফোন সংযোগ স্থাপন করছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, বন্যার পরে রাজ্য কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবে সরকার।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২