April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, June 8th, 2023, 8:19 pm

ভারতে ‘ইসলামভীতি’ নিয়ে সিনেমা নির্মাণের হিড়িক

অনলাইন ডেস্ক :

ভারতে সাংস্কৃতিক অসহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় বিদ্বেষের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমেই। এই অসহিষ্ণুতা ছড়ানোর জন্য হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে ভারতের বিনোদনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম সিনেমাকে। প্রথম বিতর্ক আলোচিত-সমালোচিত ছবি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে। এরপর ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘৭২ হুর’ ও ‘আজমীর ৯২’। সবগুলো ছবিই একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে লক্ষ্য করে তৈরি করা। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এর ব্যাপক সাফল্যের পরে অন্য নির্মাতারাও উৎসাহিত হচ্ছেন এধরনের সিনেমা নির্মাণের। সিনেমার মাধ্যমে খুব সহজেই মানুষের মগজকে প্রভাবিত করা যায়। একথা যারা বিদ্বেষ ছড়াতে চায় তাদেরও জানা। ‘ফ্যাক্ট’ ও ‘ফিকশন’-এর সংমিশ্রণে তৈরি করা সিনেমাগুলোর ‘ফিকশন’টুকুও মানুষের মনে ঢুকে পড়ে সত্য হিসেবে। ছবিতে যা দেখায় তা বিশ্বাস করে সাধারণ মানুষ। ভয় ও ঘৃণা তৈরি হয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে। দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সমর্থকেরা সিনেমাগুলোর প্রচারণা চালাচ্ছেন, ভালো রিভিউ দিচ্ছেন। আর বাম, বিজেপিবিরোধী ও মধ্যপন্থী জনতা মনে করছেন সিনেমার মাধ্যমে সমাজে বিদ্বেষ তৈরির জন্য হিন্দুত্ববাদীরা উঠেপড়ে লেগেছেন।

ভারতের মুসলমানদের বৃহত্তম সামাজিক সংগঠন জামায়াতে উলেমায়ে হিন্দ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, সরকারের কাছে এসব সিনেমা নিষিদ্ধ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন প্রতিটি ছবি মুক্তির আগেই। সরকার নির্বিকার। প্রচারধর্মী মধ্যম মানের এই সিনেমাগুলো মুক্তির পরেই ‘হাইপ’ তৈরি করতে সফল হচ্ছে। বলিউডে আগেও এধরনের ছবি তৈরি হয়েছে। কাবুল এক্সপ্রেস (২০০৬), নিউ ইয়র্ক (২০০৯) এবং বেবি (২০১৫) সমালোচিত হয়েছে মুসলমানদের ‘স্টেরিওটাইপিকাল’ ভাবে দেখানোর কারণে। এই ছবিগুলোতে মুসলিম নারীদেরকে দেখানো হয়েছে নির্যাতিত, অসহায় কিংবা জোর পূর্বক বিয়ের ভিকটিম হিসেবে। মুসলিম নারীরা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, এমনটাই দেখানো হয়েছে সিনেমাগুলোতে। ‘বীর-জারা (২০০৪) এবং ‘ফানা (২০০৬) সিনেমা দুটি জনপ্রিয়তা পেলেও সমালোচিত হয়েছে মুসলিম নারীদের অবমাননাকর চিত্রায়নের জন্য। তাদেরকে দেখানো হয়েছে নিপীড়িত। ভারতীয় চলচ্চিত্রগুলি বছরের পর বছর ধরে মুসলিম চরিত্রগুলোকে নেতিবাচক ভাবে ব্যবহার করেছে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মকে অপমান করা হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে গবেষক মাইদুল ইসলামের গবেষণা, ‘ইমাজিনিং ইন্ডিয়ান মুসলিমস: লুকিং থ্রু দ্য লেন্স অব বলিউড’-এও একই কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প কখনোই মুসলিম চরিত্রগুলোকে ত্রিমাত্রিক ভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেনি। মোটাদাগে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ এর সফলতার পর এ ধরনের সিনেমা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে ভারতে। তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। এ ধরনের ছবিগুলো হিন্দুত্ববাদী সমর্থকদের বাহবা যেমন পাচ্ছে, তেমনি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলও এসব ছবির পৃষ্টপোষকতা করছে। বিজেপি-শাসিত অনেক রাজ্যই এসব ছবিকে করমুক্ত বলে ঘোষণা দিচ্ছে। যে কারণে দেখা যাচ্ছে, মাত্র কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব সিনেমা ভারতব্যাপী আয় করছে কয়েক’শ কোটি টাকা! এসব ছবির বক্স অফিস রিপোর্ট দেখলে কিছুটা আন্দাজ করা যাবে। মাত্র ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ বক্স অফিসে আয় করেছে ৩৪০ কোটি টাকা। একইভাবে ১৫-২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ এখন পর্যন্ত আয় করেছে ২৯০ কোটি টাকার মতো! যা রীতিমত বিস্ময়!

তারই সূত্র ধরে একটি বিশেষ ধর্মকে টার্গেট করে নির্মিত হয়েছে ‘৭২ হুর’ এবং ‘আজমীর ৯২’। দুটি ছবিই আসছে জুলাইয়ে মুক্তি পাবে। এসব ছবিকে অনেকেই ভারতের সম্প্রীতির জন্য ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন। বলছেন, সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিদ্বেষ তৈরি করা হচ্ছে, ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে সিনেমার মাধ্যমে। সিনেমার মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো নতুন কিছু নয়। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই প্রচারণা সমাজে বিদ্বেষ ও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন সিনে বিশ্লেষকরা।