May 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 5th, 2024, 8:03 pm

ভারতে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা রোধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ

এপি, নয়া দিল্লি :

সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামের একটি ভিডিওতে বিধস্ত অবস্থায় এক নারীকে কথা বলতে দেখা যায়। এতে দেখা যায়, তিনি কথা বলতে বলতে কেঁপে কেঁপে উঠছেন। তার মুখ ফুলে ও ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে। স্বামীর পাশে বসে তিনি ভয়ংকর সেই মুহূর্তের কথাগুলো বলছেন।

ভিডিওতে ইংরেজিতে ক্যাপশন দিয়ে তিনি স্প্যানিশ ভাষায় বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে, যা অন্য কারোর সঙ্গে যেন না ঘটে। সাতজন লোক আমাকে ধর্ষণ করেছে, মারধর ও লুটপাট করেছে।’

পরে অবশ্য ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ওই ভিডিওতে ভুক্তভোগী নারী জানান, শুক্রবার রাতে পূর্ব ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা জেলার একটি জঙ্গলে তাকে এবং তার ব্রাজিলিয়ান সঙ্গীর ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি বলেন, সাতজন পুরুষ তাদের গলায় ছুরি ধরে তাকে যৌন নির্যাতন করে।

একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দুই লাখেরও বেশি অনুসারীর জন্য তাদের ভ্রমণের ডকুমেন্টেশন করছিলেন তারা। হামলার শিকার হওয়ার পর এই দম্পতিকে একটি পুলিশ টহল ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের নারী চিকিৎসককে তিনি বলছিলেন, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

ঝাড়খণ্ড পুলিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে এবং সপ্তাহের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার পুলিশ জানিয়েছে, তারা আরও চারজন সন্দেহভাজনকে খুঁজছে।

নীতি অনুযায়ী যৌন নির্যাতনের শিকারদের পরিচয় প্রকাশ করেনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।

এই ঘটনায় ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। দেশটির বড় সমস্যাগুলোর একটি এটি। নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান যৌন সহিংসতা রোধে কয়েক দশক ধরে এ আন্দোলন দেশব্যাপী তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে পুলিশ ৩১ হাজার ৫১৬টি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

ভারতে ২০১৩ সালে ধর্ষণ আইন সংশোধন করা হয়। গোপনে অন্যদের নগ্ন অবস্থায় দেখাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিচারের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করা হয়।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, কঠোর আইন সত্ত্বেও সরকার এখনও নারীদের সুরক্ষা ও হামলাকারীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে ধর্ষণের মামলায় সাজার হার ৩০ শতাংশের নিচেই থাকছে।

বিদেশি হাই প্রোফাইল দর্শনার্থীদের ধর্ষণের ঘটনাগুলো এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ২০২২ সালে গোয়ায় এক ব্রিটিশ পর্যটক তার সঙ্গীর সামনে ধর্ষণের শিকার হন। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে নয়া দিল্লির একটি হোটেলে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নারী অভিযোগ করেন, তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

দুই দশক আগে ভয়াবহ ধর্মীয় দাঙ্গার সময় এক মুসলিম নারীকে ধর্ষণের দায়ে ১১ হিন্দু পুরুষের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড জানুয়ারিতে পুনর্বহাল করেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পরে তারা ২০২২ সালে মুক্তি পেয়েছিলেন এবং পরিবার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির একজন সংসদ সদস্য আসামিদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছিলেন।

গত বছর নারী কুস্তিগীররা কুস্তি ফেডারেশনের প্রধানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে বারবার নারীদের স্পর্শ করার অভিযোগ এনেছিলেন। কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভের পর মোদির দলের প্রভাবশালী আইনপ্রণেতা ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে আদালতে উত্ত্যক্ত, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়। সিং অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নারী অধিকারকর্মী ধাওয়ালে বলেন, হাই প্রোফাইল ধর্ষণের ঘটনাগুলো গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও ভারতে যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতাকে খাটো করে দেখার সংস্কৃতি এখনও রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ জানাতে প্রতিনিয়ত রাস্তায় নেমেছি, কখনও কখনও একটি মামলা দায়ের করার জন্য। এমনটা হওয়া উচিত নয়।’