অনলাইন ডেস্ক :
ভারতের সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বিবিসি ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে বৈদেশিক মুদ্রা লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) এই মামলা দায়ের করা হয়। ভারতে এই প্রথম বিবিসির বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হলো। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা দিল্লিতে বিবিসি অফিসে অভিযান চালান। ৬০ ঘণ্টা ধরে চলে সেই অভিযান। আচমকাই এমন অভিযান চালিয়েছিল তারা। এর আগে ভারতীয় কর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) দিল্লি ও মুম্বাই শাখার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে কর অনিয়মের সত্যতা পেয়েছিল। তিন দিন ধরে কর কর্মকর্তারা তল্লাশি চালিয়ে এই দাবি করেছিল। কর কর্মকর্তারা পরে বিবিসির সরাসরি নাম না করে বিবৃতি প্রকাশ করে। আয়কর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই ‘নিরীক্ষা’ চালানোর সময় ওই দুই শাখার ব্যাংক অ্যাকাউন্টসংক্রান্ত বিভিন্ন নথি জব্দ করা হয়েছিল। সেসব নথি পর্যালোচনার মাধ্যমেই এই ব্যাপারটি জানা গেছে। তখন আয়কর বিভাগ জানিয়েছিল, ‘একটি বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মিডিয়া কম্পানি’, যারা হিন্দি, ইংরেজি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় খবর প্রচার করে। তাদের দিল্লি এবং মুম্বাই অফিসে একটি ‘জরিপ’ চালানো হয়েছে।’ তারা জানান, সংস্থার প্রকাশিত আয় এবং মুনাফা ‘ভারতে অপারেশনের স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ তারা যা খুঁজে পেয়েছে তা ইঙ্গিত করছে যে নির্দিষ্ট কিছু রেমিট্যান্সের ওপর কর দেওয়া হয়নি। যা ভারতে আয় হিসেবে বিদেশি সংস্থাগুলো প্রকাশ করেনি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের পর্যালোচনা বলছে, আয়কর ও তথ্য স্থানান্তর উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের অনিয়ম ঘটেছে। বিবিসির ভারত শাখা কখনো নিজেদের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করেনি। তবে তাদের নথিপত্র ঘেঁটে আমরা এসব অনিয়মের বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছি।’ বিবিসি তখন বলেছিল, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব এবং আশা করি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিষয়গুলো সমাধান করা হবে।’ তারা তাদের কর্মীদের পাশে আছেন বলেও জানায়। এই বিষয়ে তারা সব রকমের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। কর কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে তারা সাড়া দেবে। বিবিসির নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে করা একটি তথ্যচিত্র নিয়ে ভারতে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল এবং তার মাঝেই এমন ঘটনা ঘটেছিল। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ পায়। এটি নিয়ে সমালোচনা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের সব সোশ্যাল প্ল্যাটফরম থেকে এই তথ্যচিত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ভারতে বিবিসির সম্প্রচারও বন্ধের আবেদন করে আদালতে জনস্বার্থে মামলাও করা হয়েছিল। তবে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এই তথ্যচিত্রটি নিয়ে বিতর্কের মাঝেই বিবিসির অফিসে এমন ঘটনা চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ‘ইন্ডিয়া দ্য মোদি কেয়েশ্চন’ শীর্ষক ওই বিতর্কিত তথ্যচিত্র ভারতে দেখায়নি বিবিসি। তবে ইউটিউবে ছাড়া হয়েছিল। ভারত সরকার সেটিও ‘ব্লক’ করে দিয়েছিল। আয়কর বিভাগের ‘সমীক্ষা’ শেষ হওয়ার পর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বিবিসি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিবিসি একটি বিশ্বস্ত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম। আমাদের সব সহকর্মী এবং সাংবাদিক, যারা ভয় না পেয়ে, পক্ষপাত ছাড়া নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের পাশে থাকব।’ এই বিবৃতিতে সমীক্ষা চলাকালীন কর্মীদের বারবার দীর্ঘ প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া, রাতের পর রাত জেগে কাটানোর অভিজ্ঞতার কথাও বলা হয়েছে।
সূত্র : এনডিটিভি
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু