November 22, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 19th, 2024, 7:45 pm

ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘নজিরবিহীন’ নজরদারি

অনলাইন ডেস্ক :

কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত এক নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের শিকার হওয়ার ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী লেখা হচ্ছে, তার ওপর কড়া নজরদারি চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তি চেয়ে কলকাতাসহ ভারতজুড়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ করছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী সব দল প্রতিবাদ করছে এই ঘটনার। রাতের বেলায় নারীর নিরাপত্তার দাবিতে বুধ আর বৃহস্পতিবারের মাঝরাতে লাখ লাখ নারী-পুরুষ কলকাতার রাস্তা দখল করে বিক্ষোভ করছেন।

এরপর নির্মম ওই ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসি চেয়ে শুক্রবার মিছিল করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার ওই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে মিছিল করেছে বিজেপি। মিছিল, পাল্টামিছিল, ধর্মঘট-একই সঙ্গে সব চলেছে শুক্রবার। শুধু মাঠে-ময়দানে নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে তুমুল আলোচনা আর বিক্ষোভ। কিন্তু তার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের নজরদারি নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

পুলিশের নজরদারি কিভাবে, কেন হচ্ছে

আরজি কর মেডিকেল কলেজের ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা নিয়ে যেসব পোস্ট পুলিশের কাছে আপত্তিকর মনে হচ্ছে, তাদের নোটিশ পাঠিয়ে পোস্ট মুছে দিতে বলা হচ্ছে। আবার পুলিশ সদর দপ্তরে ডাকও পড়ছে কারো কারো। পুলিশ যাদের ইতোমধ্যে ডেকে পাঠিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের একজন সংসদ সদস্য, একজন নামকরা চিকিৎসক এবং একজন সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। ভারতের স্থানীয় সংবাদপত্রে পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে লেখা হচ্ছে, এ রকম প্রায় ২০০ জন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কোনো একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপরে এ ধরনের পুলিশি নজরদারি এর আগে দেখা যায়নি।

তৃণমূল কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের নেতা ও সংসদ সদস্য সুখেন্দু শেখর রায় এ ঘটনা নিয়ে বরাবরই সরব ছিলেন। নামকরা শল্য চিকিৎসক কুনাল সরকার একটি ইউটিউব ভিডিও করেছিলেন ওই ধর্ষণ ও হত্যার বিষয় নিয়ে। এদের দুজনকে ডেকে পাঠিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বারবার নিজেরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে আহ্বান জানাচ্ছে, আরজি করের ঘটনা নিয়ে বহু গুজব ও ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। নাগরিকদের এ ধরনের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা বা পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।

একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও ভুয়া তথ্য না দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে ধর্ষণের শিকার ও খুন হওয়া চিকিৎসকের পরিবার-পরিজনও। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এভাবে পুলিশি নজরদারি যেমন আগে দেখা যায়নি, তেমনই একের পর এক অভাবনীয় প্রতিবাদ হচ্ছে আরজি করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ চলছে এখনো। নানা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীররা বিক্ষোভ মিছিলে নামছে কলকাতা ও মফস্বল শহরগুলোতে। সোমবারও শহরজুড়ে নানা বিক্ষোভ মিছিল, জমায়েত হবে বলে জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবাদ হচ্ছে রাজ্যের বাইরেও। সারা দেশে জুনিয়র ও রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। দিল্লিতে ধর্মঘট করা এইমসের রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের সংগঠন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সোমবার থেকে তারা রাজধানী দিল্লির নির্মাণ ভবন, যেখানে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দপ্তর, তার সামনে রাস্তায় বসে রোগী দেখবেন তারা।

সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ

আরজি কর মেডিকেল কলেজের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন। শীর্ষ আদালতের যে ‘কজ লিস্ট’ বা মামলার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে মঙ্গলবারের জন্য, তাতে লেখা হয়েছে, দেশের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার ‘সুয়ো মোটো’ মামলাটি তালিকাভুক্ত করেছে। মামলাটিকে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দেওয়ার কথাও লেখা হয়েছে।

এর আগে কলকাতা হাইকোর্টেও মামলা করা হয়েছিল। এদিকে কলকাতা পুলিশের তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট না হয়ে তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেন কলকাতা হাইকোর্ট। সিবিআই গত কয়েক দিনে আরজি কর মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, চিকিৎসকসহ সদ্য সাবেক প্রিন্সিপালকে জেরা করেছে। কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে তাদের তদন্ত করে পাওয়া সব নথি নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে সিবিআই।