May 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, February 8th, 2024, 9:35 pm

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর প্রস্তুতি

অনলাইন ডেস্ক :

মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলে দেশটির সঙ্গে সীমান্ত আছে ভারতের। এই পুরো অঞ্চলে কাঁটাতার বসাতে চাইছে দিল্লি। সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভারত-মিয়ানমারের ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে কাঁটাতার বসানো হবে। এখন এই সীমান্তের অধিকাংশ জায়গাতেই কাঁটাতার নেই। কিছুদিন আগে মনিপুরের মোরে সীমান্তে কাঁটাতার বসানো হয়েছে। অমিত শাহ জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশ ও চোরাচালন বন্ধ করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে কাঁটাতারের পাশাপাশি পেট্রোলিংয়ের জন্য রাস্তাও তৈরি করা হবে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সীমান্তের অধিকাংশ জায়গাতেই এই কাঁটাতার এবং পেট্রোলিং রোড দেখতে পাওয়া যায়। মিয়ানমার সীমান্তে এই রাস্তা এতদিন ছিল না।

কেন এই সিদ্ধান্ত
বস্তুত, ২০২৩ সালের মে মাসে মনিপুরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল লড়াই শুরু হয়। উপত্যকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতিদের সঙ্গে পাহাড়ে বসবাসকারী কুকিদের সংঘর্ষ চলছে। বহু প্রাণহানি হয়েছে এবং তা অব্যাহত। অভিযোগ, কুকিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে মিয়ানমার থেকে আসা যোদ্ধারা। যারা মিয়ানমারে সেনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। মনিপুরের বিজেপি সরকারের অভিযোগ, ২০২১ সালে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিপুল পরিমাণ বার্মিজ উদ্বাস্তু মনিপুরে এসে থাকতে শুরু করেছে। তারাই কুকিদের সঙ্গে মেইতিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অমিত শাহের ঘোষণায় নির্দিষ্ট করে এ বিষয়ে বিশেষ উল্লেখ না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মনিপুরের পরিস্থিতি দেখেই দ্রুত মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। ইতিমধ্যেই কোনো কোনো জায়গায় সে কাজ শুরুও হয়ে গেছে।

কাঁটাতার নিয়ে প্রশ্ন
মনিপুরে ক্ষমতায় আছে বিজেপি সরকার। অরুণাচল ও নাগাল্যান্ডে মিয়ানমারের সীমান্ত খুব বেশি নয়। বড় সীমান্ত আছে মিজোরামে। বস্তুত, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছিল, মিয়ানমারের উদ্বাস্তুদের ভারতে জায়গা দেওয়া হবে না। ঠিক যেভাবে এর আগে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের নিয়ে ভারত এই অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু মিজোরামের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা জানিয়েছিলেন, মিয়ানমারের চিন প্রভিন্স থেকে যে উদ্বাস্তুরা ভারতে এসে আশ্রয় চাইছেন, তারা চিন উপজাতির মানুষ। মিজোরামের জো, মনিপুরের কুকি ও মিয়ানমারের চিন উপজাতি একই জনজাতির অন্তর্ভুক্ত। ফলে মনিপুরের কুকি ও মিয়ানমারের চিন উপজাতির সঙ্গে মিজোরামের জো উপজাতির রক্তের সম্পর্ক। কেন্দ্রীয় সরকার যাই বলুক মিজোরাম মিয়ানমারের চিন উপজাতির উদ্বাস্তুদের জায়গা দেবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন জোরাম।

এই মুহূর্তে মিজোরামে প্রায় ১৭ হাজার মিয়ানমারের উদ্বাস্তু বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে বসবাস করছে। এদিকে মনিপুর সরকারের অভিযোগ, এই চিন উপজাতির যোদ্ধারাই একদিকে মিয়ানমারে সেনার বিরুদ্ধে লড়ছে অন্যদিকে মনিপুরের গৃহযুদ্ধে কুকিদের সাহায্য করছে। ২০২৩ সালে মিজোরামে নির্বাচন হয়েছে। সেখানে জোরামথাঙ্গা হারলেও ক্ষমতায় এসেছেন লালডুহোমা। একসময় কংগ্রেস ও জোরামথাঙ্গার দল এমএনএফ সদস্য হলেও পরবর্তীকালে লালডুমহা নিজের দল জেডএনপি গঠন করেন। তিনি নিজেকে সবচেয়ে বড় মিজো জাতীয়াতাবাদী বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। মিয়ানমারের চিন উপজাতির মানুষদের নিয়ে সাধারণ মিজো নাগরিকদের যে ভাবাবেগ লালডুহোমা সেখানে আঘাত করতে চাইবেন বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞেরা। ফলে কেন্দ্র চাইলেও মিয়ানমার-মিজোরাম সীমান্তে রাজ্য সরকার কাঁটাতার বানানো নিয়ে কী অবস্থান নেবে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য।

ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকেই মিজোরাম ও মিয়ানমারের জনজাতি নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। একসময় তারা গ্রেটার জো-কুকি-চিন হোমল্যান্ডের দাবি তুলেছিল। ফলে মিজোরামের বর্তমান সরকার মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতার বসানো নিয়ে আপত্তি তুলতেই পারে।’ উৎপলের বক্তব্য, কেন্দ্র চাইলে তারপরেও কাঁটাতার বসাতে পারে। কারণ সীমান্ত সুরক্ষা কেন্দ্রের বিষয়, রাজ্যের নয়। কিন্তু তা নিয়ে কোনো অশান্তি তৈরি হবে কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।