November 22, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 2nd, 2024, 3:45 pm

ভার্থখলা মসজিদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তোলপাড়

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :

সিলেট নগরীর ভার্থখলা জামে মসজিদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। আর এ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মসজিদের মোতাওয়াল্লী মিছবাহ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে। বিষয়টির সঠিক তদন্তসহ মোতাওয়াল্লীর অপসারণের দাবি তুলেছেন ভার্থখলা এলাকাবাসী ও পঞ্চায়েত সদস্যরা।

স্হানীয় সুত্রে জানা যায়,ভার্থখলা জামে মসজিদ আয়ের দিক থেকে নগরীর মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ মসজিদ ওয়াকফ এস্টেট এর সম্পত্তি এবং পঞ্চায়েত সদস্যদের প্রস্তাবে পাঁচ সদস্যের কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। ২০০৩ সালে ভার্থখলার বাসিন্দা মিছবাহ উদ্দিন আহমদকে মসজিদের মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব দেন এলাকাবাসী। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করছেন। অন্য সদস্যদের পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।’প্রতি বছর সাধারণ সভা করে বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়ার কথা। বিগত ২২ বছরে একবারও তিনি তা করেননি।

মসজিদ মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দানের টাকার হিসাব উপস্থাপনের পাশাপাশি ব্যাংকে জমা রাখার কথা। তিনি তা করছেন না। এমনকি, প্রায় সাত মাস অসুস্থ থাকাবস্থায় কমিটির অন্য সদস্যদের উপেক্ষা করে তিনি নিজের ছেলেকে দিয়ে মসজিদ পরিচালনা করিয়েছেন।’ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ঢাকাস্থ ওয়াকফ এস্টেট এর প্রশাসকসহ সিলেটের প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এর আগে, মোতাওয়াল্লী মিছবাহ উদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে কমিটির তিনজন সদস্য পদত্যাগ করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওয়াকফ প্রশাসন মোতাওয়াল্লীর কাছে কারণ দর্শানোর চিঠি দিলেও তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। সবকিছু উপেক্ষা করে তিনি এখনও মোতাওয়াল্লীর পদ আঁকড়ে রাখতে মরিয়া। গত ৭ মে মসজিদ কমিটির জীবিত তিন সদস্য আব্দুল আহাদ, আব্দুল কাহার চৌধুরী (মঈন) এবং শাহ মুজিবুর রহমান (জাহাঙ্গির) অব্যাহতিপত্র জমা দেন। মোতাওয়াল্লীর অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তারা ভার্থখলা জামে মসজিদ কমিটি থেকে অব্যাহতি নেন বলে স্হানীয় সুত্রে জানা গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ‘মিছবাহ উদ্দিন আহমদ মসজিদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিবছর মসজিদের দোকান কোঠার ভাড়া, দানবাক্সের আয়, প্রতি জুমআর দান, কোয়ার্টার ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতের আয়ের হিসাব না দিয়ে নিজের মতো করে তছরুপ করছেন। পঞ্চায়েতের কোনো মতামতকে তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না। মূলত- অর্থের লোভে তিনি এ পদ আঁকড়ে ধরে আছেন।’

সম্প্রতি ‘পঞ্চায়েত সদস্যরা মসজিদের দানবাক্স ও জুমআর দিনের দানের টাকা একত্রিত করে এক মাসে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা দেন। বছরে বিভিন্ন খাত থেকে অন্তত ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা আয় হয় বলে জানা গেছে। এর মধ্যে- ১২০টি দোকান থেকে মাসে জমিদারি ভাড়া প্রায় অর্ধ লক্ষ, পাবলিক টয়লেটের ভাড়া ৫ হাজার দুশ, মসজিদ কোয়ার্টার ভাড়া ১৪ হাজার, মাছ বাজার থেকে ২ হাজার, বাবনা পয়েন্টের চারটি দোকানের ভাড়া ২ হাজার, দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত কমপক্ষে ১২ হাজার, চার জুমআ’র ৩২ হাজার টাকা এবং নিলামসহ অন্যান্য বিভিন্ন খাত থেকে ৬ হাজার টাকাসহ মাসে সর্বনিম্ন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হয়।’

মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিনের বেতন, বিদ্যুৎ বিল ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাদ দিয়ে মাসে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। উদ্বৃত্ত টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার কথা থাকলেও মোতাওয়াল্লী নিজের পকেট ভারী করছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মসজিদ মার্কেটের দোকানের মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত লাখ লাখ টাকা তার পকেটে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে বছরে কয়েক লাখ টাকা তার পকেটে যাচ্ছে এবং তিনি ব্যক্তিস্বার্থে টাকা খরচ করে যাচ্ছেন।’

এ অবস্থায় গত ১৭ মে মসজিদের ২য় তলায় ভার্থখলা পঞ্চায়েতের প্রায় ৩০০ মুসল্লীর উপস্থিতি ও সম্মতিতে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে রেজুলেশনের মাধ্যমে আহমদুল জবির মামুনকে মোতাওয়াল্লী, হাজী মখলিছুর রহমানকে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি এবং এম সিরাজ উদ্দিনকে সেক্রেটারি করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি অনুমোদনের জন্য ওয়াকফ এস্টেট প্রশাসক বরাবরে পাঠানো হয়েছে।

ভার্থখলা স্বর্ণালী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম সাহেদ আলাপকালে বলেন,
মিছবাহ উদ্দিন মসজিদ পরিচালনা কমিটির অন্য সদস্যদের উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ একক ক্ষমতাবলে মসজিদের আয়ের টাকা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছেন। তিনি তার ক্ষমতা ধরে রাখতে নানা ফন্দি আঁটছেন। কিন্তু ভার্থখলা এলাকাবাসী মসজিদের স্বার্থে তার অপসারনসহ এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছে।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির নব নির্বাচিত সেক্রেটারি এম সিরাজ উদ্দিন বলেন, সিলেটের স্বনসধন্য মসজিদ ভার্থখলা। এ মসজিদের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দলীয়। এ মসজিদের মোতাওয়াল্লী মিছবাহ উদ্দিন আহমদের একক আধিপত্য, অনিয়ম, দূর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয় নিয়ে পুরো এলাকাবাসী আজ ঐক্যবদ্ব। ইতিমধ্যে এলাকাবাসী মসজিদের উন্নয়নের স্বার্থে নতুন কমিটি গঠন করেছে। মিছবাহ উদ্দিনকে অপসারণ ও নতুন কমিটি দ্রুত অনুমোদনের জন্য ওয়াকফ এস্টেটে প্রেরণা করেছেন। এলাকাবাসী মিছবাহ উদ্দিনের দায়িত্ব পালনকালে মসজিদের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টির সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।