রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাতিল হওয়া আসনগুলোতে ওয়েটিং লিস্ট থেকে আসন পূরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভর্তিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম ছিল কি না, তা তদন্তের নির্দেশ দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২১ মে) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামীম সরদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মঈনুল হাসান।
আর ১৬৯ শিক্ষার্থীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ভিকারুননিসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম।
রায়ের পর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, হাইকোর্ট ভিকারুন্নিসার ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তির বিষয়ে জারি করা রুল মঞ্জুর করেছেন। অর্থাৎ ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি করতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে যেসব গাফিলতি আছে, তা কাভার হবে। কিন্তু রায়ে যারা দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কোথাও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এসব শিক্ষার্থী লটারির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পান। কেউ বলতে পারবে না লটারিতে দুর্নীতি হয়েছে। আবার গার্ডিয়ানদের কোন জালিয়াতি বা গাফিলতি ছিল-এটাও কেউ বলতে পারবে না। গাফিলতি থাকলে মাউশির অথবা ভিকারুন্নিসা কর্তৃপক্ষের ছিল। যাদের দায় ছিল, তাদের কেউ ভিকটিম হলো না, ভিকটিম হলো ১৬৯ জন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। উন্নত কোন দেশ হলে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নষ্ট করার জন্য অন্তত এক মিলিয়ন করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যেত। যাইহোক আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যাব। আশা করি সেখানে ন্যায় বিচার পাব।
ভিকারুননিসায় ভর্তি নিয়ে বয়সের নিয়ম না মানার অভিযোগ এনে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি-ইচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি রিট করেন। সে রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) একটি স্মারক হাইকোর্টে উপস্থাপন করে।
যেখানে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা অনুসরণ করেনি উল্লেখ করে বলা হয় যে, ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালের আগে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার প্রক্রিয়া ছিল বিধিবহির্ভূত। এসব ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৬৯ জন। এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে শিগগিরই মাউশিকে জানাতে অনুরোধ করা হয়। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৬৯ জনের ভর্তি বাতিল করে। ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের পর অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে শূন্য আসনে ভর্তি নিতে গত ৬ মার্চ নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
তবে ওই আদেশের বিরুদ্ধে ভর্তি বাতিল হওয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আপিল বিভাগে আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল হাইকোর্টকে দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
সেইসঙ্গে এই সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল ও অপেক্ষমানদের ভর্তির ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ জারি করেন সর্বোচ্চ আদালত। আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী হাইকোর্টে রুল শুনানি হয়। শুনানি শেষে মঙ্গলবার হাইকোর্ট এই রায় দেন।
——ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম