May 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, February 9th, 2024, 8:41 pm

“ভুলটা ম্যাচ কমিশনারের”

অনলাইন ডেস্ক :

এক শটের টাইব্রেকারে সমতা থাকার পর রেফারি অঞ্জনা রাই নিয়ম অনুযায়ী টাইব্রেকার চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচ কমিশনার ডি সিলভা জয়াসুরিয়া ডিলান সিদ্ধান্ত দিয়ে বসেন কয়েন টসের, বাইলজে যে নিয়মই নেই! শ্রীলঙ্কান এই ম্যাচ রেফারির ভুলে রীতিমতো লঙ্কাকা- হয়ে গেল সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের বাংলাদেশ ও ভারতের ফাইনালে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার অচলাবস্থার অবসান হলো দুই দলকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার মধ্য দিয়ে। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত, অভাবনীয় এই ঘটনা নিয়ে ম্যাচ শেষে কথা বলতে এসে সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল বললেন, ভুলটা ম্যাচ কমিশনারের। “যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, একেবারেই দুর্ভাগ্যজনক। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অতীতে কখনই এরকম কোনো কিছু হয়নি।

ভুলটা হয়ে গেছে ম্যাচ কমিশনারের মাধ্যমে। সে ভুলটা করেছে। নিয়মকানুনটা সে পুরোপুরি না দেখে হয়তো সিদ্ধান্তটা দিয়েছে। আমি যতটুকু জানি, রেফারি খেলা চালিয়ে যেতে বলেছিল, সে (ম্যাচ কমিশনার) তখন বলেছিল রেগুলোশনে এটাই (কয়েন টস) আছে। এই ভুলটা সে করাতে এই সমস্যা হয়েছে।” “এএফসির সাথে কথা বললাম আমরা; ওরা আমাদের জানাল, এটাই নিয়ম (টাইব্রেকার চালিয়ে যাওয়া)। পরে ভারতকে এটা বলা হলে, তারা জানাল, তারা রাজি নই। এই পরিস্থিতি দাঁড়ালৃআমাদের কিছু করার নেই। আমরা সমঝোতার জন্য কয়েকটা প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। এক-ম্যাচটা আমরা পরিত্যক্ত করে দেই এবং আরেকটা ম্যাচ আয়োজন করব। দুই-টাইব্রেকার চালিয়ে নেওয়া এবং তিন-যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা।” মাঝের সময়ে ভারতের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতিসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানালেন হেলাল।

বাইলজে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার নিয়ম না থাকলেও সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি। “শেষ পর্যন্ত এই আলোচনায় অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত তারা রাজি হয়, যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিষয়ে। এই ট্রফিটা আপাতত আমরা ভারতকে দিয়ে দিয়েছি। আরেকটা ট্রফি তৈরি করে পরে বাংলাদেশকে দিয়ে দেব। যে খেলোয়াড়রা যে পুরস্কার পেয়েছেন, তাদেরও পরে আমরা সেগুলো দিয়ে দেব।” “(বাইলজে যুগ্ম চ্যাম্পিয়নের বিষয়টি না থাকলেও) যে পরিস্থিতি হয়েছে, ওই পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে একটা সিদ্ধান্ত দিতে হয়েছে। এ ছাড়া আমার সামনে আর কোনো উপায় ছিল না। এখানে তো আর কারো আপিল করার কিছু নেই। দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” সাফ প্রশ্নবিদ্ধ হলো কি-না, এমন প্রশ্নে নিজেদের দায় খুব একটা দেখছেন না সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক। হেলাল নিজেও ম্যাচ কমিশনার ছিলেন, ফলে টুর্নামেন্ট চালানোর ক্ষেত্রে ম্যাচ কমিশনারদের আরও সতর্ক হওয়ার বার্তাও দিলেন তিনি।

“প্রশ্নবিদ্ধৃএটা আপনারা বলতে পারেন। কিন্তু এটা সাফের কোনো ব্যাপার না। ম্যাচ কমিশনার স্বাধীনভাবে কাজ করে, তারা সাফের অংশ নয়। ম্যাচ কমিশনার যদি ভুল করে থাকে, রেফারির যদি ভুল হয়ৃরেফারিদের তো ম্যাচে অনেক ভুল হয়; এটা কি সাফের দায়িত্ব? এটা কি ফিফা দায়িত্ব নেবে?” “আমি তো বলেই দিলাম, ভুল তো ভুলই। ভবিষ্যতে এমন ভুল হবে, আমরা তেমনটা মনে করি না। যে রেগুলেশন, সেটা আমরা ম্যাচ কমিশনারকে আগেই পাঠিয়ে দেই। এখন তাদেরকে হার্ড কপি রাখতেও বলা হবে। মুখস্থ বিদ্যা নয়, যখনই কোনো সমস্যা হবে, তখন তারা যেন হার্ড কপি দেখে নিতে পারে।” “তাদের সবাইকে আমরা রেগুলেশন পাঠিয়েছি। দেখুন, আমি ওদেরকে বলেছি, আমি যখন ম্যাচ কমিশনার ছিলাম, হার্ড কপি নিতাম। কেউ একটা প্রশ্ন করলে আমি এমনিতে উত্তর দিতাম না, হার্ড কপি দেখে উত্তরটা দিতাম। কেননা, আমারও ভুল হতে পারে।”

বিতর্ক দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ হলেও অসন্তুষ্ট নন হেলাল। শেষ পর্যন্ত সমস্যার মীমাংসা হওয়ার মধ্যেই যেন স্বস্তি খুঁজে নিলেন তিনি। “সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির বিষয় নেই।আপনারাও দেখেছেন, এতক্ষণ খেলোয়াড়, মন্ত্রী, কর্মকর্তারা বসে আছেন। সবাই বসে ছিল। আমরা কী করব? আমাদের হাতে (এটা ছাড়া) বিকল্প ছিল না। আরেকটা ম্যাচ খেলাতে গেলেৃভারত বলে আমরা চলে যাচ্ছি। সব সমস্যা চিন্তা করতে হবে। সবকিছু চিন্তা করেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” ফাইনালে দুই দলের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়। এরপর পাঁচ শটের টাইব্রেকারে ৫-৫ সমতা। এক শটের টাইব্রেকারেও দুই দল ছয় বার করে পায় জালের দেখা। এরপর রেফারিকে ডেকে নেন ম্যাচ কমিশনার। করা হয় টস। সেখানে ভাগ্যকে পাশে পেয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে ভারত। তখন ম্যাচ কমিশনারকে ঘিরে আপত্তি জানাতে শুরু করে বাংলাদেশ।

বাইলজে ফাইনালে টসের সিদ্ধান্ত না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয় স্বাগতিকদের পক্ষ থেকে। ম্যাচ কমিশনার নিজের ‘ভুল’ বুঝতে পেরে টাইব্রেকার চালিয়ে যাওয়ার জন্য তখন ভারতকে রাজি করাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভারত তখন তারা বেঁকে বসে। খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে চলে যায় ভারত দল। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা নিয়ে শীতের মধ্যেই মাঠে বসে থাকে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের নাম ঘোষণা করা হয়। দুই অধিনায়কের হাতে তুলে দেওয়া হয় ট্রফি।