অনলাইন ডেস্ক :
স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্কে ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নিহতের সংখ্যা ১৬০০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, দুর্গতরা আশ্রয়, পানি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎবিহীন থাকায় অনেক জীবিতও প্রাণ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দ্বিতীয় আরেকটি বিপর্যয়ের বিপদ ঘনিয়ে আসছে জানিয়ে তাতে প্রথম ভূমিকম্পের চেয়েও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা। গত সোমবার ভোররাতের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা পার হয়ে গেছে, যাকে প্রাণ বাঁচানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে বিবেচনা করেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে তুরস্কে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১২৮৭৩ জনে দাঁড়ায়। সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৩০০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে দেশটির সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকার উদ্ধারকারী পরিষেবা হোয়াইট হেলমেট জানিয়েছে, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। ধ্বংসাবশেষ ও আবর্জনার নিচে আটকা পড়া জীবিতদের উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। হিমাঙ্কের নিচে বা কাছাকাছি তাপমাত্রা উদ্ধারকাজে বিঘœ ঘটিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই তীব্র ঠা-ার মধ্যেই উদ্ধারকারীরা কঠিন পরিশ্রম করে চলেছেন, কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের আশা ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ভূমিকম্পের পর জরুরি পরিষেবাগুলো সাড়া দিতে অনেক দেরি করেছে, এমন অভিযোগকে ঘিরে তুরস্কে অসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছে। কিছু এলাকায় লোকজন দুই দিন অপেক্ষা করার পরও জরুরি পরিষেবার দেখা পায়নি। তবে ভূমিকম্পের পর গতকাল বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনে এসে উদ্ধারকাজ জোরদার হলেও ইতোমধ্যে পরিস্থিতি অনেক নাজুক হয়ে পড়েছে। তুরস্কের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত গাজিয়ানতেপ শহরে ত্রাণ কাজে নিয়োজিত ইসলামিক রিলিফ দলের কর্মী সালাহ আবৌগ্লাসেম বলেছেন, “সময়ের সঙ্গে পাল্লায় আমরা সত্যিই হেরে যাচ্ছি।” বুধবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান সরকার কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু বিরোধীদল তার এ দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। আর তুরস্কের প্রতিবেশী সিরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে আগে থেকেই অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছিল। এর মধ্যে ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আর অপর অংশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধারকাজে সমন্বয়েও সমস্যা হচ্ছে। উভয় দেশেই বেঁচে যাওয়া লোকজন খাবার ও আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করতে বাধ্য হচ্ছেন, অপরদিকে ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়া স্বজনদের আর্তি অসহায়ভাবে শুনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা আর কিছুকিছু ক্ষেত্রে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আর্তি বন্ধ হয়ে যেতেও দেখছেন। এভাবে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২