জেলা প্রতিনিধি:
কেউ গৃহকর্মী, কেউ পোশাক কর্মী, রিকশা-ভ্যানচালকও আছেন, আবার কেউ গৃহিণী। সবাই বস্তির বাসিন্দা। নয় মাস আগে চট্টগ্রামে করোনার ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু হলেও তারা নেননি। নিবন্ধন নিয়ে উটকো ঝামেলার শঙ্কায় ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী ছিলেন না তারা। আবার ভ্যাকসিন নিতে ভয়ও ছিল। তবে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের উদ্যোগে সেই ভয় এখন অনেকটাই কেটে গেছে। নারীপুরুষ নির্বিশেষে নিচ্ছেন করোনার ভ্যাকসিন। আগ্রহ-উচ্ছ্বাসের কমতি নেই তাদের মধ্যে। গতকাল রোববার থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে বস্তিবাসীদের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়। প্রথম দিনে নগরীর খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় ছিন্নমূল বস্তিতে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুরু থেকেই ভ্যাকসিনের জন্য আগ্রহী বস্তিবাসীদের ভিড় লেগেই ছিল। দুপুর ২টা থেকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়। নগরীর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমবাগান এলাকায় রেললাইনের পাশে চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদের কার্যালয়ে স্থাপিত একটি বুথে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছিল। আশপাশের কলোনি থেকে কয়েক’শ বাসিন্দা ভ্যাকসিন নিতে যান, যাদের অধিকাংশই নারী। ছিন্নমূল পরিষদের স্বেচ্ছাসেবীরা সুশৃঙ্খলভাবে তাদের সারিবদ্ধ করে ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে দেখা গেছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আমবাগান বস্তির উত্তর কলোনির বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমি বাসায় কাজ করি। মালিকের পরিবার ভ্যাকসিন নিয়েছে। আমাকেও বারবার বলেছে ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে। কিন্তু আমার মধ্যে ভয় ছিল। কি থেকে কি হয়। আমার ভাই ভ্যাকসিন দিয়েছে। দেখেছি, তার কোনো সমস্যা হয়নি। শুধু রাতে জ¦র এসেছিল। এরপর আমিও ভ্যাকসিন দেব ঠিক করি। এখানে খুব সুন্দরভাবে ভ্যাকসিন দিয়েছি। এখন ভালো লাগছে। মনে সাহস পাচ্ছি।’ নিবন্ধন করতে না জানায় ভ্যাকসিন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পোশাক কর্মী আমেনা বেগম। তবে গতকাল রোববার ছিন্নমূল পরিষদের কার্যালয়ে নিবন্ধন ছাড়াই ভ্যাকসিন নিয়েছেন তিনি। আমেনা বলেন, ‘চাকরি করে সময় পাই না। রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করতে হয় জানি না। ভেবেছিলাম ভ্যাকসিন নেব না। গরীব মানুষ, করোনা হলে আর কী করব। কিন্তু এত সুন্দরভাবে কোনো ঝামেলা ছাড়া ভ্যাকসিন দিতে পারব সেটা ভাবিনি।’ নিবন্ধন করেও ক্ষুদেবার্তা না পাওয়ায় ভ্যাকসিন নিতে পারছিলেন না রিকশা চালক মিন্টু মিয়া। ভ্যাকসিন দিচ্ছে জানতে পেরে তিনি ছিন্নমূল পরিষদের কার্যালয়ে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে ভ্যাকসিন দিয়েছে। খুব ভালো লাগছে।’ দেড় মাস আগে সন্তান জন্ম দেওয়া শাহেদা ইসলাম খুবই শঙ্কায় ছিলেন ভ্যাকসিন নিতে পারবেন কি না। কখনও স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে যাচ্ছিলেন, আবার স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করছিলেন তাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য। কর্মীরা সবকিছু শুনে তাকেও ভ্যাকসিন প্রথম ডোজ দেন। ৬০ বছর বয়সী নুরজাহান বেগম ভ্যাকসিন নিয়েছেন, কিন্তু ব্যথা পাননি। এ কেমন ‘ইনজেকশন’Ñএমন প্রশ্ন তার। নুরজাহান সাংবাদিকদের কাছে এসে বলেন, ‘বেডি (মহিলা) একটা সূঁই ঢুকাইল দেখলাম। একটুও খবর হয়নি। টিকা দিছে তো আমারে ?’ অ্যাস্ট্রজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে বস্তিবাসীদের। তবে ইতোমধ্যে প্রথম ডোজ গ্রহণকারী বস্তির কেউ কেউও ভ্যাকসিন নিতে সেখানে যান। সেজন্য টিকাদান কর্মীরা টিকা দেওয়ার আগে আগে নিয়েছেন কি না সেটি বারবার জিজ্ঞেস করছেন। তত্ত্বাবধানে থাকা চট্টগ্রামের ডেপুটি জেলা সিভিল সার্জন আসিফ খান বলেন, ‘প্রথমদিনে আমরা ৫০০ জনকে টিকা দেওয়ার টার্গেট নিয়েছি। তবে আমাদের কাছে আরও ১০০ বেশি মজুত আছে। বস্তিবাসীরা স্বেচ্ছায় টিকা নিতে আসছেন। এটা খুবই ভালো হচ্ছে আমাদের জন্য। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছিন্নমূল পরিষদের লোকজন বস্তিবাসীদের টিকা নেওয়ার জন্য সংগঠিত করেছেন।’
মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার আমবাগান বস্তিতে একইস্থানে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বস্তিতেও একই প্রক্রিয়া ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি সিভিল সার্জন আসিফ খান। স্থানীয় ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সার মানিক বলেন, ‘আমবাগান বস্তিতে প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দা আছেন। তাদের অধিকাংশই টিকা পাননি। গণটিকা কর্মসূচির সময় আমরা বস্তিবাসীদের টিকা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওঁরা অনেকেই তখন আসেননি। আমরা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে বিষয়টি জানালে ওঁরা আবার টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। আমরা বস্তিবাসীকে টিকা নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছি।’ এদিকে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের উদ্যোগে আজ সোমবার তৃতীয় লিঙ্গের ৫০০ জনকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি