November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, April 2nd, 2024, 3:08 pm

মনিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের ব্যতিক্রমী উৎসব ‘থাবল চুম্বা’ অনুষ্ঠিত

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

‘থাবল চুম্বা’ উৎসব। মনিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রিতিনীতি অনুযায়ী অবিবাহিত যুবক-যুবতিদের ভাব বিনিময় ও জীবন সঙ্গী খোঁজার ব্যতিক্রমী আয়োজন। ওই অনুষ্ঠানে যুবক-যুবতিরা একে অপরের হাতে হাত রেখে দল বেঁধে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নৃত্য করে বিশাল আয়তনের উম্মুক্ত মঞ্চে। তারা বিশেষ ধর্মীয়গানের সুরে নৃত্যের তালে খোঁজতে থাকে জীবনসঙ্গীকে। যুবক-যুবতীর এমন সুনিপুন নৃত্য মনমুগ্ধ করে তোলে দর্শক সারিতে থাকা নানা বয়সী মানুষকে। আর বয়স্কজনরা ছুটেন স্মৃতি রোমন্থনে।

নিজ এলাকা ব্যতীত দেশের বিভিন্নস্থান থেকে অধিকাংশ মনিপুরী সম্প্রদায়ের যুবকরা ওখানে আসেন পছন্দের জীবন সঙ্গীকে বেঁচে নিতে। একে অপরের হাতধরে নৃত্যের ফাঁকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তাদের কথোপকথন ও ভাব বিনিময়।

প্রতিবছরই ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মনিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের লোকজন। ধর্মীয় রিতিনীতিতে বর্ণিল আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী ‘থাবল চুম্বা’ উৎসব। ওই অনুষ্ঠানে খোলা আকাশের নীচে দলবেঁধে অবিবাহিত ছেলে মেয়েরা চালায় চোখ ধাঁধানো উন্মাতাল নৃত্য। পুরো আয়োজনে চলে বিশেষ গান।

মনোমুগ্ধকর ব্যতিক্রমী এই উৎসবটি মুণিপুরীদের ধর্মীয় রীতিনীতির ঐতিহ্য। গান ও নৃত্য উৎসর্গ করা হয় ঈশ^রের সন্তুষ্টির জন্য। বিশেষ ওই গান ও নৃত্যে প্রার্থনা করা হয় কল্যাণের। বিশাল এলাকা জুড়ে চোখ ধাঁধানো গোলাকৃতির খোলা প্যান্ডেল। প্যান্ডেল জুড়ে সামিয়ানার মতো টানানো রংবেরংয়ের মরিচ বাতি। বর্ণিল সাজের ওই পরিপাটি আলো আধারের প্যান্ডেলটি তৈরী অন্যরকম মাধুর্যময়ী শৈল্পীকথায়। দু’টি প্রবেশ পথের একটি ছেলেদের। আর অন্যটি মেয়েদের। দর্শকদের জন্যও আছে নির্দিষ্ট সীমানা। প্যান্ডেলের মধ্যখানের গোল বৃত্তে বসা কয়েকজন শিল্পী ও তার বাদক দল। ওই শিল্পীরা থাবল চুম্বা গানের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত।

২৯ মার্চ রাত ১০ টার দিকে শুরু হয় ওই বিশেষ গান। দূর থেকে কানে ভাসে মাদকীয় সুরের গান ও বাদ্যযন্ত্রের সুর। ইশ^রের সন্তুুষ্টি পেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিভাবকরা ছেলে মেয়েকে নিয়ে আসেন ‘থাবল চুম্বা’ উৎসবের মিলন মেলায়। সেই সাথে বিভিন্ন স্থান থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসেন অনেক দর্শনার্থীরা। ওই গান শোনে আবেগে আহ্লাদে মনের টানে মাঠে অনুষ্ঠানস্থলে ভীড় জমান মণীপুরী যুবক-যুবতি,কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সের লোকজন। কিশোর-কিশোরী আর যুবক-যুবতিরা দলে দলে প্রবেশ করে বিশেষ ওই প্যান্ডেলে।

চলে উচ্চ সুর আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নিজস্ব ভাষায় নানা রোমান্টিক ও আবেগময়ীতার গান। বাদ্যযন্ত্রের তালে নৃত্য চলে উম্মুক্ত মঞ্চে। নিজস্ব রীতিনীতি মেনে কয়েকটি পর্বে অনুষ্ঠান চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের উম্মুক্ত মাঠে মঞ্চকরে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও আয়োজন করা হয় ‘থাবল চুম্বা’ অনুষ্ঠান। পূর্ণিমার চাঁদের সাথে মিল রেখে দোলপূর্ণিমার রাতে ‘থাবল চুম্বা’ নামের মিলন মেলায় প্রায় তিন শতাধিক যুবক-যুবতিরা এক সাথে নৃত্য করে।

সনাতন হামোম, ধর্মীয় গুরু ও গ্রাম প্রধান, কোনাগাঁও ও হেমন্ত কুমার সিংহ সাধারণ সম্পাদক ১৪ গ্রাম সমাজসেবা সমিতি জানান কমলগঞ্জ উপজেলার ১৪টি গ্রামের মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের লোকজনের উদ্যোগে প্রতিবছরের ন্যায় এবছর বর্ষবরণ ও ‘থাবল চুম্বা’ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

এখানে সিলেট ও ভারতের মণিপুরসহ দেশের নানা প্রান্তে থাকা মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজন এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। ওই অনুষ্ঠান একদিনের জন্য হলেও ব্যতীক্রমী ধর্মীয় উৎসবের আমেজ চলে ৫দিন ব্যাপী। একে অপরের বাড়িতে নিমন্ত্রণে যান আর সেই সাথে চলে হোলি খেলা। ‘যুবক-যুবতিরা বছরে একবার তাদের চিরাচারিত কাঙ্খিত ধর্মিয় উৎসবে যোগ দিতে পেরে উৎফুল্ল এমনটিই জানান অংশগ্রহণকারী, অভিভাবক ও দর্শনার্থীরা।