জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আলীনগর ও ধলিয়া গ্রামের মধ্যবর্তী বেলরতল এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের মেরামত কাজে এলাকাবাসীর সাথে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে যোগ দিয়েছে স্থানীয় লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরআগে ওই কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
আর এ কাজে স্থানীয় সমাজসেবক ডাঃ মনিরুল ইসলাম সোহাগ ১ লাখ টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী কমিউনিটি নেতা লিটন তালুকদার ৫০ হাজার টাকা, সৌদিআরব প্রবাসী আবু সুফিয়ান ৫০ হাজার টাকাসহ আরো অনেক প্রবাসী ও স্থানীয় লোকজন আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। জানা গেছে, গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানির কারণে মনু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
টিলাগাঁও ইউনিয়নের হাজীপুর, মিয়ারপাড়া ও চক সালন গ্রামে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গেলে টিলাগাঁও ইউনিয়নের প্রায় ৩০টিরও বেশি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যায়। একইসাথে পৃথিমপাশা ইউনিয়নে মনু নদীর তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ বেলরতল ও রাজাপুর কলিরকোনা বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক গত মঙ্গলবার রাত দেড়টায় স্থানীয় এলাকার যুবক ইয়াসিন আলী, ফয়জুল হকসহ কয়েকজন ব্যক্তি দ্রুত বাঁধে এসে বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধটির সুড়ঙ্গ বন্ধ করার চেষ্টা করেন।
এরপর গত শনিবার সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাছ খাঁন, উপজেলা সিপিবি’র সভাপতি ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কমরেড মোঃ আব্দুল লতিফসহ এলাকার গন্যমান্য লোকজন জরুরী বৈঠক করে রাজাপুর কলিরকোনা এলাকা ও বেলরতল বাঁধ মেরামত করার সিদ্ধান্ত নেন।
কাজের সার্বিক সহযোগিতা ও তদারকি করছেন সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাছ খাঁন, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কমরেড মোঃ আব্দুল লতিফ, বাংলাদেশ জাসদ কুলাউড়ার সেক্রেটারী আব্দুল গাফফার কায়ছুল, রবিরবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু মোঃ নাসির উদ্দিন, ইউপি সদস্য কবির আহমদ, সেলিম আহমদ চৌধুরী, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আব্বাছ আলী, লন্ডন প্রবাসী শামীম আহমদ, সাংবাদিক আব্দুল মুমিত, হাসান আল রাজু, সমাজসেবক ফয়জুল হক, জিয়াউর রহমান ফরিদ, গোলাম রাব্বানী, জুবের আহমদ, তারেক আহমদ, উম্মর আলী, আকুল মিয়া, আনসার মিয়া, আব্দুল কাদির, জুম্মা আহমদসহ এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক লোক। স্থানীয় লোকজন জানান, এই এলাকায় প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস।
ইউনিয়নে প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষের বসবাস। যদি এই বেলরতল বাঁধটিতে মনু নদীর স্রোতে ভাঙ্গন দেখা দিত তাহলে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হত। এতে দুর্ভোগে পড়তেন উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এরআগে বিগত ২০০৪ সালে বেলরতল এলাকায় বাঁধে ভাঙন দিলে স্থানীয় মানুষের ঘরবাড়ি, গবাদি পশু, কৃষি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন কৃষকরা। এইসব মানুষদের দুর্ভোগ থেকে বাঁচানোর জন্য এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধকে বালুর বস্তা দিয়ে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ বেলরতল বাঁধ সংস্কারের জন্য স্বেচ্ছায় স্থানীয় লোকজন মনু নদীর চর থেকে বালু বস্তায় ভরাট করছেন এবং স্থানীয় কিছু যুবক ট্র্যাক্টর দিয়ে সেই বস্তাগুলো বেলরতল এলাকায় বাঁধে নিয়ে দিচ্ছেন আর ওই বাঁধ এলাকায় সংস্কার কাজ করছেন আরো ২০-২৫ জন লোক। বিশেষ করে স্থানীয় এলাকাবাসী, স্টুডেন্ট সোসাইটি রবিরবাজার, লংলা শতাব্দী রেলওয়ে মুক্ত স্কাউট গ্রুপ, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি সবাই একত্রিত হয়ে বাঁধের সংস্কার কাজ করছেন। এদিকে ২৬ আগস্ট সোমবার সকাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে এগিয়ে এসেছেন লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্র্থীবৃন্দ।
স্বেচ্ছাশ্রমে কাজে অংশ নেন লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আতাউর রহমান, কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ নজমুল হোসেন, মাজহারুল ইসলাম, আব্দুল মালিক, প্রভাষক গোলাপ মিয়া, সৈয়দ আতিকুজ্জামান, প্রদর্শক সমরেশ দাস, কম্পিউটার শিক্ষক তোফায়েল বেগ, শিক্ষার্থী জুয়েল আহমদ, আব্দুস সামাদ, রাফি, তারেক আহমদ, সোনিয়া বেগম, মাইশা আক্তার, ফারহানা বেগম, অমিসহ কলেজের আরো ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী। এসময় শিক্ষার্থীরা জানান, জনস্বার্থে মনু নদীর বাঁধ মেরামত কাজ করার জন্য কলেজের স্যারদের সাথে এসেছি। স্থানীয় লোকদের সাথে সম্মিলিতভাবে এই সেবামূলক কাজটি করতে পেরে আমাদের খুবই ভালো লেগেছে।
উপজেলা সিপিবি’র সভাপতি ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কমরেড মোঃ আব্দুল লতিফ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেলরতল বাঁধটি রক্ষার জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরের লোকদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ২২ আগষ্ট রাতভর স্থানীয় লোকজন বাঁধ রক্ষায় নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেন। এরফলে ওই স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ না করার কারণে ভয়াবহ বন্যা থেকে রেহাই পায় এলাকার লোকজন।
এর আগে ২০০৪ সালে বেলরতল এলাকায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙ্গলে পৃথিমপাশাসহ উপজেলার আরো কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে মনু নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষার জন্য অনেক আন্দোলন কর্মসূচি করেছি। এরপর ২০১৮ সালে মনু নদী রক্ষায় সরকার এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়। কাজ চলমান থাকলেও ওই প্রকল্পে পৃথিমপাশা এলাকায় নদী প্রতিরক্ষা বাঁধে ব্লকের কাজ যদি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে শেষ করতো তাহলে বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হতোনা। মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আতাউর রহমান বলেন, যেকোন দুর্যোগের সময় মানুষের সেবা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। কুলাউড়ার মানুষের দুঃখের নাম হলো খরস্রোতা মনু নদী। এই নদী যখন ভাঙ্গন দেয় তখন কুলাউড়ার মানুষের অনেক ক্ষতি হয় এবং চরম দুর্ভোগে পড়েন এতদ অঞ্চলের লোকজন। স্থানীয় লোকদের এই মহৎ উদ্যোগ দেখে ঝুঁকিপূর্ণ বেলরতল বাঁধ মেরামত কাজে অংশ নিতে আমার কলেজের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা মেরামত কাজে অংশ নিয়েছি। এই কাজ করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। মনু নদীর বেলরতলসহ ঝুঁকিপূর্ণ সবক’টি বাঁধ অতি দ্রুত স্থায়ীভাবে সম্পন্ন করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি