জেলা, প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:
কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের মনু নদীর বেড়িবাঁধের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি, ধীরগতির প্রতিবাদ ও কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। দ্রুত কাজ শুরু না করলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিবেন বলে জানান। তাই অনিতিবিলম্বে কাজ শেষ না করলে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচীর হুঁশিয়ারী দেন।
২০ মার্চ বুধবার দুপুরে উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের মনু নদীর তীরবর্তী রাজাপুর গ্রামে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন স্থানীয় সচেতন এলাকাবাসী। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কবির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্বাছ আলীর পরিচালনায় বক্তব্য দেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা সিপিবির সভাপতি কমরেড আব্দুল লতিফ, উপজেলা ক্ষেত-মজুর সমিতির নেতা প্রভাষক সৈয়দ মোশারফ আলী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আকদ্দস আলী, উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ আলম চৌধুরী, প্রভাষক তোফায়েল তালুকদার, পৃথিমপাশা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য সচিব আব্দুল মুনিম সোহেল, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম, সমাজসেবক হাবিবুর রহমান, মাসুক আহমদ, সুমন হোসেন সাব্বির, হবিব মিয়া, রিন্টু দে প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মনু নদীর কুলাউড়া অংশের পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ধলিয়ার বেলেরতল, কলিরকোনা, রাজাপুর এলাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে শুরু হওয়া বেড়িবাঁধে মাটি ও ব্লকের কাজ পায় মেসার্স আরাধনা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স জামান কনস্ট্রাকশন (জেভি)। ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর কার্যাদেশ দিয়ে ২৮ তারিখে কাজ শুরু করে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও অদ্যাবদি ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কাজের শুরু থেকেই কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের তিন বছর অতিবাহিত হলেও কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। সরকারের এই বৃহৎ প্রকল্পে উপজেলার অন্যান্য স্থানে কাজ ৬০-৭০ শতাংশ হলেও পৃথিমপাশার এই তিনটি স্থানে কাজ স্থগিত রয়েছে। কাজের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বার বার তাগিদ দিলেও তারা কোন কর্ণপাত করেনি। একের পর এক অজুহাত দিয়ে কাজের দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
বক্তারা আরো বলেন, ২০১৮ সালে মনু নদীর ভয়াবহ বন্যায় কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর, হাজীপুর, পৃথিমপাশা ও টিলাগাঁও ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক গ্রামের প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষের ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে প্রতিরক্ষা বাঁধ, নদী আর গ্রাম কোনটির কোনো অস্তিত্ব থাকে না। সেই সঙ্গে এ ইউনিয়নগুলোর লোকজন প্রতিটি মুহুর্তে বন্যা আতঙ্কে তাদের দিন কাটে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ বাস্তবায়ন না করা যায় তাহলে নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছেন চার ইউনিয়নের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলাকে বন্যা ও নদী ভাঙন মুক্ত রাখতে ২০২০ সালের ২১ জুন ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার এই বৃহৎ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে দরপত্র আহবান করা হয় কাজের। এ প্রকল্পে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর, হাজীপুর, পৃথিমপাশা ও টিলাগাঁও ইউনিয়নে মোট ২৮টি প্যাকেজের কাজ রয়েছে। যার মোট চুক্তিমূল্য ৩০৭ কোটি টাকা। ২৮টি প্যাকেজের মধ্যে স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজের ২০টি, চর অপসারণ কাজের ৪টি এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজের ৪টি প্যাকেজের কাজ রয়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সাত্তার বলেন, পৃথিমপাশার আলীনগর এলাকায় জিওব্যাগ তৈরির কাজ শেষ করেছি। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পেলে কিভাবে ব্লক তৈরির কাজ করবো। বিল না পাওয়ায় কাজে ধীরগতি হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল বলেন, সরকারের এই বৃহৎ প্রকল্পের ৭২টি প্যাকেজের মধ্যে অনেক স্থানে কাজ শেষ পর্যায়ে। পৃথিমপাশা ইউনিয়নের তিনটি স্থানে কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৫% কাজ সমাপ্ত হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। রমজানের পরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে রাজি হয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি