অনলাইন ডেস্ক :
সর্বশেষ বাংলাদেশ গেমসে সোনা জিতেছেন, তার আগে বাংলাদেশ অ্যামেচার ওপেনের চ্যাম্পিয়ন তিনি। পেশাদার গলফে পা রেখে সম্রাট শিকদার এ মাসেই তাঁর প্রথম শিরোপা জিততে চলেছিলেন। কুর্মিটোলায় প্যারাগন ওপেনে তিন রাউন্ড পর্যন্ত ছিলেন শীর্ষে। ভালোভাবেই এগিয়ে ছিলেন তিনি দ্বিতীয় স্থানে থাকা জামাল হোসেন বা অন্য জ্যেষ্ঠ গলফারের চেয়ে, ব্যবধানটা ৪ আন্ডার। সম্রাট প্রবল আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে ট্রফিটা তিনিই জিতবেন। কিন্তু শেষ রাউন্ডে অভিজ্ঞ জামাল হোসেন দেখালেন চমক। চার স্ট্রোকের ব্যবধান ঘুচিয়ে ফেললেন তিনি ৫ আন্ডার পারের অসাধারণ এক রাউন্ড খেলে।
কিন্তু সম্রাট পড়ে রইলেন আগের জায়গাতেই। এক স্ট্রোকের ব্যবধানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন জামাল। অভিজ্ঞতার জয় হলো-সাধারণের ধারণা এমন। কিন্তু এই হিসাবটা আবার মেলে না সিদ্দিকুর রহমানের বেলায়। পেশাদার গলফে তাবৎ অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রায় সময়ই তাঁকে লক্ষ্যচ্যুত হতে দেখা যায় শেষ মুহূর্তে এসে। নইলে সিদ্দিকের নামের পাশে ১৩ বছরে মাত্র দুটি নয়, আরো বেশি এশিয়ান ট্যুর শিরোপা থাকার কথা। সর্বশেষ ঘটনা শ্যুটিংয়ে। ইন্দোনেশিয়ায় অলিম্পিক বাছাই টুর্নামেন্টে খুব ভালো অবস্থানে থেকেও শেষটায় গড়বড় করে ফেলে অলিম্পিক কোটার অর্জনের মতো বড় সুযোগ হারিয়েছেন রবিউল ইসলাম। তাঁর হতাশা, ‘শেষ চারটি শট আমার খারাপ হয়ে যায়। যেখানে ১০.৮, ১০.৭ কি ১০.৬ করে মারছিলাম, সেখানে শেষ কয়েকটা শটে আমার স্কোর ১০.১, ১০.০, ১০.২…।
আমি দেশে ফিরেও বুঝতে পারছি না, কী করে এমনটা হলো! এমন না যে আমার আত্মবিশ্বাসের কোনো ঘাটতি ছিল, কারণ আমি প্রচুর অনুশীলন করেছিলাম, যে কারণে পারফরম্যান্স নিয়ে কখনোই সংশয় ছিল না।’ ঠিক একই কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান। বছর দুয়েক ধরে গ্র্যান্ডমাস্টার নর্মের খুব কাছে গিয়েও সেটি হচ্ছে না তাঁর। তাঁর মতে, ‘গত বছরই অন্তত পাঁচটি টুর্নামেন্টে নর্মের খুব কাছে গিয়েও আমি পারিনি। হয়তো শেষ রাউন্ডটা জিততে হতো, কিন্তু পারিনি। এমনটা স্পেনে হয়েছে, কাজাখস্তানে হয়েছে, ভিয়েতনামে তিনটি টুর্নামেন্টে হয়েছে। কেন এমন হচ্ছে, এটা নিয়ে আমিও ভাবছি।
নিয়াজ স্যারের (নিয়াজ মোরশেদ) সঙ্গে কথা বলেছি। উনি বলেছেন, আরো খেলতে হবে। খেলতে খেলতেই হয়ে যাবে। অনুশীলনেও জোর দিতে বললেন।’ শিষ্যদের শেষবেলায় ভরাডুবি নিয়ে চিন্তিত আর্চারির জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখও। তাঁর শিষ্য হাকিম আহমেদ থাইল্যান্ডে সর্বশেষ অলিম্পিক বাছাই টুর্নামেন্টে শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে হেরে যান টাইব্রেকারে। হাকিম-রোমান সানা-রামকৃষ্ণ সাহা মিলে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদকের লড়াইয়ে হেরে যান ইন্দোনেশিয়ার কাছে, যে দলটিকে কখনোই বড় প্রতিপক্ষ মনে করেনি বাংলাদেশ। তাই এই হারে বিচলিত ফ্রেডরিখ, ‘প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবাটা ঠিক হবে না। আমরা যেমন এগোচ্ছি, ওরাও এগোচ্ছে।’ তাঁর মতে, ‘যাদের শীর্ষ পর্যায়ে খেলার যত বেশি অভিজ্ঞতা, তাদের শেষ পর্যায়ে এসে ভুল করার প্রবণতা কম। অভিজ্ঞতা আছে বলেই বাংলাদেশের অন্যান্যের চেয়ে রোমান, হাকিমরা ভালো করছে। তবে হ্যাঁ, এ পর্যায়ে ভালো করার জন্য অনেকে মনোবিদের সঙ্গেও কাজ করে, সেটাও আছে।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিচ্ছিন্নভাবে তেমনই কিছু কাজ করা আলী খান কিন্তু বলেছেন মনের এই কাজ এখন পারফরম্যান্স বৃদ্ধির বড় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, “আমরা ফিটনেস নিয়ে কাজ করি, দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাজ করি। কিন্তু মনেরও একটা অনুশীলন আছে। এটাকে আমরা বলি, ‘সাইকোলজিক্যাল স্কিল ট্রেনিং।’ আমাদের মস্তিষ্কেরও কোষ আছে, সেসব কোষের সবলতা, দুর্বলতার ব্যাপার আছে। মানসিক অনুশীলনের মাধ্যমে সেই কোষগুলোর কার্যকারিতা বাড়ানো যায়। সব কিছু করার পরও আপনি যখন সুফল পাচ্ছেন না, তার মানে অন্য কোনো একটা কিছুর ঘাটতি রয়ে গেছে। সেটা হলো ‘ফোকাস’ বা মনঃসংযোগ, সেটার অনুশীলন হয়নি।” আলী খান জোর দিতে বলেছেন সেখানেই, ‘আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে এখন এটা নিয়ে সবাই কাজ করছে। শীর্ষ পর্যায়ে দেখা যায় দক্ষতার জায়গায় দুজন খেলোয়াড় প্রায় সমান, কিন্তু পার্থক্য করে দিচ্ছে মনের শক্তিটাই। এটা কেউ কেউ বোঝেন। আমাদের ক্রিকেটারদেরও কেউ কেউ কাজ করছেন। আমিও কিছুদিন কাজ করেছি বিসিবির সঙ্গে। শ্যুটিংয়ে কয়েকটা সেশন করেছিলাম। এ বিষয়টির ওপরই জোর দিতে হবে।’
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা