নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে ঢাকার খাল উদ্ধার ও সংস্কার প্রকল্প। বিগত ২০২০ সালে খালগুলো ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই সময় জরুরি ভিত্তিতে কিছু খাল থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হলেও সেগুলো এখন পুরনো রূপে ফিরে গেছে। খাল হস্তান্তরের দুই বছর হতে চললেও দেখা যাচ্ছে না দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি। ইতোমধ্যে রাজধানীতে ৪৬টি খালের মধ্যে ২০টি হারিয়ে গেছে। বর্তমানে কাগজেকলমে ২৬ খালের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও দখল ও দূষণে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। নগর বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন রাজধানীর খাল দখল ও দূষণ রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। খালগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রায় দুই বছরেও উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। যদিও খালগুলো বুঝে পাওয়ার পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন তোড়জোড় করে কিছু বর্জ্য অপসারণ করলেও এখন তা থমকে গেছে। ফলে খালগুলো আবারো পুরনো রূপে ফিরে গেছে। খালগুলো উদ্ধারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আরো শক্তিশালী ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী খালটিতে অবৈধ দখল তুলনামূলক কম থাকলেও দূষণে তা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খালটির মেরাদিয়া বাজার অংশে বিশাল ময়লার ভাগাড় রয়েছে। সেখানে ময়লা ফেলার সেকেন্ডারি ট্রান্সপার স্টেশন (এসটিএস) থাকলেও অনেক দিন ধরেই সেটি নষ্ট। আর এসটিএসের সামনে খালের পাড়ে বনশ্রী ও দক্ষিণ বনশ্রীর বাসাবাড়ির ময়লা ফেলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে খালের নিচের অংশ অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে। নন্দীপাড়া (জিরানি) খালেরও করুণ অবস্থা। ময়লা আর দখলের কবলে বিশাল আকৃতির খালটি মৃতপ্রায়। খালটির মাদারটেক অংশে খুঁটি পুঁতে বিপুলসংখ্যক দোকান বসানো হয়েছে। আর ওসব বাঁশের খুটিতে ময়লা আটকে স্তূপ জমছে। আর বাগানবাড়ি মাদারটেক এলাকায় ওয়াসার পানির পাম্পের পাশে খালের অবস্থা খুবই নাজুক। আশপাশের কিছু মানুষ ময়লা ফেলায় তা খালে যাচ্ছে। মান্ডা খালের অবস্থাও করুণ। গুদারাঘাট এলাকায় মান্ডা সেতুর দুই পাশে শুধু ময়লার স্তূপ। আর খালের কিছু অংশ দখল করে গোয়াল ঘর, দোকান, আবাসিক ভবনসহ নানা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। খিলগাঁও-বাসাবো খালের অস্তিত্ব বাসাবো অংশে থাকলেও খিলগাঁও অংশে হারিয়ে গেছে। ভরাট করে মাটির নিচ দিয়ে পাইপ ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরের কাঁটাসুর খাল, রূপনগর খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, সাংবাদিক কলোনি খাল, কল্যাণপুর খাল ও লাউতলা খালেরও একই অবস্থা। বিভিন্ন সময় অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও খাল পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা করলেও পরিস্থিতি এখন আগের মতোই।
সূত্র আরো জানায়, রাজধানীর খাল সংস্কার নিয়ে ডিএনসিসি মাস্টারপ্ল্যান করছে। তার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঠিক করা হয়েছে। তারা খালকে দৃষ্টিনন্দন কীভাবে করা যায় ওই আলোকে লে-আউট ডিজাইন তৈরি করছে। তাছাড়া সেনাবাহিনী দ্বারা খালের সীমানা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি খালের সীমানা সিএস, আরএস জরিপের মাধ্যমে করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও শিগগিরই শেষ হবে। তারপরই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জানান, ডিএসসিসির আওতাধীন খালগুলোর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় শিগগিরই ওসব প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়া যাবে। আর মন্ত্রণালয় যদি প্রকল্প অনুমোদন দিতে দেরি করলে ডিএসসিসি খাল সংস্কার কাজ শুরু করবে। চলতি বছর বাজেটে খাল সংস্কার কাজে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। খালের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রাথমিকভাবে পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করা হয়। গত দুই বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন বর্জ্য অপসারণ করা। কিন্তু মানুষের সচেতনতার অভাবে খালগুলোতে আব্রন্ ময়লা জমতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি