April 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, August 17th, 2021, 1:31 pm

মহেশখালীর সমুদ্রে এলএনজির তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের গ্যাস ঘাটতি মোকাবেলায় মহেশখালীর সমুদ্রে তৃতীয় তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। যদিও বর্তমানে মহেশখালী সমুদ্রে দুটি ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) রয়েছে। জ্বালানি বিভাগ তৃতীয় ওই এফএসআরইউ স্থাপনের বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। বিগত ২০১৮ সাল থেকে দেশে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে। আর আমদানি করা এলএনজি থেকে প্রক্রিয়াজাত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেয়া হচ্ছে। তারপরও গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। সেজন্যই সরকার মহেশখালীর সমুদ্রেই আরেকটি টার্মিনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২০২৩ সালের মধ্যেই ওই টার্মিনালের মাধ্যমে গ্রিডে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস আনা যাবে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৪২০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু এলএনজি আমদানির পরও প্রতিদিন সারাদেশে ১শ ঘনফুটেরও বেশি গ্যাসের ঘাটতি থেকে যায়। আমদানি করা এলএনজি থেকে মিলেছে ৭০ কোটি ঘনফুট। আর গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া যায় বাকি গ্যাস। এমন পরিস্থিতিতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত না হলে সামনের বছরগুলোতে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন আরো কমবে। ২০১৭ সালের গ্যাস সেক্টরে মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে ২০২৫ সালে দেশে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে ৪৪০ কোটি ঘনফুট। ফলে একদিকে যেমন গ্যাসের চাহিদা বাড়বে, অন্যদিকে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমার আশঙ্কা রয়েছে। তখন ঘাটতি যাবে বেড়ে। মূলত ওই চাপ সামলাতেই তৃতীয় টার্মিনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সূত্র জানায়, মহেশখালীর সমুদ্রে বর্তমানে দুটি এফএসআরইউ রয়েছে। ওই দুই টার্মিনাল থেকে দিনে ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব। আর মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ও ৪২ ইঞ্চির যে পাইপলাইন দুটি রয়েছে, তার যৌথ পরিবহন ক্ষমতা ১৫০ কোটি ঘনফুট। ফলে ওই এলাকায় আরো একটি ভাসমান টার্মিনাল বসিয়ে দিনে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সহজেই জাতীয় গ্রিডে দেয়া সম্ভব। সেজন্য বাড়তি পাইপলাইন বসাতে হবে না। একটি এফএসআরইউ বসাতে ৩০ মাস লাগে। আর এখন কার্যক্রম শুরু করলে ২০২৩ সালেই তৃতীয় টার্মিনাল থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেয়া সম্ভব।

সূত্র আরো জানায়, প্রাকৃতিক গ্যাসকে ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ১ বায়ুচাপে রেফ্রিজারেশন প্রক্রিয়ায় তরল করে এলএনজি পাওয়া যায়। এলএনজির প্রধান উপাদান মিথেন, তবে সামান্য পরিমাণ ইথেন প্রপেন, বিউটেন, পেন্টেনসহ অন্যান্য হাইড্রো কার্বন মিশ্রিত থাকে। প্রাকৃতিক গ্যাসকে এলএনজিতে রূপান্তর করলে এর আয়তন সংকুচিত হয়ে ৬০০ গুণ কমে যায়। ফলে এলএনজি পরিবহন করা সহজ হয়। দেশের জ্বালানি ঘাটতি মেটাতে ২০১০ সালেই এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়। আর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৬ সালের টার্মিনাল স্থাপনে পেট্রোবাংলা যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তি সই করে।

নির্মাণ, পরিচালনা ও স্থাপন (বিওওটি) পদ্ধতিতে এক্সিলারেট ২০১৭ সালে ওই টার্মিনাল স্থাপন করে। আর ২০১৮ সালের গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। ১৫ বছর পর ২০৩২ সালে এক্সিলারেট এফএসআরইউ পেট্রোবাংলার কাছে হস্তান্তর করবে। আর তার পাশেই দ্বিতীয় টার্মিনাল স্থাপন করে দেশীয় সামিট গ্রুপ। ২০১৭ সালে সামিটের সঙ্গে পেট্রোবাংলার চুক্তি হয়। বিওওটি পদ্ধতিতে স্থাপিত এফএসআরইউ ১৫ বছর সামিট চালাবে। ২০৩৩ সালে সেটি পেট্রোবাংলার কাছে হস্তান্তর করা হবে। তাছাড়া মাতারবাড়ীতে একটি ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনাও এগিয়ে চলছে।

অন্যদিকে সরকার কাতার আর ওমান থেকে দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি আমদানির চুক্তি করেছে। ২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বার্ষিক সরবরাহের পরিমাণ ১.৮ থেকে ২.৫ মিলিয়ন টন। কাতার থেকে এলএনজি নিয়ে প্রথম কার্গো আসে ২০১৮ সালে। বছরে গড়ে ৪০টি কার্গোতে এলএনজি আনা হয়। ২০১৮ সালে ওমানের সঙ্গেও ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি সই হয়। আর ২০১৯ সালে ওমান থেকে প্রথম কার্গো আসে। তাছাড়া স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি কেনে বাংলাদেশ। সেজন্য ১৭টি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছে পেট্রোবাংলা। ২০১৯ সালে দেশে স্পট মার্কেটের কার্গো প্রথম আসে ২৫ সেপ্টেম্বর।

অতিসম্প্রতি জ্বালানির বিভাগের এক বৈঠকে মহেশখালীতে তৃতীয় এলএনজি টার্মিনাল স্থানের বিষয়ে আলোচনা হয়। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তৃতীয় টার্মিনাল স্থাপনের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।