অনলাইন ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপে ভয়াবহ দাবানলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৯৩ জনে দাঁড়িয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যা দেশটির এক শতাব্দীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। তাই নিহতের সংখ্যা ‘উল্লেখযোগ্যভাবে’ বাড়বে বলে শনিবার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন হাওয়াই গভর্নর জোশ গ্রিন। নিহতদের পরিচয় সনাক্তে ফরেনসিক কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “এটা হাওয়াইয়ের জন্য অবিশ্বাস্য এক দিন ছিল। “এই দাবানল নিশ্চিতভাবেই হাওয়াই বাসিন্দাদের দেখা সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হবে। আমাদের শুধুমাত্র অপেক্ষা করা এবং জীবিতদের সমর্থন করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। এখন আমাদের মূললক্ষ্য যখনই সম্ভব লোকজনকে তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিয়ে দেওয়া এবং তাদের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই ও স্বাস্থ্য সেবার বন্দোবস্ত করা। তারপর আমরা পুনর্গঠনের দিকে মন দেবো।” দাবানল এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সেটিকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্বীপটির কিছুকিছু অংশে এখনো কাজ চলছে। যার মধ্যে দ্বীপটির পশ্চিম উপকূলীয় শহর লাহাইনার চারপাশও রয়েছে।
পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় ঐতিহাসিক এই শহরটি দাবানলে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। মূলত লাহাইনায় ধিকিধিকি জ¦লতে থাকা ধ্বংসস্তূপের ভেতর উদ্ধারকারী দলগুলো নিবিড়ি তল্লাশি চালানো শুরু করার পর থেকেই মৃতের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। জোরালো সতর্কতা জানানোর আগেই কীভাবে দাবানল এত দ্রুত এই শহরটিজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তা নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন হাওয়াইয়ের কর্মকর্তারা। অঙ্গরাজ্যটির ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৬০ সালে হাওয়াই যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেওয়ার পরের বছর এক সুনামিতে দ্বীপপুঞ্জটির বিগ আইল্যান্ডে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছিল, মাউইর দাবানলে মৃত্যুর সেই সংখ্যা এরইমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দ্বীপটির ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিম উপকূলে ধ্বংসস্তূপের নিচে দেহাবশেষের চিহ্ন বা লাশ খুঁজতে কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষিত স্নিফার কুকুর ব্যবহার করছে। এখন পর্যন্ত তারা মোট তল্লাশি এলাকার মাত্র ৩ শতাংশ জায়গায় তল্লাশি শেষ করতে পেরেছে বলে জানান মাউই পুলিশ প্রধান জন পেলেটিয়ার।
কথা বলার সময় তিনি বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, “তাদের পরিচয় সনাক্ত করতে দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে। এই ৯৩টি মৃতদেহের কোনোটির পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। “এই সংখ্যা যে কত বড় হবে কারো পক্ষেই এখন আসলে এটা বলা সম্ভব না।” দাবানলে লাহাইনার হাজারেরও বেশি ভবন পুড়ে গেছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এ সৈকত শহরটির ৮০ শতাংশ অবকাঠামো ‘শেষ হয়ে গেছে’ বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শহরটির পুনর্গঠনে কয়েক বিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি বহু বছর প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাওয়াইয়ের মার্কিন সিনেটর ব্রায়ান শাটজ বলেছেন, “পুড়ে যাওয়া ভবনগুলোর ভেতরে এখনও কেউ প্রবেশ করেনি, এখানেই মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে অনুমান করছি আমরা।”
পরে সিএনএনকে তিনি বলেন, লাহাইনাকে বোমায় হামলায় বিধ্বস্ত একটি যুদ্ধ অঞ্চলের মতো হচ্ছে যেখানে প্রচন্ড তাপে ইঞ্জিন ব্লকগুলোও গলে গেছে। এক বিবৃতিতে মাউই কাউন্টি জানিয়েছে, ঝোপঝাড় থেকে ছড়িয়ে পড়া লাহাইনার আগুন এখনও জ¦ললেও ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। দ্বীপের আরও দুটি আগুন ৮০ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। বিপর্যয়ের তিন দিন পরে এটি এখনও পরিষ্কার হয়নি, কিছু বাসিন্দা, আগুন তাদের ঘরবাড়ি গ্রাস করে নেওয়ার আগেই সতর্ক বার্তা পেয়েছিলেন কি না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যে কোনো হুমকির মুখে মাউইয়ির জরুরি সাইরেনগুলো বেজে উঠে দ্বীপবাসিকে সতর্ক করার কথা, কিন্তু দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সময় সেগুলো বাজেনি বলেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
“প্রকৃতপক্ষে কখন ঠিক কী ঘটেছিল তা নিশ্চিত করার জন্য আমি একটি বিস্তারিত পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছি,” সিএনএনকে বলেছেন হাওয়াইয়ের গভর্নর যশ গ্রিন। বাসিন্দাদের সতর্ক করতে টেক্সট বার্তা, ইমেইল না ফোন কল করা হয়েছিল, এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি কর্মকর্তারা। গ্রিন জানিয়েছেন, একইসঙ্গে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছিল, যখন লাহাইনা বড় ধরনের হুমিকের মুখে পড়ে তখন টেলিযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আর দমকল কর্মীরা অন্য বড় দাবানলগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এভাবেই যেটিকে ছোট একটি দাবানল বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল সেটিই হঠাৎ করে অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মাউইর পশ্চিম উপকূলের সবকিছুকে গ্রাস করে নেয়।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২