অনলাইন ডেস্ক :
মাছ ধরার একটি ব্রিটিশ ট্রলার আটকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র বিবাদ শুরু হয়েছে ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে। ফরাসি কর্তৃপক্ষ ট্রলারটি আটক করায় ক্ষোভ জানিয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে যুক্তরাজ্য। এ ঘটনাকে ব্রেক্সিট-পরবর্তী জলসীমায় মাছ ধরার অধিকার নিয়ে দুই দেশের বিরোধের অংশ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, গত বুধবার স্থানীয় সময় দিবাগত রাতে লা হাভ্রে বন্দরে তল্লাশি চালিয়ে একটি ব্রিটিশ ট্রলারটি আটক করে ফ্রান্স। আরেকটি ট্রলারের জরিমানা করা হয়। ফরাসি কর্তৃপক্ষের দাবি, আটক করা ট্রলারের লাইসেন্স ছিল না। তবে ব্রিটিশ পরিবেশমন্ত্রী জর্জ ইউস্টেস দাবি করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্রলারটির লাইসেন্স অনুমোদন করেছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দেওয়া তালিকায় এর নাম না থাকার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। এমনটা কেন হলো, তা ‘অস্পষ্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন ইউস্টেস। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেছেন, যুক্তরাজ্যে নিয়োজিত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ক্যাথেরিন কোলোনাকে এসব ‘অযৌক্তিক হুমকির’ ব্যাখ্যা দিতে হবে।গত মাসে বেশ কয়েকটি ফরাসি নৌকাকে মাছ ধরার লাইসেন্স দিতে অস্বীকৃতি জানায় যুক্তরাজ্য ও জার্সি দ্বীপপুঞ্জ কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, এগুলো ব্রেক্সিট চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। আর তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ফ্রান্স। বুধবার ফরাসি কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, ২ নভেম্বরের মধ্যে মাছ ধরার লাইসেন্স-সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের সমাধান করা না হলে আগামী সপ্তাহে কিছু বন্দরে ব্রিটিশ নৌকা ভিড়তে দেবে না তারা। আগামী মঙ্গলবার থেকে ‘নিশানা করে করে পদক্ষেপ’ নেয়ারও হুমকি দিয়েছে দেশটি। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে মাছ ধরার ব্রিটিশ নৌকাকে বন্দরে ঢুকতে না দেওয়া এবং যুক্তরাজ্যের মালামাল তল্লাশি। ব্রিটিশ রাজশাসনের অধীন নিজস্ব সরকার দ্বারা পরিচালিত জার্সি দ্বীপপুঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে ফ্রান্স। এর আগে গত মে মাসেও একই হুমকি দিয়েছিল দেশটি। ফ্রান্সের ইউরোপবিষয়ক মন্ত্রী ক্লেমেন্ট বাউন দেশটির টিভি চ্যানেল সিনিউজকে তিনি বলেন, ‘আমাদের জোরজবরদস্তির ভাষা ব্যবহার করতে হবে। কারণ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে মনে হচ্ছে, ব্রিটিশ সরকার একমাত্র এ ধরনের ভাষাই বুঝতে পারে।’ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এক টুইট বার্তায় বলেন, ইউরোপবিষয়ক মন্ত্রী ওয়েন্ডি মরটনকে তিনি বলেছেন,শুক্রবার আলোচনার জন্য ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তলব করতে। ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, ‘প্রস্তাবিত ফরাসি পদক্ষেপ অন্যায্য এবং তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি কিংবা বিশদ আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ইস্যুতে ফরাসি সরকার লাগাতার যেসব সংঘাতপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করে, তা নিয়ে আমাদের আক্ষেপ হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে এ ইস্যু সমাধানের বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে পড়ে।’ আটক হওয়া ব্রিটিশ ট্রলারের নাম করনেলিস গার্ট জেন। এটি স্কটিশ কোম্পানি ম্যাকডাফ শেলফিশের মালিকানাধীন। কোম্পানির দাবি, এ ট্রলার ফরাসি জলসীমায় বৈধভাবে মাছ ধরছিল। ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স বিরোধের অংশ হিসেবে ট্রলারটি আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তারা। এর আগে বুধবার ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে ফ্রান্স, জার্সি ও যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। তখন ১৬২টি ফরাসি নৌকাকে শুক্রবার থেকে জার্সির জলসীমায় মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয়। জার্সি সরকার ফ্রান্সের নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকিকে ‘চরম হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করেছে।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু