নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাঝপথেই থমকে আছে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধের উদ্যোগ। চোরাই, অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট বেচাকেনা রুখতে সরকার ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার বা এনইআইআর প্রকল্পের মাধ্যমে অবৈধ সব হ্যান্ডসেট বন্ধের উদ্যোগ নিলেও বারবার সময় বাড়িয়েও ওই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। সবশেষ গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে সব অবৈধ হ্যান্ডসেট পর্যায়ক্রমে বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। ওই মোতাবেক কাজও শুরু হয়। কিন্তু বিদেশ থেকে ফেরত আসা যাত্রীদের বহন করা বৈধ সেট নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়ায় ওই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মোবাইল ছিনতাই। মূলত চুরি যাওয়া সেট বেচাকেনা ও ব্যবহারের অবাধ সুযোগ থাকায় মোবাইল ছিনতাই থামছে না। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তথ্যানুযায়ী রাজধানীর ব্যস্ততম ১৬টি স্থানে দৈনিক শতাধিক মোবাইল ছিনতাই হচ্ছে। একই সঙ্গে অবৈধভাবে আমদানি করা, চোরাই ও নকল হ্যান্ডসেটেদেশের বাজার ছেয়ে গেছে। তাতে শুধু গ্রাহকই প্রতারিত হচ্ছে না, সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। দেশে প্রতি বছর বিক্রি হওয়া মোবাইল হ্যান্ডসেটের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ভাগ অসাধু উপায়ে কর ফাঁকি দিয়ে বাজারে ঢুকছে। তাতে ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
সূত্র জানায়, বর্তমানে মোবাইলেই মানুষের ব্যাংকিং তথ্য, গোপন পাসওয়ার্ড, ব্যক্তিগত ছবি, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসহ সবই থাকছে। কিন্তু মুহূর্তে ওই মোবাইল ছোঁ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারী। আর লাখ টাকার হ্যান্ডসেট ১০-১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। দেশে গড়ে বছরে সাড়ে ৩ কোটি হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা ও উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ১২ লাখ। মোবাইল ফোন উৎপাদন ও অ্যাসেম্বলিং খাতে দেশে বর্তমানে ১২-১৪টি কোম্পানির বিনিয়োগ ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, যাদের উৎপাদন সক্ষমতা ৪ কোটি ইউনিটের বেশি। অনেকে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে উৎপাদনের অপেক্ষায় আছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে মোবাইল বিদেশে রপ্তানির সুযোগ থাকলেও ২৫-৩০ ভাগ হ্যান্ডসেট কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে দেশে ঢুকছে। তাতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের মোবাইল শিল্প।
সূত্র আরো জানায়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে পরীক্ষামূলক এনইআইআর কার্যক্রম শুরুর পর দেশের অবৈধ সেটের সংখ্যার ধারণা পাওয়া যায়। পয়লা জুলাই থেকে গ্রাহকের হাতে থাকা হ্যান্ডসেটের নিবন্ধন শুরু হয়। ৩ মাস সময় দিয়ে ১ অক্টোবর থেকে বিটিআরসির অবৈধ সেট বন্ধের কথা ছিল। পয়লা জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি সাড়ে ৮ লাখ নতুন হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩১ লাখ সেটকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১ অক্টোরব থেকে বিটিআরসি অনিবন্ধিত নতুন হ্যান্ডসেট বন্ধ করা শুরু করে। প্রথম ৩ দিনে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫২টি সেট বিটিআরসির নেটওয়ার্কে নতুন শনাক্ত হয়। তার মধ্যে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৬১টি হ্যান্ডসেট বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিদেশ থেকে আসা বৈধ হ্যান্ডসেট নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা শুরু হওয়ায় সরকার বৈধ-অবৈধ কোনো ধরনের হ্যান্ডসেট বন্ধ না করার ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে বিটিআরসি সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, অবৈধ সেট বন্ধ হলে ব্যবহারকারীরা ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশি নিরাপত্তা উপভোগ করতে পারবেন। চোরাই ফোন বেচাকেনা বন্ধ হবে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে। দেশীয় মোবাইল ফোন অ্যাসেম্বল শিল্প লাভবান হবে। নকল সেট কিনে মানুষ প্রতারিত হবে না। এনইআইআর কার্যক্রম চালু হলে অনিবন্ধিত সেটে সিম ঢুকানোর সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ যাবে। মেসেজে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটটি রেজিস্টার করার নির্দেশনা থাকবে। ছিনতাই করা সেট কেনাবেচা বন্ধ হবে। কারণ একজন ব্যবহারকারী একবার সেট রেজিস্টার করার পর যদি সেটি অন্য কাউকে বিক্রি করতে চান তাহলে ওই সিম দিয়ে সেটি ‘ডি-রেজিস্টার’ করে বিক্রি করতে হবে। চলতি বছরে একাধিক অভিযানে ডিবি মোবাইল ছিনতাইকারী চক্রের অনেককে আটক করে। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী পুরো ঢাকায় সীমানা নির্ধারণ করে মোবাইল ছিনতাইয়ে জড়িত অন্তত ২০টি চক্র। ১৬টি জনবহুল স্থানে দৈনিক ছিনতাই হয় শতাধিক ফোন। কম দামি ফোনগুলোর বেশির ভাগ গুলিস্তান পাতাল মার্কেট ও মিরপুর এলাকায় ফোনের দোকানে বিক্রি হয়। কিছু ফোন ফুটপাতে প্রকাশ্যেও বিক্রি হয়। তবে দামি ফোনগুলো কিনে নেয়ার আলাদা চক্র রয়েছে। তারা ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে অনলাইনে বা হাতে হাতে বিক্রি করে দেয়।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে বিটিআরসির মহাপরিচালক (স্পেকট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল গুমাধ্যমকে জানান, অবৈধ সেট বন্ধের জন্য বিটিআরসির এনইআইআর সিস্টেম শতভাগ তৈরি আছে। কিন্তু হ্যান্ডসেট রেজিস্টার বা ডিরেজিস্টার করার বিষয়ে এখনো ব্যবহারকারী সচেতন নয়। সেট নিবন্ধনের মেসেজ পাঠালেও অনেকে তা সময়মতো দেখছেন না। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় এজন্য এনইআইআর কার্যক্রম আপাতত বন্ধ আছে। সরকারের নির্দেশনা পেলে আবার চালু করা হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ