নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাত্রাতিরিক্ত বিমান ভাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কর্মস্থলে যোগদানে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীরা। চাহিদা বাড়ায় এয়ারলাইন্সগুলো সিন্ডিকেট করে মধ্যপ্রাচ্যগামী টিকিটের দাম ক্রমাগত বাড়িয়েই চলেছে। ফলে বিদেশগামী কর্মীরা অতিরিক্ত টাকায় টিকিট কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। এতে অভিবাসন ব্যয়ও বাড়ছে। এ অবস্থায় রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা বাড়ছে। পাশাপাশি এয়ারলাইন্সগুলোর সিন্ডিকেটের কারণে ওমরা যাত্রীরাও বিপাকে পড়ছে। আটাব সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিমানের অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত অভিবাসী কর্মীদের যথাসময়ে কর্মস্থলে যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সউদী আরব সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে কর্মী আমদানি অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিমান ভাড়া। তাছাড়া রমজানে ওমরাযাত্রীদের চাহিদা বাড়ায় ওমরাহ টিকিটের মূল্যও আকাশচুম্বি। ৭৫ হাজার টাকার ওমরাযাত্রীদের টিকিট এখন লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেড় লাখ টাকা থেকে দু’লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ওমরাহ টিকিট। খোদ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীও বিমান ভাড়া কমানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ বিমান ভাড়া সহীয় পর্যায়ে নির্ধারণের দায়িত্ব বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওপর। সূত্র জানায়, বিগত ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৮৪ জন বাংলাদেশী নারী-পুরুষ চাকরি লাভ করেছে। আর গত জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন দেশে ১ লাখ ৭ হাজার ৭৩ জন এবং গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ১ লাখ ৯ হাজার ৩৬০ জন চাকরি লাভ করেছে। কিন্তু বিদেশগামী কর্মীদের বিমান টিকিট নিয়ে চলছে হাহাকার। এয়ারলাইন্সগুলো একজোট হয়ে টিকিটের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের বেশির ভাগই সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলো দুইগুণ ভাড়া বাড়িয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া প্রবাসী শ্রমিকরা টিকিটের দামে মহাবিপদে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলো সিন্ডিকেট করে টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলো ৪০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকার ওয়ানওয়ের টিকিট এখন সিন্ডিকেট করে ৮০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। বিমানের টিকিটও কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে চড়া দামে বিক্রির অভিযোগ উঠছে। সউদী, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে অভিবাসী কর্মী গমনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এয়ারলাইন্সগুলো বিমান ভাড়া ইচ্ছামতো বাড়াচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষ কোনো কোনো প্রবাসী কর্মী দেড় লাখ টাকা দিয়ে বিজনেস ক্লাসের টিকিট কিনে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিমানের টিকিটের মূল্য ঊর্ধ্বগতি রোধে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নির্বিকার। অতিরিক্ত ভাড়া বহন করা ও যথাসময়ে কর্মস্থলে যাওয়া অভিবাসীদের জন্য প্রায় অসম্ভব ও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি সময়মতো কর্মস্থলে ফিরতে না পেরে অনেকে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়ছে। কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী বিদেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তাছাড়া চলতি বছর হজ প্যাকেজের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় যাত্রীরা চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। ২০১৭ সালে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল জনপ্রতি ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৩৭ টাকা। ২০২০ সালে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ২০২২ সালে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। চলতি বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সউদী আরব ছাড়াও ইয়েমেন এয়ারওয়েজ, কাতারের কাতার এয়ারওয়েজ, গালফ এয়ার, সউদী আরবের ফ্লাইনাস, কুয়েত এয়ারলাইন্স, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) বাংলাদেশের হজযাত্রী বহন করতো। তখন এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে কম ভাড়া নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সুবিধা দিয়ে ইচ্ছেমতো এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে যাত্রীদের হজ প্যাকেজ অফার করতো। আর ২০১২ সালে হজের আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ ও সউদী আরবের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সউদী এয়ারলাইন্স ছাড়া তৃতীয় কোনো এয়ারলাইন্স বাংলাদেশি হজযাত্রী বহন করতে পারবে না। এরপর থেকে এই দুই এয়ারলাইন্সের একচেটিয়া ব্যবসা শুরু হয়। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্সগুলোর সিন্ডিকেট করে অনৈতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলকভাবে টিকিটের দাম বাড়াচ্ছে। আগে ওমরাযাত্রীরা ৭০ হাজার টাকা থেকে ৮৫ হাজার টাকায় ওমরাহ টিকিট কিনতে পারতো। কিন্তু আসন্ন রমজানে ওমরাযাত্রীদের টিকিটের মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। এদিকে এ বিষয়ে আটাব সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ ২০২৩ সালের হজ প্যাকেজে উল্লেখিত বিমান ভাড়াহ্রাসসহ প্যাকেজ মূল্য পুনঃবিবেচনার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত প্রস্তাব করেছেন। অন্যদিকে এ বিষয়ে হাবের অর্থ সচিব মুফতি আব্দুল কাদের মোল্লা জানান, এয়ারলাইন্সগুলো সিন্ডিকেট করে ওমরাহ টিকিট ও বিদেশগামী কর্মীদের টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করেছে। ওমরাহ টিকিটের টাকা জোগাতে যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠছে। বিমান কর্তৃপক্ষ যদি ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে নিধারণ করতো তা’হলে অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো ভাড়া কমাতে বাধ্য হতো।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ