নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের মাদকাসক্ত তরুণদের কাছে ইয়াবার চেয়েও আইস আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। ফলে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আইস আসক্তের সংখ্যা। শুরুতে রাজধানী কেন্দ্রিক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের মধ্যে আইসের চাহিদা থাকলেও এখন সব শ্রেণির মাদকসেবীদের মধ্যেই তার চাহিদা বাড়ছে। ঢাকার মতো দেশের অন্য মহানগরীতেও আইস সেবনকারী তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও নানাপথে বানের পানির মতো ঢুকছে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ (আইস)। আর এক গ্রাম ক্রিস্টাল মেথের দাম ৫ হাজার টাকা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ক্রিস্টাল মেথ ভঙ্ককর মাদক। তা সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা এবং মানসিক অবসাদ ও বিষণœতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক ও মানসিক উভয়ক্ষেত্রেই তা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ওই মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ও অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আইসে আসক্ত হয়ে তরুণ-যুবকরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে।
সূত্র জানায়, ইয়াবা তৈরির প্রধান উপাদান এমমেটাফিন। আর ক্রিস্টাল মেথ তৈরির প্রধান উপাদান হলো মেথাএমমেটাফিন। ইয়াবার চেয়ে কয়েকগুণ কার্যকরী মাদকাসক্তের শক্তি দিয়ে তৈরি হয় ক্রিস্টাল মেথ। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে ওই মাদকের চালান আসছে। অনেক ক্ষেত্রে ওই চালান বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রওাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিকল্প রুটে প্রবেশ করছে। আন্তর্জাতিক মাদক কারবারি সিন্ডিকেট বাংলাদেশকে ক্রিস্টাল মেথ পাচারে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৯ সালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ৮ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথের একটি চালান প্রথম ধরা পড়ে। তারপর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির অভিযানে ১০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ক্রিস্টাল মেথ ধরা পড়েছে। গত বছর বেশ কয়েকটি অভিযানে কেজি খানেক করে ওই মাদক উদ্ধার হয়। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফে বিজিবির হাতে ১ কেজি ৬০০ গ্রাম ওজনের একটি চালান ধরা পড়ে। আর সেটি ছিল এক অভিযানে বড় চালান মেথ উদ্ধারের ঘটনা। দেশের কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা মাদক প্রবেশের সবচেয়ে বড় করিডোর। আর ক্রিস্টাল মেথের বড় চালান উদ্ধারের ঘটনাও কক্সবাজারের টেকনাফে ঘটেছে।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্টদের মতে, সব ধরনের মাদকের চালান জব্দকালে আটককৃতরা মূলত বহনকারী। আর ওসব বহনকারী কারাগারে গেলেও মূল মাদক ব্যবসায়ীরা আড়ালে থাকায় নতুন পরিবহনকারী সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মাদক আসা বন্ধ না হয়ে উলটো বাড়ছে। মাদক দেশের সম্ভাবনাময় প্রজন্ম ধ্বংস করছে। সেক্ষেত্রে সমাজের সর্বস্তরের লোকজন এগিয়ে না এলে শুধুমাত্র প্রশাসন একা কখনো মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পুরোপুরি সক্ষম হবে না। সামাজিক ও পারিবারিক ভাবেই মাদক ব্যবসায়ীদের বয়কট করা জরুরি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ