নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনি এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ শুনানি শেষে তাদের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
এর বিরোধীতা করেন নিলাঞ্জনা রেফাত সুরভীসহ কয়েকজন আইনজীবী। আদালত তা নাকচ করে দেয়।
এদিকে, এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৩ আগস্ট রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং তার সহযোগী মো. মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকার গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টি আয়োজনের বেশ কয়েকটি স্থানের তথ্য প্রদান করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানিক দল বনানী এলাকায় বিকাল হতে রাত পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে শামসুর নাহার স্মৃতি ‘স্মৃতিমনি’ পরীমনি (২৬), মো. নজরুল ইসলাম রাজ (৩৯), পরীমনির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দীপু (২৯) ও রাজের ম্যানেজার সবুজ আলীকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, পরীমণির বাসা থেকে একটি মিনিবার পরিচালনার বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ ৩৩ বোতল বিভিন্ন প্রকার বিদেশি মদ, দেড় শতাধিক ব্যবহৃত বিদেশি মদের বোতল, ইয়াবা ও শিশা সামগ্রী, এলএসডি; আইস ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের জানায়, গ্রেপ্তারকৃত শামসুর নাহার স্মৃতি (স্মৃতিমনি) ওরফে পরীমণি জানিয়েছে পিরোজপুরের কলেজে (এইচএসসি) অধ্যায়নরত অবস্থায় চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তিনি ২০১৪ সালে চিত্র জগতে অন্তর্ভুক্ত হন। এ পর্যন্ত তিনি ৩০টি সিনেমা এবং ৫ থেকে ৭টি টিভিসিতে অভিনয় করছেন। পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে চিত্র জগতে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরিতে গ্রেপ্তারকৃত মো. নজরুল ইসলাম রাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত শামসুর নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি বা পরীমণি ২০১৬ সাল থেকে অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করে থাকেন। মাত্রাতিরিক্ত সেবনের চাহিদা মেটানোর লক্ষে বাসায় একটি মিনি বার স্থাপন করেছেন। মিনি বার থাকায় তার ফ্ল্যাটে ঘরোয়া পার্টি অয়োজন পরিপূর্ণতা পেত। গ্রেপ্তারকৃত মো. নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করত এবং পার্টিতে অংশগ্রহণ করত। র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তারকৃত মো. নজরুল ইসলাম রাজকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দাখিল পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন বলে দাবি করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য ও ঠিকাদারী কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভিন্ন সিনেমা/নাটকে তিনি নানান চরিত্রে অভিনয়ের সাথে সাথে নামে বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টি মিডিয়া নামেও তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়িক জগত ও চিত্র জগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় তিনি অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন। র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মো. নজরুল ইসলাম রাজ ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান এবং মো. মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগীতায় ১০/১২ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। এই সিন্ডিকেটটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকা-ের ব্যবস্থা করে থাকে। ওই পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করত। এ ছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টির আয়োজন করা হত। পার্টি আয়োজনের ক্ষেত্রে আগত ব্যক্তিদের চাহিদা/পছন্দের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পার্টি আয়োজন করত। র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, রাজ তার ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ কার্যালয়টি অনৈতিক কাজে ব্যবহার করতো। তার মোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস থেকে বিপুল পরিমাণ পর্নোগ্রাফি ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। এজন্য তার বিরুদ্ধে মাদক মামলার পাশাপাশি পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা হচ্ছে। র্যাব জানায়, নজরুল ইসলাম রাজ জানায় এ জাতীয় অবৈধ আয় থেকে অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় আমদানি, ড্রেজার, বালু ভরাট ও ঠিকাদারী এবং শোবিজ জগতে বিনিয়োগ করেতেন। তার সঙ্গে ব্যবসায় বেশ কয়েকজন অবৈধ অর্থের যোগানদাতাদের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্ছতা রয়েছে। এগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম