২৬ বছরের যুবক ফয়সাল আহম্মেদ। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডার ছলেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগে। আর এতেই স্বল্প পুঁজি নিয়ে মাশরুম চাষও শুরু করে দেন তিনি। ইউটিউবে চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যার ভিডিও দেখে শুরুতেই সফল হন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।
ফয়সাল আহম্মেদ যশোরের বাঘারপাড়ার দরাজহাট গ্রামের হাজী হায়দার আলীর ছেলে। তিনি ছাতিয়ানতলা দাখিল মাদরাসায় ইমামতি করেন।
ফয়সাল জানান, নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও পালন করা একটি ছাগল বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি বাড়ির আঙিনায় মাশরুম চাষ শুরু করেন। মাগুরার ড্রিম মাশরুম সেন্টার থেকে ৩০০ পিস স্পন (বীজ) এনে প্রথমে এক হাজার বেডে চাষ করেন। আর প্রথম চালানেই ২০ হাজার টাকা মতো লাভ হয় তার।
তিনি জানান, চাষের শুরু থেকেই ইউটিউব দেখেন তিনি। এর কয়েক মাস পরে মাগুরায় ড্রিম মাশরুম সেন্টার থেকে তিনদিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুম চাষের পাশাপাশি বীজ উৎপাদনও শুরু করেন। আগ্রহ আর ইচ্ছা শক্তির বলে মাশরুম চাষের এক বছরের মধ্যেই সফলতা অর্জন করেন তিনি।
বর্তমানে দুটি ঘর করে দেড় হাজার বেডে মাশরুম চাষ করেছেন। এ থেকে তিনি দেড় হাজার থেকে দুই হাজার কেজির মতো মাশরুম উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। একই সঙ্গে বসতঘরের একটি কক্ষে বীজ উৎপাদনের কাজ করছেন। ওয়েস্টার, প্রিয় টু ও ডাব্লিউ এস জাতের বীজ ব্যবহার করছেন তিনি। এতে সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার।
চাষ শুরু থেকে ২১ মাসে দেড় লাখ টাকার ওপরে লাভ করেছেন বলে জানান তিনি।
ফয়সাল আহম্মেদ জানান, বর্তমানে মাশরুম চাষ করে ভালো টাকা আয় করতে পারছেন। প্রথম স্পন থেকে ২৫ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। যা তিন মাস পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। নতুন চালান শুরু করায় বর্তমান প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি মাশরুম পাচ্ছেন। কোনো সমস্যা না হলে কিছু দিনের মধ্যে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কেজি মাশরুম পাওয়া যাবে। এই চালানে ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।
প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। এ পর্যন্ত পাঁচটি চালান বের করেছেন তিনি। প্রতি চালানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
যশোরের সুপার শপগুলোতে মাশরুম বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া রাজশাহী ও ঢাকার ক্রেতাদের কাছে পরিবহনের মাধ্যমে মাশরুম বিক্রি করেন। অবিক্রিত মাশরুম নষ্ট না করে রোদে শুকিয়ে কেজি প্রতি এক হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
ফয়সাল আরও জানিয়েছেন, এ কাজে তার কোনো শ্রমিক খরচ লাগছে না। মা ও স্ত্রী সহযোগিতা করেন। মাশরুম লাভজনক চাষ। যত্ন নিলে সারা বছর কম-বেশি ফলন পাওয়া যায়।
সরকারি প্রকল্প বা প্রণোদনা পেলে বেকারদের বিনামূল্যে মাশরুম চাষ পদ্ধতি শেখাবেন ও ভবিষ্যতে মাশরুমের বীজ গবেষণাগার স্থাপনের ইচ্ছার কথা জানান তরুণ এ সফল উদ্যোক্তা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানিয়েছেন, ফয়সালের মাশরুম সেন্টারে নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। তাকে পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। মাশরুমের সরকারি কোনো প্রদশর্নী নেই। সরকারি সহায়তা আসলে অবশ্যই তাকে দেয়া হবে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি