পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বিশ্ব নেতাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশ সমূহের জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।
এ সময় তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন দেশের সম্ভাব্য পরিণতির দিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
শনিবার ‘মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে’ জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এক প্যানেল আলোচনায় দেয়া বক্তব্যে ড. মোমেন এসব কথা বলেন।
বিভিন্ন দেশের সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের বিশ্ব নেতাদের অংশগ্রহণে দক্ষিণ জার্মানির শহর মিউনিখে শুক্রবার থেকে তিন দিনের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, মিউনিখ নিরাপত্তা সূচক ২০২২-এর জন্য করা জরিপে মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনকে শীর্ষ নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামানও বাংলাদেশ থেকে এ বছর সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর কার্বন নির্গমনের হার খুবই নগণ্য। তবুও জি-২০ দেশসমূহের কর্মকাণ্ডের কারণে বৈশ্বিক জলবায়ু দূষণের কারণে এই দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ড. মোমেন বলেন, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের জন্য বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বছর কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মন্ত্রীর সঙ্গে আরও যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক দূত জন কেরি, জার্মান ফেডারেল ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশনের স্টেট সেক্রেটারি ফ্রানজিস্কা ব্রান্টনার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিল্প ও উন্নত প্রযুক্তিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ আল জাবের।
প্যানেলটি পরিচালনা করেছেন- জ্যানি বেদেওস, প্রধান সম্পাদক, দ্য ইকোনমিস্ট এবং দৃশ্যধারণ করেছেন- পোস্টডাম ইনস্টিটিউট অব ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক ড. জোহান রকস্ট্রোম৷
বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তারা জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর সম্ভাব্য প্রভাবের জন্য ইউক্রেন নিয়ে তৈরি বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এর ফলে জলবায়ু সঙ্কট থেকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তারা বিজ্ঞানের প্রতি সম্মান রেখে এখন থেকে জলবায়ু পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
সম্মেলনের পৃথক অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন মার্কিন ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জিজ্ঞাসা করেন, ইউক্রেন নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার কারণে জলবায়ু এজেন্ডার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, এ বিষয়ে তারা কি মনে করে।
করোনা মহামারি থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে পরবর্তী অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ভ্যাকসিনকে ‘গ্লোবাল পাবলিক পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করার এবং বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিনের সমতা নিশ্চিত করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
কানাডা ও সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিল গেটসের উপস্থিতিতে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রযুক্তিগত জ্ঞান হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
শেষে এক কমিউনিটি সভায় বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
এলডিসি গ্রাজুয়েশনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু উত্তরণে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস জাতিসংঘের
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে ইউনূস-আইসিসির আলোচনা
দেশ সংস্কারে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র