অনলাইন ডেস্ক :
ইউনেস্কো তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় জেন্ডার সমতাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে জেন্ডার ভারসাম্যহীনতা নিরসনের লক্ষ্যে ইউনেস্কো নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আমাদের সংষ্কৃতি, গণমাধ্যম, সৃজনশীল শিল্পমাধ্যমে জেন্ডার ভূমিকা-ধারণা-উপস্থাপনা, জেন্ডার নীতি নিয়ে এখনো অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা এবং কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে।
এই লক্ষ্যে ইউনেস্কো বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট ) হোটেল আমারি- এ, ইউএন উইমেন এর সাথে যৌথভাবে ‘মিডিয়াতে জেন্ডার-বান্ধব কর্ম পরিবেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। এই আয়োজন টেকসই উন্নয়নের জন্য শৈল্পিক স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তা, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমে কর্মরত পেশাজীবি, শিল্পীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার, এই সৃজনশীল শিল্পমাধ্যমে জেন্ডার-বান্ধব কর্ম-পরিবেশের এবং জেন্ডার ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মতো সময়োপযোগি বিষয়সমূহ তুলে ধরে, একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা যায়।
গোলটেবিল আলোচনায় অভিনয়শিল্পী আজমেরী হক বাঁধন; অভিনয়শিল্পী ও শিক্ষক মনোজ প্রামাণিক; আইনজীবী ও মডেল পিয়া জান্নাতুল; চিত্রনাট্যকার মাসুম রেজা; পরিচালক কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়; পরিচালক সাবরিনা আইরিন; দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন এর নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ; ডিবিসি নিউজ এর সাংবাদিক ইসরাত জাহান ঊর্মি; ডিজিটালি রাইটস্ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী; কলামিস্ট ও কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট মীর আহসান হাবিব; দৈনিক ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস এর স্পেশাল করেসপনডেন্স মুনিমা সুলতানা; নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও মিডিয়া বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক সামিক্শা কইরালা পিএইচডি; ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস এর জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের লেকচারার তাবাসসুম সুষ্মি; ইউএনএফপি জেন্ডার ও মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশের মিডিয়া এবং সৃজনশীল শিল্পের অন্যান্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা আলোচনায় স্বঃতস্ফুর্ত অংশগ্রহন করেন।
আলোচনার উদ্বোধন করেন ইউনেস্কো ঢাকা কার্যালয়ের অফিসার-ইন-চার্জ সুসান ভাইজ। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, “আজ যে সকল মিডিয়া কর্মীরা একত্রিত হয়েছেন, মিডিয়াকে জেন্ডার-বান্ধব করার ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ আছে।’’
শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদানের সময় ইউএন উইমেন এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলী সিং বলেন, “ইউনেস্কো এবং ইউএন উইমেন এর এই যৌথ উদ্যোগ এবং আপনাদের পরামর্শ মিডিয়ার জেন্ডার-বান্ধব ও নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ তৈরির নীতিমালা তৈরি ও পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’’
আলোচনার শুরুতেই রিয়াজ আহমেদ বলেন, “একটা জেন্ডার বান্ধব পরিবেশ, যেখানে নারী-পুরুষ সবাই একই রকম সুবিধা পাবেন, তা বর্তমান সমাজে চিন্তা করা খুবই কঠিন। কারণ এই মূহুর্তে সংবাদমাধ্যম বা ইন্ডাস্ট্রিতে নারীদের সংখ্যাও খুব কম। মিডিয়ার এই ল্যান্ডস্কেপগুলো নিয়ে আমাদের কিছু গবেষণা ও ডাটা কালেকশন খুব জরুরী, যা মিডিয়ার কর্মপরিবেশের ভাল-মন্দ দুই ধরণের দিকই তুলে ধরবে। ক্লিক-বেইট প্রফিট থেকে বেরিয়ে আসতে এটা মিডিয়াকে সাহায্য করবে। ’’
পিয়া জান্নাতুল বলেন, “একজন নারী এবং একজন পুরুষের কর্মঘন্টা এবং কর্মস্থল কখনোই একই হতে পারে না। জেন্ডার বান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য সাংবাদিক-সম্পাদক-প্রতিষ্ঠানমালিক পক্ষের সাথে আলাদা করে বসতে হবে।’’
মিরাজ আহমেদ বলেন, “প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার, অন্তত কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও জেন্ডার সচেতনতার বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া মিডিয়ার যে নেটওয়ার্কিং প্লাটফরম আছে তাদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করা শুরু করা উচিৎ ’’
আলোচনার এক পর্যায়ে আজমেরী হক বাঁধন বলেন, “প্রথম কথা নীতিকাঠামোর জায়গাটা ঠিক করতে হবে এবং জেন্ডার বিষয়ে সবাইকে সেনসিটাইজ করতে হবে। পরবর্তিতে সেই বেস্ট প্র্যাকটিসগুলো নিয়ে আমরা ছোট ছোট ভিডিও-রিল-এইসব তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা যেতে পারে। আরো ওয়ার্কশপ করতে হবে সচেতনতা তৈরির জন্য।’’
মাসুম রেজা বলেন, “নারী চরিত্রকে প্রধান করে গল্প নির্মাণ করালে নাটক বা সিনেমা নাকি চলে না। এছাড়াও সব অবস্থা বিবেচনায় খুব ভালো অবস্থানে নেই মিডিয়ার পরিবেশ এবং এটি মোটেও নারী বান্ধব নয়। এই নিয়ে পলিসি এডভোকেসির পাশাপাশি যে সকল নির্মিত কন্টেন্ট এর জেন্ডার লেন্স দিয়ে পর্যালোচনা করা দরকার। ’’
বক্তব্য প্রদানকালে মনোজ প্রামাণিক বলেন, “জেন্ডার অসমতা অর্থনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। যথাযথ গবেষণার মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’’
গণমাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা ও কর্ম-পরিবেশ নিয়ে ইসরাত জাহান ঊর্মি উল্লেখ করেন, ‘‘এই ধরণের আলোচনায় মিডিয়ার গেটকীপারদের সংযুক্ত করা প্রয়োজন।’’
উদ্বেগ প্রকাশ করে কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা আদতে জেন্ডার বুঝিনা, কারণ আমাদের কোন পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় জেন্ডার বিষয়ক কোন সচেতনতা তৈরির কোন সুযোগ নেই। আমাদের পাঠ্যক্রমে জেন্ডার, নাগরিক বোধ এবং সৃজনশীলতা বিষয়ে কোর্স থাকলে আমরা হয়তো একদিন আরো জেন্ডার সচেতন হবো’’
আলোচনায় অংশগ্রহনকারী প্রত্যেকেই মিডিয়াতে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে জেন্ডার-বান্ধব কর্ম পরিবেশ নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয়তার স্বপক্ষে তাদের মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন। আলোচনাটি সঞ্চালোনা করেন ইউনেস্কো ঢাকা অফিস এর কালচার সেক্টর প্রধান, প্রোগ্রাম অফিসার কিযী তাহনিন।
আরও পড়ুন
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা’র বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৪ উদযাপন
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বন্ধ্যাত্ব বিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ সর্বজনীন দলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত