নিউজ ডেস্ক :
চালের বাজারে নৈরাজ্য কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই মিলাররা নানা অজুহাতে ক্রমাগত চালের দাম বাড়িয়ে চলেছে। সেক্ষেত্রে কখনো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, আবার কখনো সরবরাহে ঘাটতি বলে মিলাররা নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। চলতি বছর সর্বশেষ ধানের দাম বাড়তির দোহাই দিয়ে এক মাসের ব্যবধানে মিলাররা প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালে সর্বোচ্চ ২শ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে। ফলে পাইকাররা মিলপর্যায় থেকেই বাড়তি দরে চাল কিনতে বাধ্য হওয়ায় তারাও বাড়তি দরে চাল বিক্রি করছে। আর চালের বাড়তি দরের চাপে করোনাকালে ভোক্তারা নাজেহাল হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং চাল বাজার সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি সরু চালের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। মাঝারি আকারের চালের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং কেজিপ্রতি মোটা চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। তাছাড়া গত বছর একই সময়ের তুলনায়ও প্রতি কেজি চাল সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে খোদ খাদ্যমন্ত্রীও কারসাজি করে মিলারদের চালের দাম বাড়ানোর কথা বলেছেন। তাছাড়া চালের দাম কমাতে খাদ্যমন্ত্রী দফায় দফায় মিলারদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। কিন্ত মিলাররা বৈঠক শেষে তাৎক্ষণিকভাবে চালের দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও কিছুদিন পরই নানা অজুহাতে তারা বাড়তি দরেই চাল বিক্রি করছে। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, ধান-চালের বাজারে কাউকে সিন্ডিকেট করতে দেয়া হবে না। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বাজার দর ও মজুতের ওপর দৃষ্টি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান সংগ্রহ করবে সরকার। সূত্র জানায়, গত বছর ১৫ মার্চ সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মোট মজুত ছিল ১৭ লাখ ৫১ হাজার টন। তার মধ্যে চাল ১৪ হাজার ২৯ লাখ টন এবং গম ৩ লাখ ২২ হাজার টন। আর জুলাইয়ে খাদ্যশস্যের মজুত ছিল ১৫ লাখ ১৪ হাজার টন। আগস্টে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার টন। সেপ্টেম্বরে আরো কমে দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৯২ হাজার টন। অক্টোবরে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত ছিল ১০ লাখ ৮১ হাজার টন। আর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে চলতি বছরের ৮ জুন পর্যন্ত সরকারি গুদামে ১০ লাখ ৮৯ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। তার মধ্যে চাল ৭ লাখ ৮৫ টন ও গম ৩ লাখ ৪ হাজার টন। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিলাররা মূলত সরকারের গুদামে চালের মজুত কম থাকার সুযোগ নিচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ত্রাণ সহায়তায় সরকারি গুদাম থেকে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তাতে সরকারের গুদামে চালের মজুত কমার কারণে মিলাররা সুযোগ নিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সেজন্য সরকারের মজুত বাড়ানো, দেশীয় উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়িয়ে চালের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কঠোরভাবে বাজার তদারকি করা ছাড়া বিকল্প নেই। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৫০০ টাকা। বিআর-২৮ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২১৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ২০৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকা, যা এক মাস আগে ২০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে মিল পর্যায়ে বস্তাপ্রতি চালে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা বেড়েছে। আর রাজধানীর পাইকারি আড়তে প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২৬০০ টাকায়। বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকা, যা এক মাস আগেও ২১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকা, যা আগেও ২১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে পাইকারী চাল ব্যবসায়ীদের মতে, মিলারদের কারসাজি কেউ থামাতে পারছে না। তারাই চালের বাজার অস্থির করে রেখেছে। কিন্তু বাজারে চালের কোনো ধরনের ঘাটতি নেই। হাতে গোনা কয়েকটি বড় মিল মালিক কিছুদিন পর পর নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছে। সর্বশেষ ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে মিল পর্যায় থেকে নতুন বাড়তি দর বেঁধে দিয়েছে। ওই বাড়তি দরেই চাল কিনে আনতে হচ্ছে। ফলে বাড়তি দরেই চাল বিক্রিও করতে হচ্ছে। যার প্রভাব খুচরা পর্যায়ে ভোক্তার ওপর গিয়ে পড়ছে। অন্যদিকে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসাবে নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, বাজারে চালের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে ধানের দাম বৃদ্ধি। বেশি আয়ের আশায় কৃষকরা ধান ঘরে মজুত করে হাটবাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে চাহিদার তুলনায় বাজারে ধানের সরবরাহ কম থাকায় ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ধান কিনতে বাধ্য হচ্ছে। তাতে চালের দাম বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, দাম কমাতে বাজার তদারকি সংস্থাগুলোকে আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি চাল নিয়ে সরকারি মজুত বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আমদানি করেও চালের সরবরাহ বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে অসাধুরা সুযোগ পাবে না। পাশাপাশি কঠোর তদারকির মাধ্যমে দাম ভোক্তা সহনীয় করতে হবে। একই প্রসঙ্গে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। মিল পর্যায়ে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। কোনো অনিয়ম সামনে এলেই আইনের আওতায় আনা হবে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম