জেলা প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের বাসায় মিষ্টি নিয়ে গেলেন বিজয়ী প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সোমবার (১৭ জানুয়ারী) বিকেল ৫টার দিকে শহরের মাসদাইর এলাকায় তৈমূরের বাসভবনে যান তিনি। সেখানে দুজনই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় আইভী তৈমূরের কাছে দোয়া চান। তৈমূর আইভীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ শেষে আইভী তৈমূরকে মিষ্টি খাইয়ে দেন। তৈমূরও আইভীর মুখে মিষ্টি তুলে দেন। এ সময় ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, কাকা যেটা বলল আমাদের এটা পারিবারিক সম্পর্ক। আমি পুরো নির্বাচনজুড়েই বলেছি রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি আর পারিবারিক সম্পর্কের জায়গায় পারিবারিক সম্পর্ক। এ সম্পর্কে কখনও ঘাটতি হবে না। আমিও জানি আমার তরফ থেকে এটা নষ্ট হবে না। কাকাও এটা জানে। তিনি বলেন, আমি ভবিষ্যতেও বিভিন্ন কাজে তার পরামর্শ নেব, কাকা অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। আমি যখন পৌরসভায় নির্বাচিত হয়ে আসলাম তখন তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন। হীরালাল খাল ও বোয়ালিয়া খালের জন্য তিনি অনেক সাহায্য করেছেন। মুসলিম একাডেমির জায়গার কথা কাকা বলেছেন আমি দিয়েছি। তিনিও আমার একটা স্কুল করার জন্য সহযোগিতা করেছেন। আমরা সবাই নারায়ণগঞ্জের মানুষ। আইভী বলেন, যে যেই দল করি না কেন নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বার্থে দলের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করা আমাদের উচিত এবং আমরা সবাই করবো। যে পরামর্শ কাকা দিয়েছেন সেগুলো বাস্তবায়নে চেষ্টা করবো। শুধু সমালোচনার জন্য সমালোচনা না করে আপনারাও আমাকে সহযোগিতা করবেন এ আশা ব্যক্ত করছি। কাকির সঙ্গে আমার সব সময় কথা হয়। কাকা ব্যস্ত থাকলেও কাকির সঙ্গে সব সময় ফোনে কথা হয়। দাদি আমাকে অসম্ভব মায়া করতেন। আমি আগে কবরস্থানে গেলেই এখান দিয়ে যাওয়ার সময় দাদির সঙ্গে দেখা করে যেতাম। তিনি বলেন, কাকার ছোট ভাই খোরশেদ আমারই কাউন্সিলর। আমরা সব সময় সহযোগিতার সঙ্গে কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও করবো। অন্যদিকে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমি আজকে আইভীকে মোবারকবাদ জানাই। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আধ্যাত্মিক ও আন্তরিক। আমি যেখানেই থাকি আলী আহমদ চুনকার জন্য দোয়া করি। মেয়র আইভীর বাবা আলী আহমদ চুনকার প্রসঙ্গ তুলে তৈমূর বলেন, ছাত্রজীবন থেকে তার হাত ধরেই বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে আমার রাজনীতিতে উত্থান। চুনকা ভাই আমার মাকে মা বলতেন, আমি তাকে ভাই বলতাম। তার মেয়ের পেছনে আমি আছি। যেকোনো জায়গায় সে থাকুক, তার যেকোনো বিপদ-আপদে অদৃশ্য শক্তির মতো তার মাথায় আমার হাত আছে। আগামী দিন যেন সুন্দর হয়, তার পাশে আমি ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। অন্য কোনো কথাবার্তা কাজে আসবে না। তিনি আরও বলেন, আমি আগেই বলেছি, এটা অন্তরের সম্পর্ক। আমার শ্রদ্ধাবোধ চুনকা ভাইয়ের জন্য আজীবন থাকবে। একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দেন তৈমূর ও আইভী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন তৈমূরের স্ত্রী ফারজানা খন্দকার, কন্যা মার-ই-য়াম খন্দকার, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে গত রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নাসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলে। এরপর ফলাফল আসতে থাকে। নাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার ফল ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা নাগাদই আইভীর জয়ের আভাস মিলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তার জয়েরই খবর আসে। ঘোষিত ১৯২টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত আইভী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট। এর আগে ২০১১ সালে প্রথমবার এবং ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার মেয়র পদে জয়ী হয়েছিলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি