অনলাইন ডেস্ক :
একদিন আগেই বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুমিনুল হক। এবার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন। তার দাবি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার চ্যালেঞ্জটা পান না। সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হারের পর চট্টগ্রামেও একই পরিণতি বাংলাদেশের। ব্যাটিং ব্যর্থতায় এই টেস্ট স্বাগতিকরা হারে ১৯২ রানের বড় ব্যবধানে। এমনিতেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট একেবারেই খেলেন না জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা, তার মধ্যে দীর্ঘ বিরতির পরপরই এক একটি টেস্ট সিরিজ খেলতে হয়।
এই কারণে সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে লংগার ভার্সন ক্রিকেটে ফিরতেই ব্যাটারররা খেই হারান। পর্যাপ্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না খেলার কারণেই এমনটা হয় বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচির কারণে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার সুযোগ খুব একটা নেই ক্রিকেটারদের। যারা সুযোগ পান, তাও একটি কিংবা দুটি ম্যাচে। লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছিলেন সাদমান ইসলাম। জাতীয় ক্রিকেট লিগে ৯ ইনিংস ব্যাটিং করে ৪৭৫ রান তুলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। অথচ সেই তাকেই সুযোগ দেওয়া হয়নি লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াডে।
এছাড়া জাকির হাসান জাতীয় লিগে ৬ ইনিংস ব্যাটিং করেছেন। বিসিএল ও জাতীয় লিগ মিলিয়ে মাহমুদুল হাসান জয় খেলেছেন ৬টি ইনিংস। শাহাদাত হোসেন দীপু খেলেছেন চারটি ইনিংস। যারা খেলেছেন, তাদের মধ্যে কেউই সফল হতে পারেননি। মূলত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কাঠামোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিস্তর পার্থক্য থাকার কারণেই মূলত এই ব্যর্থতা। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান আরও বাড়ানোর তাগিদ দেখিয়ে বললেন, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের উইকেট যদি আরেকটু ভালো হয়, (আন্তর্জাতিক অঙ্গনে) যেরকম কন্ডিশনে আমরা খেলবো, সেই চ্যালেঞ্জগুলো যদি মোকাবিলা করতে পারি তাহলে খুব ভালো হয়।’
মানসম্পন্ন ম্যাচ খেলার মাধ্যমে নিজেদের উন্নতির বিকল্প দেখেন না তিনি, ‘আমার কাছে এখনও মনে হয় আমরা যেরকম চ্যালেঞ্জ এখানে (আন্তর্জাতিক) মোকাবিলা করি, ওইরকম কোয়ালিটি ম্যাচ সেখানে (প্রথম শ্রেণি) আমরা খেলতে পারি না। আমাদের খেলোয়াড়রা যদি আরও ম্যাচ খেলতে পারে আন্তর্জাতিকের সঙ্গে, তাহলে অবশ্যই ভালো হবে। যত বেশি ম্যাচ খেলবো, কিছু না কিছু তো উন্নতির জায়গা থাকেই।’
স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেই অর্থে কঠিন কোনও বোলারকে মোকাবিলা করতে হয় না। ফলে কঠিন পরীক্ষা পুরোটাই দিতে হয় জাতীয় দলে এসে। নিয়মিত জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটারদের জন্য কাজটা সহজ হলেও তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য মানিয়ে নেওয়াটা খুব কঠিন। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তুলনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের ফার্স্ট ক্লাস ও ইন্টারন্যাশন্যাল খেলার কতটুকু মান? একই লেভেলের আছে কি না। আমি চর্চার ভেতরে থাকি, আমার সঙ্গে একটা জুনিয়র প্লেয়ারের অনেক তফাত আছে।
আমি আজকেসহ ৬১টা টেস্ট ম্যাচ খেলছি। টেস্ট ম্যাচ খেলার পর আমি পরিস্থিতি বুঝি কীভাবে সামাল দিতে হয়। কোনও সময় পারি, কোনও সময় পারি না। কিন্তু শুনতেও খারাপ লাগবে, আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট আর ইন্টারন্যাশন্যাল টেস্ট ম্যাচ খেলা অনেক কঠিন।’ তবে এই ঘাটতি পূরণে ‘এ’ দলের সফর আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখছেন শান্ত, ‘আমার কাছে যে জিনিসটা সবচেয়ে কার্যকরী মনে হবে তখনই, যখন আমরা কোনও সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে ওই জায়গায় যেন এ টিমের সঙ্গে বাংলাদেশ এ টিম পাঠাতে পারি। তাহলে যে সকল খেলোয়াড় শুধু টেস্ট খেলছে বা যারা শুধু একটা দুইটা ফরম্যাট খেলে, তারা যদি আগে ম্যাচ খেলতে পারে তাহলে আমার মনে হয় ভালো হবে।’
শান্ত আরও যোগ করে বলেছেন, ‘কন্ডিশন ও প্রস্তুতি ভালো হবে। যারা তিন ফরম্যাটে খেলে, তাদের জন্য কঠিন। তাদের মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। যারা শুধু টেস্ট খেলে যদি আমরা এ টিম পাঠাতে পারি, তাহলে এই জায়গাটাতে মনে হয় আরেকটু উন্নতি হবে।’
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা