অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে চারে নেমে সবচেয়ে বেশি রান মুশফিকুর রহিমের। বিপিএলে তো এখানে তার ধারেকাছে কেউ নেই। তার যে অভিজ্ঞতা ও সাফল্য, তাতে এই পজিশন থেকে তাকে সরানো কঠিন। কিন্তু এবারের বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সে তিনি নিজেই ব্যাটিং অর্ডারে নিচে নেমে ওপরে ব্যাট করার সুযোগ দিচ্ছেন তরুণদের। মুশফিকের প্রতি তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না জাকির হাসান। আসরের শুরুটা এবারও চারে নেমেই করেছিলেন মুশফিক। সেই ম্যাচে জাকির ব্যাট করেন তিনে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে সেদিন জাকির আউট হয়ে যান ক্যামিও ইনিংস খেলে, পরে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন মুশফিক। পরের ম্যাচ থেকে টানা তিন ম্যাচে তিনে দেখা যায় তৌহিদ হৃদয়কে, চারে জাকির। সুযোগটা কাজে লাগান দুজনই। ৬৫ গড়ে ও ১৬৬ স্ট্রাইক রেটে ১৯৫ রান করে প্রথম দফার ঢাকা পর্বের সর্বোচ্চ রান স্কোরার হৃদয়। জাকির চারে নেমে বড় ইনিংস এখনও তেমন খেলতে পারেননি। তবে ২১ বলে ২৭, ১৮ বলে ৪৩, ১০ বলে ২০, টি-টোয়েন্টির দাবি মিটিয়ে কার্যকর ইনিংস তিনি খেলেন। ২০ ওভারের ক্রিকেটে জাকিরের ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১১৬.৯৩। কিন্তু এই বিপিএলে তার স্ট্রাইক রেট ১৭৫.৪৩। সিলেটের টপ অর্ডারে নিয়মিত ব্যাট করছেন নাজমুল হোসেন শান্তও। ব্যাট হাতে ধারাবাহিক তিনিও। বিপিএলে কোনো দলের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিনজনই দেশের তরুণ ক্রিকেটার এবং তারা টানা সুযোগ পাচ্ছেন, বিপিএলে এমন কিছু বিরল। ঢাকা ডমিনেটর্সের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সিলেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, মুশফিকের চাওয়াতেই এই পরিবর্তন হয়েছে। চট্টগ্রাম পর্বে দলের প্রথম অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জাকির বললেন, মুশফিকের এমন ভরসা অর্জন তার কাছে গর্বের উপলক্ষ। “এটা আসলে সম্মানের। মুশফিক ভাইয়ের মতো ক্রিকেটার ওঁর জায়গা ছেড়ে আমাকে সুযোগ করে দিচ্ছেন। আসলে এটা বলার মতো ভাষা নেই। ওঁর কাছ থেকে এই জিনিস পেয়ে খুব ভালো লেগেছে।” “এর আগেও পেয়েছিলাম, রাজশাহীতে যখন খেলেছি, চারে ব্যাট করেছি। উনি সবসময়ই ফ্লেক্সিবল করে দিয়েছেন আমাদের জন্যৃ আমি, তৌহিদ হৃদয় বা আমরা যারা আছি। এই জিনিসটা খুবই ভালো লাগে। গর্ব হয়।” সুযোগটা পেয়ে তারা কাজে লাগাচ্ছেন, এই কৃতিত্ব তাদের। তবে হৃদয়-শান্ত-জাকিরদের এই সাফল্যের পেছনে দলের আবহের কথাও বলেছিলেন মাশরাফি যে, নিজেদের মেলে ধরতে দল থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে তাদের। জাকিরও বললেন অধিনায়ককে পাশে পাওয়ার কথা। “মাশরাফি ভাইয়ের নেতৃত্বে খেলতে সবসময় ভালো লাগে। ওঁর সঙ্গে আরও একবার খেলেছি, চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এবারও খুব ভালো লাগছে। কোনো চাপ নেই, উনি বলেছেন নিজের স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে। কোনো ভয় নেই।” এবার বিপিএলের আগেই ব্যাটসম্যানশিপের বড় চ্যালেঞ্জে অবশ্য উতরে গেছেন তিনি দারুণভাবেই। ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত ও কঠিন সংস্করণ টেস্ট ক্রিকেটে আবির্ভাবেই সাড়া জাগিয়েছেন রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে। পরে দ্বিতীয় টেস্টেও লম্বা সময় উইকেটে থেকে করেছেন ফিফটি। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের সাফল্যের পর নিজের সামর্থ্যে আস্থা তার আরও বেড়ে গেছে। “বিশ্বাস নিজের ওপর সবসময়ই ছিল। তবে আমার মনে হয় দুইটা টেস্ট খেলায়, ভারতের বোলারদের মুখোমুখি হওয়ায়, একটু আত্মবিশ্বাস এসেছে নিজেদের মধ্যে। সব মিলিয়ে আর কী, নিজের বিশ্বাস ছিলই, ওই অভিজ্ঞতা হওয়ায় একটু ভালো হয়েছে মনে হয়।” ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তিনি ব্যাটিংয়ে ছিলেন ধৈর্য্যরে প্রতিমূর্তি। বলের পর বল ছেড়েছেন আর মাথা নিচু করে ডিফেন্স করেছেন। নিজেকে সংবরণ করেছেন ফাঁদে পা দেওয়া থেকে। কদিন পরই পুরো ভিন্ন ঘরানার ক্রিকেটে তিনি নিজেকে উপস্থাপন করে চলেছেন ভিন্ন রূপে। উইকেটে গিয়েই শট খেলছেন, টাইমিং আর পেশির জোর দেখাচ্ছেন। জাকির বললেন, মানসিকতা আর স্কিলের উন্নতি মিলিয়ে সব সংস্করণের জন্য নিজেকে উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করছেন তিনি। “সাদা বলে খেলেছি অনেক, আগেও কয়েকটা বিপিএলে খেলেছি। কিছুটা হলেও পরিস্থিতি জানি। আসার আগে (এই টুর্নামেন্টে) কিছুদিন অনুশীলন করেছি। মানসিকতা ছিল দলের জন্য যতটা ভালো খেলা যায়।” “চেষ্টা করছি প্রতিটি দিন উন্নতি করতে, প্রতি ফরম্যাটে, প্রতি খেলাতে উন্নতি করতে। ওই লক্ষ্যেই অনুশীলন করেছি যেন সব ফরম্যাটেই ভালো করা যায়।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা