গত এক সপ্তাহ ধরে মেহেরপুর জেলায় বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতিদিনই ৪২ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ওঠানামা করছে তাপমাত্রা।
দিন ও রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ বেশি অসুস্থ হচ্ছে। পেটের পীড়া, ঠান্ডা জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, পানিশূন্যতা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বাড়ছে হিট স্ট্রোকের রোগীও।
তীব্র গরমে মেহেরপুরের হাসপাতালগুলোতেও প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট।
রবিবার (২১ এপ্রিল) মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, বেড না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সাজ্জাদ বলেন, গত এক সপ্তাহে ১ হাজার ৩১৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। ২১০ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছে।
মেডিসিন ও গাইনি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৫০ নারী। শিশু ওয়ার্ড ভর্তি ২৪০ জন। ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৫৫ জন শিশু।
এছাড়া উন্নত চিকিৎসা নিতে অন্য হাসপাতালে ১০ জনকে রেফার্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরএমও আরও জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে পুরুষ বিভাগে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে মারা গেছে ৬ জন রোগী। এছাড়া সার্জারি বিভাগে ভর্তি হয়েছে ৫০ জন। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩১১ জন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আব্দুল্লাহ মারুফ বলেন, এক সপ্তাহে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ১১২ জন, নারী ১৪৬ জন ও পুরুষ ৯৪ জন। এসব রোগীরা অধিকাংশই চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রোগীদের মধ্যে বৃদ্ধ ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক আহসান হাবিব জানান, গত এক সপ্তাহে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক রোগী।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার মুঠোফোনে বলেন, গরম বাড়ায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকগণ কাজ করছেন।
বেডের সমস্যা থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষধের সংকট নেই বলে জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। এখন তা অতি তীব্র তাপদাহে রূপ নিয়েছে। এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
এই গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতেও নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি