নিজস্ব প্রতিবেদক:
ছয় বছরে প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ, আর মেয়াদ বাকি আছে এক বছরের খানিক বেশি। এতে স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে- এক বছরে কাজ আর কতদূর এগোবে? এমনই পরিস্থিতি ১৯০ কিলোমিটারের এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পটির। যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয় ২০১৪ সালে আর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। কথা ছিল, ২০২১ সালের আগস্টে কাজের ইতি টানা হবে। কিন্তু মেয়াদ পার হলেও এখন পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি মাত্র ৪৫ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ, বাড়ানো হয়েছে খরচও। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এখন ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা বেড়ে তা ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। কাজ শেষ করার নতুন সময় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর। এদিকে ৮ বছর আগের করা পরিকল্পনাও এখন আর থাকছে না। প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আদলে নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও এখন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের আদলে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। এজন্য আগের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় নতুন নতুন অবকাঠামোও সংযোজন করা হয়েছে। নতুন করে যানবাহনের গতিবেগ ধরা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার। ২০১৪ সালে যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয় তার কিছুই এখন প্রকল্পে রাখা হচ্ছে না। চলমান প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানা ধরনের দুর্বল দিক ও ঝুঁকি রয়েছে। সরকারের প্রকল্প তদারকি প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের যথাযথভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নকালে বারবার নকশা পরিবর্তন এবং নকশায় নতুন অবকাঠামো সংযোজন করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে দীর্ঘসূত্রতা এবং ইউটিলিটি স্থাপনা স্থানান্তর সংক্রান্ত জটিলতা দেখা গেছে। এ ছাড়া ভূমিকম্প ও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে নির্মাণাধীন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বগুড়া, গোবিন্দগঞ্জ ও রংপুর জেলার বেশ কিছু স্থানে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হয়নি। প্রকল্প চলাকালে নির্মাণসামগ্রীর দামের ঊর্ধ্বগতি এবং নতুন শুরু হওয়া প্যাকেজসহ বেশ কিছু প্যাকেজের নির্মাণ কাজে ধীরগতি দেখা গেছে। ফলে বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে নির্মাণাধীন গুরুত্বপূর্ণ ফোর লেনটির। সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়রা। একইসঙ্গে সুফল পাচ্ছেন না উত্তরবঙ্গবাসী। প্রত্যেক ঈদের সময় এই পথেই তৈরি হয় ভয়াবহ জটলা। তবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি আইএমইডি’র এমন রিপোর্ট প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়েছে। একেক জন একেকভাবে চিন্তা করে এটা হয়েছে। ২০১৪ সালের চিন্তা মাথায় রেখে ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়েছে। এখন চলছে ২০২২। ২০১৪ সালের বাংলাদেশ আর ২০২২ সালের বাংলাদেশ এক নয়। ২০১৪ সালের পরিকল্পনায় চলমান প্রকল্পে অনেক ব্রিজ, রেলওয়ে ব্রিজ, আন্ডারপাস ছিল না। এমনকি ফ্লাইওভারও ছিল না। আমরা দেখেছি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়েছে। এতে সবার চোখ খুলে গেছে। তাই নতুন করে এলেঙ্গা-রংপুর ১৯০ কিলোমিটার ফোর লেন এক্সপ্রেসওয়ের আদলে তৈরি করবো। এজন্য নানা ধরনের অবকাঠামো সংযোজন করা হবে। টাঙ্গাইল থেকে রংপুর কোনো বাধা থাকবে না। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথমে জমি অধিগ্রহণ দেড়গুণ দেওয়া হতো। এখন এটা বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। এসব কারণেই মূলত ব্যয় বেড়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৬১ মিটার দৈর্ঘ্যরে ২৬টি সেতু, ৪১১ মিটারের একটি রেলওয়ে ওভারপাস ও ১১টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এলেঙ্গায় ১ হাজার ৫৩৮ মিটার, কড্ডার মোড়ে ৩৯৬ মিটার ও গোবিন্দগঞ্জে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু ইপিজেড ও গোবিন্দগঞ্জ পলাশবাড়ী এলাকায় নতুন করে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ যোগ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় রুটের উভয়পাশে স্লো মুভিং ভেহিকেল ট্রাফিক (এসএমভিটি) লেন নির্মাণ করা হবে। জানা গেছে, ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে আগস্ট ২০২১ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়ায় ডিসেম্বর ২০২৪ সাল নাগাদ। আইএমইডি জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুযায়ী প্রকল্পের অনুকূলে ব্যয় পরিকল্পনা ছিল ৩ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। এডিপি বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এডিপি বরাদ্দের বিপরীতে এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত ব্যয় হয় ১ হাজার ৩১৪ কোটি বা ৫৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। অর্থাৎ শুধু এক অর্থবছরে ৪৩ দশমিক ৮১ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে। এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত বাস্তব অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা যা মোট ব্যয়ের ৩৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। উল্লেখ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) এবং বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক করিডোরে (বিসিআইএম) নতুন করে বাংলাদেশের ৮টি মহাসড়ক যুক্ত হচ্ছে। এই সড়কগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০০ কিলোমিটার। ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি এরই একটি অংশ।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি