April 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, October 23rd, 2022, 9:26 pm

মোটরসাইকেল চালকদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে নিম্নমানের হেলমেট

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি ঘটে তার বড় একটি অংশজুড়ে থাকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় গত সেপ্টেম্বর মাসে নিহত হয়েছেন ৪৭৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৯৪ জন। নিহতের ৩৫ শতাংশের বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। এজন্য মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের নিরাপত্তার স্বার্থে হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে ২০১৮ সালে আইন প্রণয়ন করা হয়। যদিও চালকরা হেলমেট ব্যবহার করছেন, কিন্তু তার ৮৯ শতাংশই অনিরাপদ ও পুরোপুরি মানসম্মত নয়। হেলমেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজেদের নিরাপত্তার চেয়ে চালকরা পুলিশি ঝামেলা এড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে শুধুই আইন রক্ষার তাগিদে হেলমেট পরছেন অধিকাংশ চালক। রাইড শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রেও দেখা যায় একই চিত্র। আইন করে হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও দেশে মানসম্মত ও নিরাপদ হেলমেটের ব্যবহার কম। এ ছাড়া আইনেও রয়ে গেছে ফাঁকফোকর। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর ৯২ (১) ধারায় বলা আছে, ‘মোটরযান চলাচলের সময় হেলমেট ব্যবহার না করলে তিন মাসের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দন্ডে-দন্ডিত  হবেন।’ তবে হেলমেট ব্যবহার না করলে আইনে একাধিক শাস্তির কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে শুধু জরিমানা করা হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া আইনে হেলমেট ব্যবহার না করার বিষয়ে জরিমানার বিধান থাকলেও মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ফলে মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারে অনীহা চালকদের। আইনে কিছু বলা না থাকায় চালকরা সুযোগ বুঝে অজুহাত দেখাচ্ছেন। তারা বলছেন, মানসম্মত হেলমেট কিনতে বেশি খরচ হয়। অথচ প্রায়ই হেলমেট চুরি হয়। আবার ভারী হেলমেট ব্যবহারে অতিরিক্ত গরম লাগে। কম দূরত্বে চলাচলে এমন হেলমেট ব্যবহার করা কষ্টসাধ্য। ফলে তারা কম দামের হেলমেট কেনা এবং ব্যবহারে ঝুঁকছেন। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্র (এআরআই) ঢাকায় মোটরসাইকেলচালক ও আরোহীদের হেলমেট ব্যবহার বিষয়ে যৌথ গবেষণা করেছে। ২০২১ সালে করা ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে চলাচল করা মোটরসাইকেলের ৯৮ শতাংশের চালক ও আরোহী হেলমেট ব্যবহার করেন। তবে ফুল ফেস ক্লোজড অর্থাৎ মুখম-ল ও মাথা ঢাকা হেলমেট ব্যবহার করেন ৮ শতাংশ চালক ও আরোহী। ওপেন ফেস বা হ্যাট ধরনের হেলমেট পরেন ২৪ শতাংশ। আর হাফ ফেস হেলমেট পরেন ৬৫ শতাংশ চালক। অর্থাৎ অনিরাপদ ও পুরোপুরি মানসম্মত নয় এমন হেলমেট পরেন ৮৯ শতাংশ চালক। তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ চালক শুধু পুলিশের ঝামেলা এড়াতে এবং মামলা থেকে বাঁচতে হেলমেট পরেন। পাশাপাশি সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও সার্জেন্টরা হেলমেটবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও মানের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার সুযোগ পান না। অনেক সার্জেন্ট এবং ট্রাফিক সদস্য মনে করেন, যেখানে হেলমেট পরা নিশ্চিত করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে হেলমেটের মান নিশ্চিত সম্ভব নয়। এদিকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) বাধ্যতামূলক মান পরীক্ষার তালিকায় যে দুই শতাধিক পণ্য রয়েছে, তার মধ্যে হেলমেট একটি। ফলে নির্ধারিত মান অনুযায়ী হেলমেটের উৎপাদন ও আমদানি হওয়ার কথা। তিন স্তরবিশিষ্ট হেলমেটে বিএসটিআইয়ের মানচিহ্নও থাকার কথা। তবে সড়কে চলাচল করা মোটরসাইকেলের অধিকাংশ চালক মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করছেন না। নিম্নমানের হেলমেট আমদানিতে বিএসটিআই নিষেধাজ্ঞা দিলেও দেদারসে তা আমদানি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আমদানিকারকরা বলছেন, ভালো মানের হেলমেটের পাশাপাশি নিম্নমানের হেলমেটও আমদানি করা হয়। কারণ বাজারে নিম্নমানের হেলমেট বেশি বিক্রি হয়। সম্প্রতি বিএসটিআই হেলমেটের মান নিশ্চিতে নীতিমালা করলেও আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। ফলে আমদানি করা অনেক হেলমেট বন্দরে আটকে রেখেছে সংস্থাটি। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নিম্নমানের হেলমেট আমদানি না করতে আমদানিকারকদের বার বার সতর্ক করা হয়েছে। এমনকি পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নীতিমালা প্রণয়নের আগে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছে। বাজারে যতই চাহিদা থাকুক, নিম্নমানের হেলমেট আমদানির সুযোগ নেই। বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজুল হক বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। আমদানিকারকদের বার বার সতর্ক করেছি আমরা। এখন নিম্নমানের হেলমেট আমদানির সুযোগ নেই। যেগুলো আগেই আমদানি করা হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত অভিযানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের জেল জরিমানাও করছি। নীতিমালা পাস হওয়ার পরও একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। তারপরও যদি কেউ মানহীন হেলমেট আমদানি করে, সেটা মেনে নেওয়া হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএসটিআইকে হেলমেটের গুণগত মান যাচাইয়ের কাজ আরও কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। শুধু দায় এড়ানোর জন্য দু-একটা অভিযান চালালে হবে না। কঠোর মনিটরিং করলেই বাজারে নিম্নমানের হেলমেট কমে যাবে। পাশাপাশি ক্রেতাদেরও সচেতন হবে। একটু খরচ বেশি হলেও তিন স্তরবিশিষ্ট হেলমেট কিনতে হবে।