জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :
মৌলভীবাজার জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরীক্ষাযন্ত্র এমআরআই এবং এক্সরে মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। প্রায় একবছর ধরে এমআরআই ও গত তিন মাস ধরে এক্স-রে মেশিন মেরামতের অভাবে নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে হাসপাতালে আসা অনেক রোগীরা এক্স-রে এবং এমআরআই পরীক্ষা করাতে না পেরে ফেরত যাচ্ছেন। আবার জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে অনেককেই হাসাপাতালের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক্স-রে ও এমআরআই করাতে হচ্ছে। এতে যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা তেমনি আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হচ্ছেন তারা। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, এক্স-রে ও এমআরআই মেশিন নষ্ট থাকায় সেটি চালানোর অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের এমআরআই ও এক্স-রে রুমটি বন্ধ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক্স-রে মেশিন নষ্ট থাকায় রোগী নিবন্ধন কেন্দ্রে ও এক্স-রে রুমে সাময়িক বন্ধ থাকার কথা কাগজে বিজ্ঞপ্তি আকারে টাঙিয়ে রেখেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে বহিঃবিভাগে প্রতিদিন ৮০০-১০০০ রোগী চিকিৎসা নেন। পাশাপাশি নারী শিশুসহ ২৫০-৩০০ রোগী ভর্তি থাকেন। তাদের মধ্যে আবার সড়ক দূর্ঘটনা ও মারামারির ঘটনায় আহত অনেক রোগী থাকেন। এছাড়া বুকের সমস্যায় ভুক্তভোগী রোগী যাদের চিকিৎসা শুরু করতে হয় এক্স-রে ফিল্ম রিপোর্ট দেখে। কিন্তু গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকার মূল্যের অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট হয়। এখন তা অচল পড়ে আছে। সেই থেকে হাসপাতালে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীরা এক্স-রে করাতে পারছেন না। এতে রোগীদের সময় ও অর্থ নষ্ট হচ্ছে। যাদের এক্স-রে করা জরুরি, তারা হাসাপাতালের বাইরের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক্স-রে করছেন। এদিকে গত বছরের মে মাস থেকে প্রায় ১৭ কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিনটিও মেরামতের অভাবে নষ্ট রয়েছে। যার কারণে হাসপাতালে এসে এমআরআই পরীক্ষা না করতে পারা রোগীরা শহরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে পরীক্ষা করাচ্ছেন। এতে তারা আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
সম্প্রতি ঘরের সিঁড়িতে পড়ে কোমড়ে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন সদর উপজেলার জগতপুর জামে মসজিদের খতিব তৈমুছ আলী (৫২)। হাসপাতালের বিভাগীয় চিকিৎসক জানিয়ে দিলেন এক্স-রে করে নিয়ে আসতে। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন নষ্ট থাকায় তিনি শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে এক্স-রে করাতে ৫০০ টাকা লাগবে শুনে অবাক হয়ে গেলেন। তাঁর দাবি, সদর হাসপাতালে এক্স-রে করতে মাত্র ১৫০ টাকা লাগে।
একইভাবে ফাতেমা জান্নাত নামক এক সদ্য নিয়োগ পাওয়া সরকারি চাকুরীজীবি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালে আসলে তাকেও এক্সরে করতে পাঠানো হয়। তৈমুছ আলী, ফাতেমা জান্নাতের মতো অসংখ্য রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা করতে এসে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। একই সাথে গুনছেন বাড়তি টাকা।
হাসপাতালে আসা পৌর এলাকার বাসিন্দা সঞ্জিত দাস অভিযোগ করেন, এখানে কমিশন বাণিজ্যে আছে। তাই এই এক্স-রে মেশিন সহজে ঠিক হবে না। শহর ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেগুলো চলতে হলে এটি বন্ধ থাকা দরকার। আর এতে নিয়মিত কমিশন পাচ্ছেন এখানের ডাক্তাররা।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ কে এম হুমায়ুন কবির এক্স-রে মেশিন ও এমআরআই মেশিন নষ্ট থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যুৎ এর ত্রুটির জন্য এক্স-রে রুমে স্টেবিলাইজার নষ্ট হওয়ার কারণে এক্সরে মেশিনটিও নষ্ট হয়ে যায়। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে একটি টেকনিশিয়ান টিম হাসপাতালে এসে শুধু স্টেবিলাইজারটি ঠিক করে গেছেন। আগামী সপ্তাহে এক্স-রে মেশিনটি ঠিক করার পর আশা করছি দ্রুত এক্স-রে মেশিনটি পুনরায় চালু হয়ে যাবে।’ তিনি আরো বলেন, গত বছরের মে মাস থেকে এমআরআই মেশিনটি নষ্ট হয়ে রয়েছে। এটি ঠিক করতে প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো খরচ হবে। মেশিনটি মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে মেশিনটি ঠিক করার জন্য সভায় সিদ্ধান্তও হয়েছে শুনেছি। সেটির টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। আর এক্স-রে ও এমআরআই পরীক্ষায় কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযোগটি সত্য নয়। হাসপাতালের ডাক্তাররা সরকারি নিয়ম মেনেই দায়িত্ব পালন করছেন।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ এমআরআই ও এক্স-রে মেশিনটি সচল করতে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত মেশিনগুলো সচল করা হবে এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি কমবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি