দেশের প্রচলিত মৌলিক আইনের বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ (অথেনটিক টেক্সট) প্রণয়ন ও প্রকাশে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ কমিটিকে অবিলম্বে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদেশে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ অ্যান্ড ড্রাফটিং উইংয়ের একজন, বাংলা একাডেমির একজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বাংলা বিভাগ থেকে একজন করে এবং আইন কমিশনের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে এ কমিটি করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে এই কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর করা রিটের শুনানি শেষে এই আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
আদেশের পর শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, যেসব মৌলিক আইনের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোর নির্ভরযোগ্য কোনো বাংলা পাঠ প্রণয়ন নেই। যা কিছু আছে সবই ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ইংরেজিতে।
তিনি বলেন, ইদানিং রায় বাংলায় লেখার কথা বলা হচ্ছে। আদালতের কার্যক্রম বাংলায় পরিচালনার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু মৌলিক আইনসমূহের তো কোনো বাংলা নেই। ফলে বাংলায় রায় লিখতে গিয়ে একেক জন একেক সময় একেকটি শব্দ ব্যবহার করছেন। যা রায় ব্যাখ্যা করতে গেলে অসঙ্গতি ও অসামঞ্জ্যতা দেখা যাচ্ছে। এজন্য মৌলিক আইনের বাংলা প্রণয়ন হলে নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। আদালত বলেছেন, এটা একটা ঐতিহাসিক কাজ। এটা অনেক বড় ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আদালতের নির্দেশনার মাধ্যমে এটা শুরু করছি। বাকিটা সময়ে সময়ে কমিটির অগ্রগতি রিপোর্টের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
এর আগে ২০২২ সালের ১৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়েছিলেন। রুলে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় অর্থবহভাবে বাস্তবায়ন করতে দেশের প্রচলিত মৌলিক আইনের বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রণয়ন ও প্রকাশে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছিলেন।
রিটের আগে এই ১০ আইনজীবী নোটিশ দিয়েছিলেন। নোটিশে বলা হয়, আদালতের যাবতীয় কার্যাবলি আইনের আলোকে পরিচালিত হয়। আদালতের কার্যক্রমসংক্রান্ত মৌলিক আইনগুলো হলো— দণ্ডবিধি- ১৮৬০, সাক্ষ্য আইন- ১৯৭২, চুক্তি আইন-১৮৭২, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন-১৮৭৭, সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট-১৮৮৭, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন-১৮৮২, ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ দেওয়ানি কার্যবিধি-১৯০৮ এবং তামাদি আইন-১৯০৮।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (আপিল বিভাগ) রুলস-১৯৮৮, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) রুলস-১৯৭৩, ক্রিমিনাল রুলস এ- অর্ডারস-২০০৯, সিভিল রুলস এ- অর্ডারস। অধিকাংশ আইন ব্রিটিশ আমলে এবং ইংরেজি ভাষায় প্রণীত।
নোটিশে আরও বলা হয়, আদালতে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এসব আইনের গুরুত্ব ও ব্যবহার সর্বাধিক। এ আইনগুলোর বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রণয়ন ও প্রকাশ ব্যতীত আদালতের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের আইনি বিধান সম্পূর্ণ অর্থহীন এবং অযৌক্তিক। এখন পর্যন্ত এসব মৌলিক আইনের কোনো নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ প্রণয়ন করা হয়নি। সর্বস্তরে বিশেষত আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের স্বার্থে উক্ত মৌলিক আইন সমূহের বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠপ্রকাশ অত্যাবশ্যক।
এমতাবস্থায় মৌলিক আইনগুলোর বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ (অথেনটিক টেক্সট) প্রকাশে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে নোটিশে অনুরোধ জানানো হয়।
রিটকারী আইনজীবীরা হলেন— মোস্তাফিজুর রহমান, মীর ওসমান বিন নাসিম, মো.আসাদ উদ্দিন, মোহা. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আব্দুস সবুর দেওয়ান, আল রেজা মো. আমির, আব্দুল্লাহ হিল মারুফ ফাহিম, জি এম মুজাহিদুর রহমান ও মো. জহিরুল ইসলাম। এরপর নোটিশের জবাব না পেয়ে ২০২২ সালে হাইকোর্টে রিট করেন তারা।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু
নেপালে ভয়াবহ বন্যা, ভূমিধসে মৃত্যু বেড়ে ১৯২