April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, July 14th, 2022, 9:49 pm

মৌসুমী বৃষ্টির ঘনঘটাতে দীর্ঘায়িতের শঙ্কায় বন্যা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মৌসুমী বৃষ্টির ঘনঘনটাতে দেশের বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা বাড়াচ্ছে। চলতি জুলাই মাসেই দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। মূলত উজানে ও দেশের অভ্যন্তরের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণেই বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আর এ মাসেই বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দু’টি মৌসুমী লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। তার মধ্যে একটি মৌসুমী নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। ফলে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতি আরো দীর্ঘস্থায়ী বা প্রলম্বিত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আবহাওয়া বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
মংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিলেট-সুনামগঞ্জ-নেত্রকোণাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলে এবং মধ্যাঞ্চলেও বন্যার পানি না নামতেই চলতি মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে আবারো বন্যার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। উজান থেকে ভারতের ঢলে গত এপ্রিলের গোড়াতে দেশের হাওর অঞ্চলে বন্যা শুরু হয়। তারপর থেকে উত্তর-পূর্ব, উত্তর-মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা এলাকাভেদে এক থেকে তিন দফায় বন্যা কবলিত হয়েছে। এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ বন্যায় পানিবন্দী। অনেক জেলা-উপজেলা-জনপদে বানের পানি ধীরে নামছে। নদ-নদী রয়েছে উত্তাল। ভাঙছে নদীতীরের অনেক গ্রাম-জনপদ।
সূত্র জানায়, এবার বর্ষার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু জুনের গোড়াতে আগমনের সাথে সাথেই সক্রিয় ও জোরদার হয়। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকাবস্থায়ও সম্প্রতি কিছুটা দুর্বল হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে ভ্যাপসা গরমে আবহাওয়ায় বিরাজমান থাকবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের আবহাওয়া বিভাগের মতে, বর্তমানে উত্তর বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের উপর একটি ঘূর্ণি বায়ু প্রবাহের চাপ বলয় বিরাজ করছে। তাছাড়া উত্তর উড়িষ্যা উপকূল অবধি একটি লঘুচাপের বলয় তৈরি হয়েছে। তার প্রভাবে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে মৌসুমী মেঘ-বৃষ্টিপাত ক্রমেই বাড়তে পারে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতে এবং তার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও ভারী বর্ষণের আভাস রয়েছে। আর বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্ষারোহী মৌসুমী বায়ুর একটি বলয় ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। তার একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র অতিসম্প্রতি বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে উজানের নদ-নদী অববাহিকাসমূহের অনেক স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। বাংলাদেশের এবং উজানের অববাহিকায় ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের উপর বর্ষার মৌসুমী বায়ু সক্রিয় অবস্থা থেকে বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে কিছুটা সময় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। তবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে। ওই সময়ে ওই অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা নেই। আর ভারতের মেঘালয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি সময় বিশেষে অপরিবর্তিত থাকতে পারে। উজানে হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে স্বল্পমেয়াদী ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তখন বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। পদ্মা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মধ্য-জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।
অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে আবহাওয়া বিভাগের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির দেয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, চলতি জুলাই মাসে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২ দিন বিদ্যুৎ চমকানোসহ মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় সংঘটিত হতে পারে। তাছাড়া, সারাদেশে ২ থেকে ৩ দিন বজ্রঝড় হতে পারে। এ মাসে বিচ্ছিন্নভাবে মৃত্যু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। গেল জুন মাসে দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিক (৩.৬ শতাংশ বেশি) বৃষ্টিপাত হয়েছে।