অনলাইন ডেস্ক :
ম্যালেরিয়ার প্রথম টিকার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ ছাড়া ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে অক্সফোর্ডের আরো একটি টিকা। আফ্রিকান অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব রোধ করতে এই টিকার অনুমোদন দেয়া হলো। শতাব্দী ধরে ম্যালেরিয়ার সাথে যুদ্ধ করছে মানুষ। মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়ায় বিশ্বে প্রতিবছর ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষ করে আফ্রিকার সাব-সাহারা এলাকায় প্রতিবছর পাঁচ বছরের কমবয়সী আড়াই লাখের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়। তবে, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে আরটিএস, এস অথবা মসকিউরিক্স নামের এই টিকা উদ্ভাবনে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ চলছিলো। আফ্রিকান অঞ্চলে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ম্যালেরিয়ার মরণঘাতী প্লাজমোডিয়াম ফেলসিপারাম পরজীবী প্রতিরোধে গবেষণা চলছিল। পরবর্তীতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফলতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি পরজীবীবাহী রোগের প্রথম কোনও প্রতিষেধক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানম গ্রেব্রিয়েসাস বলেন, এটা একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। দীর্ঘ প্রতিক্ষিত ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক আবিষ্কারে শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে একধাপ এগিয়ে গেল বিজ্ঞান। এই টিকা প্রতিবছর লাখ লাখ শিশুর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হবে বলে জানান তেদরোস আধানম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যুক্তরাজ্যের ওষুধ কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের উদ্ভাবিত টিকার দীর্ঘ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেয়া গেছে, এই টিকা প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩ জনের রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম এবং চার বছর পর্যন্ত এর কার্যকারিতা ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত। প্রতিটি শিশুকে এর চার ডোজ টিকা নিতে হবে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর ঘানা, কেনিয়া ও মালাউয়িতে এর পাইলট প্রয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ওইসব দেশে ২০১৯ সাল থেকে ৮ লাখ শিশুকে এই টিকা দেয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পাঁচ মাস বয়স থেকে শুরু করে টিকার চারটি ডোজ নিলে শিশু মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। বর্তমানে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বছরে দু’বার ঘরে কীটনাশক ছিটানো এবং মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইংল্যান্ডের মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুকে ম্যালেরিয়ার টিকা দেয়া হয়েছে এবং পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তির হার ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ওষুধের তুলনায় মৃত্যু হার কমে ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত। ২০২০ সালের নভেম্বরে প্লস মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি মডেল গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকা বছরে ৫৩ লাখ শিশুর ম্যালেরিয়া সংক্রমণ রোধ করতে সক্ষম এবং পাঁচ বছর বয়সী ২৪ হাজার শিশুর জীবন রক্ষা করতে পারে। টাইমস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বৈশ্বিক টিকাদান কর্মসূচি গ্লোবাল অ্যালায়েন্স গাভি মনে করে, ম্যালেরিয়ার টিকার জন্য বিনিয়োগ সুফল বয়ে আনবে। যেসব দেশ ম্যালেরিয়ার টিকা নিতে চায়, তাদের জন্য টিকা সংগ্রহ শুরু করেছে তারা। গবেষণার পর্যায়ে থাকা অন্যান্য টিকাগুলোর মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত টিকার কার্যকারিতা ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর বলে দেখা গেছে। এটি ম্যালেরিয়ার একমাত্র টিকা যা ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য অর্জনে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হবে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, খুব শিগগিরই ব্যাপক আকারে এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ম্যালেরিয়ার দ্বিতীয় টিকাটি এর ব্যাপক চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২