অনলাইন ডেস্ক :
নির্মাতারা দর্শকের রুচি প্রাধান্য দিয়ে কনটেন্ট বানিয়ে থাকেন। কিন্তু গেল কয়েক বছরে নির্মাতা ভিকি জাহেদ তার কাজগুলো দিয়ে দর্শকের নতুন নতুন ধরনের গল্প দেখার রুচি তৈরি করেছেন। ব্যতিক্রমী সব গল্প দিয়ে বারবার নিজের নামের প্রতি সুবিচার করা এ নির্মাতা আবারও ক্যারিশমা দেখালেন তার পরিচালনায় ওয়েব ফিল্ম ‘রেডরাম’ বানিয়ে। ২ ঘণ্টা ১২ মিনিটের এই ওয়েব ফিল্মটি আসলে রহস্যে মোড়ানো। একটি ‘মার্ডার’কে কেন্দ্র করে গল্পের পরতে পরতে টুইস্ট আর টুইস্ট! শেষ দৃশ্য পর্যন্ত না দেখলে বোঝার কোনো উপায় নেই কেন হলো এই মার্ডার, কেই বা করলো! দর্শকদের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা একজন নির্মাতার স্বার্থকতা। যা খুব ভালোভাবেই উতরে গেছেন সময়ের জনপ্রিয় নির্মাতা ভিকি জাহেদ। সমালোচকরা বলছেন, এমন গল্পের কাজ সত্যি সত্যি আগে পাওয়া যায়নি দেশীয় নির্মাতাদের কোনো কনটেন্টে। আইএমডি-তে রেটিং উঠেছেন ১০-এ ৮.৩! কীভাবে তৈরি হলো এমন কনসেপ্ট? চ্যানেল আই অনলাইনকে ভিকি বলেন, বেডরুমে যদি স্বামীর লাশ পাওয়া যায় তাহলে, ‘কে খুনী হবে!’ একদিন গোসল করতে করতে একলাইনে মাথায় এই গল্পটা আসে এবং শুরুটা এখান থেকে হয়। আমার থ্রিলার গল্পের কাজ দেখার জন্য একটা দর্শক শ্রেণি তৈরি হয়েছে। তাই আমার প্রথম ওয়েব ফিল্মটি থ্রিলার গল্পের করি। যোগ করে ভিকি বলেন, ছোট থেকে থ্রিলার লেখকদের অনেক বই পড়েছি। ‘কে খুনী’ এই ধরনের গল্পে কাজ করতে আমার নিজেরও খুব মজা লাগে। গত অক্টোবর থেকে পুরো চারমাস এই কনটেন্ট তৈরিতে সময় দিয়েছি। দুইমাস ধরে গল্প ও স্ক্রিপ্টের কাজ করেছি; শুটিং করতে লেগেছে ১৬ দিন। বাকিটা পোস্ট প্রোডাকশন। চরকির উদ্যোগে নির্মিত ‘রেডরাম’ এ অভিনয় করেছেন আফরান নিশো, মেহজাবীন, মনোজ, সালহা নাদিয়াসহ অনেকে। চরিত্রগুলোতে প্রত্যেকেই স্ক্রিনে ছিলেন দুর্দান্ত। পাশাপাশি গল্পে সমানতালে দুটি জেনারেশনকে দারুণভাবে রূপ দিয়েছেন ‘পুনর্জন্ম’ খ্যাত নির্মাতা ভিকি। তিনি বলেন, নিশো ভাইকে কীভাবে ব্যতিক্রমী পুলিশ হিসেবে হাজির করবো এটা আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এফবিআই-তে এমন অনেক বিচক্ষণ পুলিশ আছেন, যারা কিছু না করে ঠা-া মাথায় শুধু কথা বলেই বের করে ফেলেন আসল ঘটনা। আমার বিশ্বাস আমাদের দেশেও এমন কিছু পুলিশ আছেন। গল্পের প্লটে দেখা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে সাসপেক্টদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে সিআইসি কর্মকর্তা নিশো অনেক কিছু বুঝে ফেলেন। কোনো ধরনের ‘মারদাঙ্গা অ্যাটিটিউড’ ছাড়াই তিনি আসল সত্য বের করে আনেন। একেবারে নিখুঁতভাবে নিশোকে এই চরিত্রে উপস্থাপন করেছেন ভিকি জাহেদ। তিনি বললেন, এজন্য আমাকে বাইরের বিভিন্ন লেখকদের প্রচুর বই পড়াশোনা করতে হয়েছে। স্ক্রিনে যেভাবে নিশো ভাইকে দেখিয়েছি পুরোটাই যুক্তিযুক্ত। প্রতিটি পদক্ষেপ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তাকে বিষয়গুলো দেখিয়েছিলাম। উনি দেখে খুবই ইমপ্রেসড হয়ে বলেছিলেন, বিদেশ থেকে তাদের ট্রেনিং করাতে এলে এসব বিষয়ে ট্রেনিং দেয়। আমরা যেভাবে দেখিয়েছি একেবারে সঠিক। প্রথমবার ওয়েব ফিল্মে কাজ করে মেহজাবীনও দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তিনি একজন অন্তঃসত্ত্বার চরিত্রে অভিনয় করেন। গল্প জুড়ে গ্ল্যামারহীন মেহজাবীন দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরেছেন। অন্তঃসত্ত্বাকালীন নারীদের চোখে মুখে রুক্ষতা ফুটে ওঠে। যে ছাপ এই অভিনেত্রীর অভিনয়ে ছিল স্পষ্ট ছিল। চরিত্রটিকে নিজ দক্ষতায় জীবন্ত করে তুলেন মেহজাবীন। অনেক দর্শক কাজটি দেখে মনে করছেন, এত কঠিন গল্পের কীভাবে সমাধান টানলেন ভিকি? উত্তরে তিনি বলেন, সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে দুটো জেনারেশনকে দুই লুকে একসঙ্গে পর্দায় দেখানো। আলহামদুলিল্লাহ, মনে হয় সেটা পেরেছি। বাংলাদেশের পাশাপাশি ইন্ডিয়া থেকে অনেক মানুষ কাজটি দেখে প্রশংসা করছে। “যখন গল্প লিখি দর্শকদের সাথে গেইম খেলি। সেই চাওয়ার জায়গা থেকে টুইস্টগুলো রাখি। থ্রিলার বানাতে গেলে দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে হবে। যেটা তারা ভাববে আসলে দেখা যাবে ঘটনা অন্যটা। গল্প লেখার সময় এই উত্তেজনাগুলো বারবার পর্যালোচনা করি।” ওটিটির জন্য বানানো এই কনটেন্ট দিয়ে ভিকি জাহেদ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পাচ্ছেন উল্লেখ করে বলেন, শুরুতে ভেবেছিলাম ওটিটির কনটেন্ট মানুষ কতটুকু দেখবে! কিন্তু ধারণা পাল্টে গেছে। মানুষ খুব বেশি করে এই কাজটি গ্রহণ করেছে। ইন্ডিয়া থেকেও প্রচুর দর্শক ফিডব্যাক জানাচ্ছেন। দর্শকদের টাকা দিয়ে দেখার কারণে এমন ভালো কনটেন্ট আগামীতে আরো হবে। তাই এই কাজগুলো বেশি বেশি সাপোর্ট করা উচিত।
আরও পড়ুন
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’
চিন্তিত অনন্যা পান্ডে
কনাকে নিয়ে সুখবর দিলেন আসিফ