April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, January 30th, 2023, 9:45 pm

যাত্রীসেবা ও ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা বাড়াতে পূর্বাঞ্চল রেলের বন্ধ স্টেশন চালুর উদ্যোগ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

লোকবল সঙ্কটে বন্ধ রয়েছে রেলওয়ে বিপুলসংখ্যক স্টেশন। তাতে যাত্রীসেবার মান কমে যাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি স্টেশন বন্ধ থাকায় ট্রেন দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে। তাছাড়া বাড়ছে স্টেশনে থাকা রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ চুরির ঘটনাও। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীসেবা ও ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা বাড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অর্ধশত বন্ধ স্টেশন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রেলওয়ে ৩ ধাপে বি-ক্যাটাগরির বন্ধ স্টেশনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২১টি স্টেশন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯টি ও সর্বশেষ তৃতীয় ধাপে ৮টি স্টেশন চালু করা হবে। রেল সংশ্লিষ্টদের মতে, রেলওয়েকে ঝুঁকিমুক্ত ও যাত্রীবান্ধব করতে যেকোনো উপায়ে দ্রুত বন্ধ স্টেশন চালু করা জরুরি। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলওয়ে লোকবল সঙ্কটে ২০০১ সালে প্রথম চট্টগ্রাম-গঙ্গাসাগর সেকশনের মস্তাননগর স্টেশন বন্ধ করে। আর ২০২২ সাল পর্যন্ত রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ৪৭টি বি-শ্রেণীর ও একটি ডি-শ্রেণীর স্টেশন বন্ধ করা হয়। তাতে যাত্রাপথে ট্রেনের সময়ক্ষেপণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রেলের রাজস্ব আয়েও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আর দীর্ঘ রেলপথের মাঝে একাধিক স্টেশন বন্ধ থাকায়বেড়েছে ট্রেন দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। পরিস্থিতি উত্তরণে ও রেলের সার্বিক সেবা কার্যক্রম বাড়াতেই দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকা স্টেশনগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। মূলত ইতোপূর্বে রেলকে বাণিজ্যিকীকরণের চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি নিয়োগ বন্ধ করে দিলে বি-শ্রেণীর স্টেশনগুলোতে ধারাবাহিকভাবে লোকবল সংকট শুরু হয়। স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত লোকবল অবসরে গেলেই শূন্য পদে নিয়োগ কিংবা বদলি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
সূত্র জানায়, বিগত ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি মোট ৭টি স্টেশন বন্ধ করা হয়েছে। আর ২০১০ ও ২০১৩ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬টি করে স্টেশন বন্ধ করা হয়েছিল। তাছাড়া ২০০৯ ও ২০১১ সালে ৫টি করে, ২০১৪ সালে ৪টি, ২০২০ সালে ৩টি স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২১ সালে ২টি করে এবং ২০০১, ২০০৩, ২০০৮ ও ২০১৭ সালে একটি করে স্টেশন রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছিল। চট্টগ্রাম-গঙ্গাসাগর সেকশনে সবচেয়ে বেশি ১১টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। আর আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার সেকশনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশনে ৮টি, আখাউড়া-ঢাকা ও ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ সেকশনের ৪টি, লাকসাম-চাঁদপুর সেকশনে ৩টি, ময়মনসিংহ-ঝারিয়াঝাঞ্জাইল-মোহনগঞ্জ সেকশনের ২টি, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট সেকশনের ২টি, লাকসাম-নোয়াখালী সেকশনের ২টি এবং জামালপুর টাউন জংশন-বঙ্গবন্ধু সেতুর (পূর্ব) ৩টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের অক্টোবর চট্টগ্রাম-নাজিরহাট সেকশনের ঝাউতলা স্টেশনটি বন্ধ করা হয়। তীব্র লোকবল সংকটের কারণে চট্টগ্রাম-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটের ওই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বি-ক্লাস একটি স্টেশনে ন্যূনতম ৩ জন স্টেশনমাস্টার থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বিভিন্ন স্টেশনে শুধুমাত্র একজন মাস্টার দিয়ে স্টেশন চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া স্টেশন পরিচালনায় ন্যূনতম ৩ জন পয়েন্টসম্যান (পি-ম্যান), একজন পোর্টার, একজন বুকিং সহকারী, ৩ জন গেটকিপার থাকা অত্যাবশ্যকীয়।
সূত্র আরো জানায়, রেলওয়ে শূন্য পদ পূরণে শিগগিরই আরো বিপুল পরিমাণ সহকারী পর্যায়ের স্টেশনমাস্টার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করছে রেলওয়ে। আর সাম্প্রতিক সময়ে ৫৫৭ জন সহকারী স্টেশনমাস্টার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া পূর্বাঞ্চল রেলের বিভিন্ন সেকশনে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে অনেক স্টেশনের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করতে না পারলেও সাম্প্রতিক সময়ে শেষ পর্যায়ে ওসব প্রকল্পের কাজও। এখন রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ ওই স্টেশনগুলো চালু ও নতুন নতুন ট্রেনের মাধ্যমে রেলের প্রান্তিক পর্যায়ের যাত্রীসেবা শুরু করতে চাইছে।
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রেলের বিভিন্ন স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে লোকবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে রেলের উন্নয়নে নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি লোকবল নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পূর্বাঞ্চলে রেলপথের একাধিক প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে চলে আসায় বন্ধ স্টেশনগুলো চালু করা হবে। আর সেগুলো চালু হলে সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি রেলের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।