নিজস্ব প্রতিবেদক :
যাত্রী চাপ সামলাতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে বহির্গমন যাত্রীদের জন্য যে জায়গা বরাদ্দ রয়েছে, তাতে একসঙ্গে কয়েকটি ফ্লাইটের যাত্রী প্রবেশ করলেই স্থান সংকুলান নিয়ে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এরই মধ্যে আরো দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস অভ্যন্তরীণ রুটে কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন অবস্থা যাত্রীসেবা বাড়াতে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের পরিধি আরো ৮ হাজার বর্গফুট বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বসরকারি দুটি এয়ারলাইনসের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সেজন্য এয়ারলাইনসগুলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালকেই মূল হাব হিসেবে ব্যবহার করছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আকাশপথে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে কয়েক বছর ধরেই যাত্রী বাড়ছে। একই সঙ্গে কার্যক্রমে আসছে আরো দুই বেসরকারি এয়ারলাইনস। ফলে অচিরেই শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমান অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যাত্রীদের স্থান সংকুলান করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমন অবস্থায় বেবিচক কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতের যাত্রী চাপ সামাল দিতে বর্তমান অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের ওপর ৮ হাজার বর্গফুটের আরো একটি বহির্গমন লাউঞ্জ নির্মাণের প্রকল্প শুরু করেছে। বেবিচকের ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রীসেবা লাউঞ্জ স্থাপনের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া বহির্গমন লাউঞ্জে নতুন করে ৮ হাজার বর্গফুট জায়গা যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য যুক্ত হচ্ছে। যার অর্ধেক বরাদ্দ থাকবে সাধারণ যাত্রীদের জন্য। সেখানে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা, ধূমপান এলাকা, ডায়াপার চেঞ্জিং স্টেশন, মাদারস কর্নার ও প্রার্থনাকক্ষ থাকবে। নতুন সংযুক্ত হতে যাওয়া ওই স্থানে প্রায় ৩০০ যাত্রী অপেক্ষা করতে পারবে। তাছাড়া বাকি অর্ধেক জায়গায় আন্তর্জাতিক মানের দুটি লাউঞ্জ স্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বেসরকারি খাতের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ও নভোএয়ার ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ফ্লাইট কার্যক্রমে আসার অপেক্ষায় রয়েছে এয়ার অ্যাসট্রা ও ফ্লাই ঢাকা। দুটি এয়ারলাইনসই বর্তমানে বেবিচকের এয়ারওর্দিনেস সার্টিফিকেট (এওসি) পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। বিগত ২০১৩ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৬ লাখ। যা কয়েক বছরের ব্যবধানে ২০১৭ সালে বেড়ে সাড়ে ১২ লাখে দাঁড়ায়। তবে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি যাত্রী বাড়ে। ওই বছর অভ্যন্তরীণ যাত্রী পারাপারের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ২১ হাজার। তবে করোনার কারণে ২০২০ সালের বেশির ভাগ সময় আকাশপথ বন্ধ থাকায় যাত্রী পরিবহন কমে যায়। যদিও কভিড পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে গত বছর অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী চলাচল আবারো বাড়তে শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালটি বহু আগের হওয়ায় সেখানে যাত্রীদের স্থান সংকুলান করতে সমস্যা হচ্ছে। আবার একসঙ্গে কয়েকটি ফ্লাইটের যাত্রী উপস্থিত হলে আসন সংকটে অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। যাত্রী চাপ সামলাতে সম্প্রতি টার্মিনালের পাশে আরেকটি ফ্লোর নির্মাণ করা হয়। তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এমন অবস্থায় ভবিষ্যতে যাত্রী প্রবৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের ওপর ৮ হাজার বর্গফুটের আরো একটি বহির্গমন লাউঞ্জ নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। বেবিচকের ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেটি বাস্তবায়িত হওয়ায় ওই প্রকল্পে কোনো আর্থিক ব্যয় হচ্ছে না। আর শুধু ঢাকায় নয়, অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা বাড়াতে দেশের অন্য বিমানবন্দরগুলোতেও প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে অচিরেই চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, বরিশাল, যশোর ও রাজশাহী বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম