অনলাইন ডেস্ক :
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস তার অর্থমন্ত্রী কোয়াটেংকে বরখাস্ত করার রেশ না কাটতেই এবার পদত্যাগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান। যিনি মাত্র ৪৩ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্রাভারম্যানের পদত্যাগের কারণ এখনও অস্পষ্ট। তবে অভিযোগ উঠেছে, তিনি নিজের ব্যক্তিগত ইমেইল থেকে পার্লামেন্টের সহকর্মীদের কাছে একটি ‘অফিসিয়াল ডকুমেন্ট’ পাঠিয়েছেন। ব্রাভারম্যান তার এই ‘প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘনের’ অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘‘সবারই উচিত ভুলের দায় স্বীকার করে নেওয়া। ‘‘আমরা কোনো ভুল করিনি এমন ভাব ধরা……এটাকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে রাজনীতি করা বলে না।” স্থানীয় সময় গত বুধবার বিকালে ব্রাভারম্যান তার পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানায় বিবিসি। পদত্যাগপত্রে ব্রাভারম্যান কিছুটা প্রচ্ছন্নভাবে প্রধানমন্ত্রী ট্রাসের সমালোচনাও করেছেন। ট্রাসের নীতির কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। ট্রাসকে তিনি লেখেন, ‘‘এই সরকারের নির্দেশনা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। ‘‘আমাদের ভোটারদেরকে প্রধান প্রধান যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল আমরা শুধু তা ভঙ্গই করিনি বরং নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলিকে, যেমন সামগ্রিক অভিবাসন সংখ্যা হ্রাস করা, অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করা, বিশেষ করে ছোট ছোট নৌকায় করে বিপজ্জনক ভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের আসা বন্ধা করার মত প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান রাখার বিষয়ে এই সরকারের স্বদিচ্ছা নিয়েও আমার গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে।” ব্রাভারম্যানের পদত্যাগ ট্রাস সরকারের ভেতরের বিশৃঙ্খলারই যেন আরও নগ্ন প্রকাশ ঘটিয়েছে। বিশেষ করে যখন ডাউনিং স্ট্রিট মরিয়া হয়ে জনগণকে সরকারের ভেতর ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে বলে দেখাতে চাইছে সেরকম একটি সময়ে। ব্রাভারম্যানের পদত্যাগে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যে বিশৃঙ্খলা আরো বাড়াবে। টোরি নেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে ট্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন ব্রাভারম্যান। যদিও তিনি শুরুতেই ঝরে পড়েন। কিন্তু তার রাজনৈতিক মিত্র বিশেষ করে ওইসব এমপি যারা ওই সময়ে তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন তারা ব্রাভারম্যানের পদত্যাগ সহজভাবে নেবেন না। ব্রাভারম্যানের উত্তরসূরি হিসাবে এরইমধ্যে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন গ্রান্ট শ্যাপস, যিনি কনজারভেটিভ দলের নেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে ঋষি সুনাকের বড় সমর্থক ছিলেন। ডাউনিং স্ট্রিট গত বুধবার এক টুইটে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে স্যাপসের নিয়োগের খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছে। গত মাসে ঋষি সুনাককে হারিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন ট্রাস। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দলীয় বিশৃঙ্খলা বিন্দু মাত্র কামাতে পারেননি। বরং তা এতটাই বেড়েছে যে তাকে উৎখাতের চেষ্টাও এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ব্রাভারম্যান মাত্র ৪৩ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম সময় দায়িত্বপালন করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্রাভারম্যানের পদত্যাগের পর প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টির শ্যাডো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেন, ‘‘সরকার পতনের মুখে। ‘‘আপনি আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও চ্যান্সেলরকে নিয়োগ দিলেন এবং মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে তাদের উভয়কেই চাকরিচ্যুত করলেন। এটা আপনার সরকারের ভেতর ভয়াবহ বিশৃঙ্খলারই প্রমাণ।” লিবারেল ডেমোক্রাটস নেতা অ্যালিস্টার কারমাইকেল বলেন, ‘‘এখন একমাত্র সমাধান হল জাতীয় নির্বাচন। যাতে জনগণ কনজারভেটিভদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার এই একের পর এক চিত্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।”
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু