May 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, June 22nd, 2023, 8:45 pm

যে কারণে নরেন্দ্র মোদিকে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক :

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চলতি সফরকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই সফরে দ্বিতীয়বারের মতো নরেন্দ্র মোদি মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা এই সম্মান পেয়েছেন। জো ও জিল বাইডেন গত বুধবার রাতে মোদিকে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেছেন। বোঝা যাচ্ছে, এই সফরকে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারতের বিশেষজ্ঞরা এই সফরকে কীভাবে দেখছেন? দিল্লির কূটনীতি বিশেষজ্ঞ প্রবীণ সাংবাদিক প্রণয় শর্মা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র পুরো রেড কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে মোদির জন্য। এই প্রথম মোদি দেশটিতে স্টেট ভিজিটে (রাষ্ট্রীয় সফরে) গেলেন। আগে তিনি বহুবার গেছেন, কিন্তু সেগুলো স্টেট ভিজিট নয়।’ প্রণয় শর্মা বলেন, ‘নানা ধরনের সফর হয়। ওয়ার্কিং ভিজিট হয়।

অল্প সময়ের জন্য এসে কিছু বিষয়ে আলোচনা করে রাষ্ট্রনেতা চলে যান। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ বা এই ধরনের একটা অনুষ্ঠান থাকে। কিন্তু স্টেট ভিজিটে যিনি আসবেন, তাঁকে ২১টি তোপধ্বনি দিয়ে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো হয়। সাউথ লনে সবার সঙ্গে আলাপ করানো হয়। নৈশভোজ বা ব্যাঙ্কোয়েট দেন প্রেসিডেন্ট। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা থাকেন।’ প্রণয়ের মতে, ‘মোদির প্রতি বাইপার্টিজান সমর্থন আছে। তার অর্থ, শুধু বাইডেন বা তার দল নয়, বিরোধী রিপাবলিকানরাও মোদিকে একইরকমভবে স্বাগত জানাচ্ছেন। তারাও চান, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক। হাউসের স্পিকার ম্যাকার্থি মোদিকে যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে ডেকেছেন। ফলে বাইডেন ও রিপাবলিকান দুই পক্ষই চাইছে, উভয় দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হোক।’ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কংগ্রেস সদস্য চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে যেন মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে প্রণয় শর্মা বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের মত থাকবে। সবার মত এক হবে, তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ভাইব্র্যান্ট গণতন্ত্র। তাদের নিজেদের প্রেসিডেন্টকে নিয়েও কত মত রয়েছে। তাই নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সরকারি একটা মত থাকতে পারে, কিছু প্রতিনিধির অন্য মত থাকতে পারে। তারা সেটা তুলতে পারেন। তবে সরকারিভাবে এমন কোনো প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হচ্ছে না, যাতে তিক্ততা বাড়ে। ইতিবাচক দিকটা তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।’

সামরিক দিক থেকে:

ভারতের অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন, ‘সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সফর। আমরা দীর্ঘদিন শুধু ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশ থেকে কেনা অস্ত্র দিয়ে লড়েছি। যখন সোভিয়েত ভেঙে যায়, আমাদের খুব অসুবিধা হয়েছিল। এখন আমরা ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশ থেকে অস্ত্র পাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর অস্ত্র পাচ্ছি বা পেতে পারি। যেমন ড্রোনের কথা হচ্ছে, সাবমেরিনের কথা হচ্ছে, জেট ইঞ্জিনের কথা হচ্ছে।’ উৎপল ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘২০০০ সালের পর থেকে যখন আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি করে অস্ত্র কেনা শুরু করলাম, তখন ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির অস্ত্র দিত না। কিছুটা পুরোনো অস্ত্র দিত। এখন অবস্থা পাল্টেছে। আমরাও আশা করব, সর্বশেষ অস্ত্র, প্রযুক্তি আমাদের দেবে তারা। পাকিস্তানকে ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির এফ-১৬ দিয়েছে।’

কেন যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রহ, এ প্রশ্নের জবাবে প্রণয় শর্মা মনে করেন, ‘ভারতের একটা বিশাল বাজার আছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র শুধু যে অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে তা নয়, বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাজার তাদের কাছে আকর্ষণীয়। ভারতের নলেজ পুল আছে। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোতে ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় উৎপাদন খরচ অনেক কম। তারা আগে চীনে বিনিয়োগ করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় করেছে। তবে চীনের পর ভারতের মতো এত বড় বাজার আর নেই।’ প্রণয় শর্মার মতে, ‘কোভিডের পর অনেকের মনে হচ্ছে, একমাত্র বাজারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। তাই ছড়িয়ে থাকতে হবে। তারা কিছু দেশ বেছে নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম।’ উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো প্রশান্ত মহাসাগর। চীন এটাকে দক্ষিণ চায়না সমুদ্রের সঙ্গে মিলিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করতে চাইছে। সেটি মোকাবিলায় কোয়াড হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত মিলে কোয়াড তৈরি করেছে। এটা চীনের প্রতি বার্তা। সেই দিক থেকে ভারতের গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাড়ছে।’ প্রণয় শর্মা আরও বলেন, ‘চীনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাইডেন দেখেছেন, তাদের আধিপত্যকে কোনো দেশ যদি চ্যালেঞ্জ করতে পারে, সেটা চীন। তাই চীনকে তারা সবচেয়ে বড় বিপদ মনে করে। এশিয়া প্যাসিফিকে বিভিন্ন দেশ আছে, যারা চীনের এই উত্থানে প্রচুর সমস্যায় আছে। আমরা জানি, ভারতের সঙ্গে সীমান্তে চীনের ২০২০ সাল থেকে সংঘাতের পরিস্থিতি রয়েছে। চীন একতরফা চুক্তি ভেঙে সীমানা বদলাতে চেয়েছে।’ প্রণয় শর্মার বক্তব্য, ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে চীনের মোকাবিলা করতে চাইছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চীনকে দেখবে, ভারত সেভাবে দেখতে পারে না। চীন ভারতের প্রতিবেশী দেশ। আমাদের সমস্যার মোকাবিলা অন্যভাবে করতে হবে।’

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য:

প্রণয় শর্মা বলেন, ‘ভারতের নীতি হলো, আমি কোনো দেশের সঙ্গে এমন শত্রুতা রাখব না, যাতে ক্ষতি হয়। গায়ে পড়ে ঝগড়া করলে অন্য কথা। তাছাড়া যত বেশি দেশের সঙ্গে সম্ভব সুসম্পর্ক রাখব। অনেক বিষয়ে একমত না হলেও রাখব। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা মানে রাশিয়ার সঙ্গে রাখতে পারব না, এমন নয়। আরও অনেক দেশের সঙ্গে ভারত সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে। তাতে ভারতের লাভ। কোনো দেশের প্রাধান্য তো তার নিজের স্বার্থ দেখা। সবাই এটা করে।’ উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা রাশিয়া বা ইউক্রেন কারও পক্ষে নেই। আমরা রাশিয়া থেকে তেল নিয়ে অন্য দেশে বিক্রি পর্যন্ত করছি। কারণ, আমরা নিজেদের স্বার্থ দেখছি। আমরা বলছি, যুদ্ধ কোনো বিকল্প নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক চায় ভারত। এটা একটা ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট, যা এখনও পর্যন্ত ভারত ঠিকভাবেই করে চলেছে।’