নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর:
পুলিশের হয়রানি বন্ধসহ ৯ দফা দাবিতে অটোরিকশা ও চার্জার ভ্যান মহানগর শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে বিভাগীয় নগরী সোমবার রংপুরে আধাবেলা ধর্মঘট পালিত হয়। অটোচালকদের ৬টি সংগঠন একত্রিত হয়ে ধর্মঘট পালন করে। এ ধর্মঘট চলাকালে নগরীতে ৮ ঘণ্টা কোনো রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করতে পারে নি। অটোরিকশাচালকদের ধর্মঘটের মধ্যে বিকল্প হিসেবে একদিনের জন্য বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
সোমবার (২১ মার্চ) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আধাবেলার ধর্মঘটে অটোরিকশাচালকদের সড়কে চলাচল অনেক কমে যায়। এতে চাকুরীজীবী , বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি হলো- পুলিশের হয়রানি বন্ধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রিকশা, ভ্যান ও ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যানের ভাড়া বৃদ্ধি করে নগরের বিশেষ বিশেষ জায়গায় তালিকা টাঙানো, শ্রমিকদের ওপর অন্যায়ভাবে পুলিশের চাপিয়ে দেওয়া জরিমানা আদায় বন্ধ, ব্যাটারিচালিত রিকশার দুই হাজার নতুন লাইসেন্স প্রদান, নগরের শাপলা চত্বর থেকে জিলা স্কুল মোড় পর্যন্ত প্রধান সড়কে রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে পৃথক লেন, রিকশাভ্যান ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরি, ছিনতাই ও প্রতারণা করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচার এবং ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা।
মহানগর জাতীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আকবর আলী, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বাবু এবং মহানগরের রিকশা-ভ্যানচালক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মজিদসহ শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেন- রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইসেন্স না থাকার অজুহাতে প্রায়ই অটোরিকশা আটকে থানা অথবা পুলিশ লাইনে কমপক্ষে ১৫ দিন ফেলে রাখে। পরে আড়াই হাজার টাকার মতো জরিমানা গুণতে হয়। আবার ঘুষ দিলে সাত দিনের মধ্যেই রিকশা ফেরত দিয়ে দেয়। শ্রমিক নেতারা আরও অভিযোগ করেন- পুলিশের অত্যাচারে নগরীর হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ বিপদে আছে। রংপুরে কোনও শিল্প কারখানা না থাকায় বিকল্প আয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই। যে কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে অটোরিকশা চালিয়ে জীবন কাটান। অথচ পুলিশ নানা অজুহাতে তাদের হয়রানি করছে। মহানগর ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান জাতীয় শ্রমিক ঐক্যজোটের ব্যানারে শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরে ধর্মঘটের পক্ষে নগরীজুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে সংগঠনগুলো। ধর্মঘটে জাতীয় পার্টিপন্থী শ্রমিক নেতারা নেতৃত্ব ছিলেন ।
যাত্রীদের দুর্ভোগ এড়াতে নগরীর সাতমাথা, মেডিক্যাল মোড়, মডার্ন মোড়, টার্মিনাল থেকে দর্শনা মোড় হয়ে নগরের ভেতরে সকাল থেকে ২০টি বাস চলাচল করছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে নগরবাসীর মধ্যে।তবে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে একদিনের জন্য বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় অনেক যাত্রীরই তা অজানা। এতে নগরীতে কিছুটা বিশৃঙ্খলাও দেখা গেছে।
রংপুর মোটর মালিক সমিতির সভাপতি একে এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘শহরে বাস চলছে জানতামই না।’খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ মিনিট পর পর বাসগুলো আসায় যাত্রীদের এখন আর বেশিক্ষণ স্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না। আবার বাসের ভাড়া অটোরিকশার ভাড়ার সমান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যাত্রী ও বাসের হেল্পাররা।
মা এন্টারপ্রাইজ বাসের চালক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘২০টি বাস সকাল ৬টা থেকে চলাচল করছে নগরের ভেতরে। বাসও যাত্রীতে পূর্ণ আবার কোথাও দাঁড়াতেও হচ্ছে না তাদের। এতে যাত্রীদের উপকার হয়েছে।
মা স্পেশাল বাসের হেল্পার মহুবর জানান, ‘আঞ্চলিক সড়কের চেয়ে যাত্রীও বেশি এখানে, ভাড়াও কম। সাত মাথা থেকে জাহাজ কোম্পানি আর মেডিক্যাল মোড়ে ভাড়া নিচ্ছি ২০ টাকা। অটোরিকশাতেও একই ভাড়া ছিল।’নিঝুম গাড়ির হেলপার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রীর অভাব নাই। গাড়িত সিট খালি থাকতাছে না। গাড়ি দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সিট ভর্তি।’তবে এতোগুলো বাস নগরের ভেতরে চলাচল করলেও নগরের বাহিরে গন্তব্যে যাওয়া লোকজন বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘রোববার অটোচালকদের বলেছি, তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার না করলে বাস চলাচলের অনুমতি দেব। কারণ, ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা আছে, এত বড় সংকটে শিক্ষার্থীদের ফেলতে পারি না। তাছাড়া চাকুরিজীবসিহ অনেক মানুষ দুর্ভোগে পড়বেন।’ মোস্তফা বলেন, রংপুরে অনেক বেশি অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা চলাচল করছে। অথচ সিটি কর্পোরেশন থেকে নিবন্ধন (লাইসেন্স) দেওয়া রয়েছে ৮ হাজার ২৪০টি ব্যাটারিচালিত চার্জার রিকশা ও অটোরিকশার। আন্দোলনরত শ্রমিকদের কিছু দাবি আমার এখতিয়ারে না হলেও অন্য দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।অটোচালকদের দাবিগুলো চাইলেই সমাধান করা যায় না। এ নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে বলে জানান সিটি মেয়র।##
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি