নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর :
বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ আর সার সংকট কাটিয়ে উঠিয়ে প্রতিকূলতা পার করে এবার রংপুর অঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছে রংপুর কৃষি বিভাগে কর্মকর্তারা। এবার শুধু রংপুর জেলা থেকেই ৯ লাখ ১৫ হাজার ২০০ টন চাল পাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। যা গত বছরের চেয়ে এক লাখ টন বেশি।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আগাম পাকা ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষক-মজুররা। পুরো ধান পাকতে আর কিছুটা সময় লাগবে বলে জানান কৃষকেরা। আগামী এক মাস ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকবেন কৃষক ও কৃষি শ্রমিকেরা।
এবারের আশাতীত ফলনে দারুণ খুশি কৃষকরা। এর আগে এত ভালো ফলন দেখেনি অনেকে। যদিও খরার পর বন্যা, খড়া, আর সারের সংকটে ভুগতে হয়েছে কৃষকদের।
ফলন ভালো হওয়া নিয়ে কৃষক সফর উদ্দিন জানান, বৃষ্টি কম হয়েছে। তা ছাড়া সারও ঠিকভাবে পাওয়া যায়নি। আমরা ক্ষেতে অনেক পরিশ্রম করেছি, তাই ভালো ফলন হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ফলন ভালো। অন্যান্য বার রংপুরের মজুররা দক্ষিণের জেলাগুলোতে ধান কাটতে যেতেন। এবার দলবেঁধে অন্যান্য জেলা থেকে ধান কাটতে এসেছেন রংপুরে।
কৃষি শ্রমিক সোনা মিয়া জানান, এবার আগাম ধান কাটতে কুড়িগ্রাম থেকে রংপুওে এসেছেন। গতবার ধান কাটার জন্য কুমিল্লা গিয়েছিলেন। এবার যেতে হবেনা। কারণ রংপুরে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। অনেক জোতদাড় তাদের জমির ধান কাটার জন্য আগাম টাকা দিয়েছেন। নভেম্বর ডিসেম্বর মাস ব্যস্ত সময় পার করতে হবে। তাই রংপুরে চলে আসছি। দুরে গেলে পরিবারের সাথে গেখা হয়না। এবার ইচ্ছে করলেই একদিনে বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে দেখা করে আসতে পারি।রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডিটিও কৃষিবিদ এনামুল হক জানান, সামনে আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর কৃষকরা তাদের ঘরে বাম্পার ফসল তুলতে পারবেন। আমন ধানের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভালো। আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ধান কর্তন করে ফেলেছি। এতে কৃষকরা খুবই খুশি। তিনি জানান, চাল আকারে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৫ টন উৎপাদনের আশা করছি।
চলতি বছর জেলায় এক লাখ ৬৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। সেই হিসাবে এ বছর ৯ লাখ ১৫ হাজার ২০০ টন চাল পাওয়া যাবে এ জেলা থেকে। গত বছর হেক্টরপ্রতি ফলন ছিল ৪ দশমিক ৮৯ টন। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, এবার কৃষকের জন্য সন্তোষজনক ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান-মাড়াই শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট আবাদের প্রায় ৩০ শতাংশ ধান কেটেছেন কৃষকরা। চলতি মাসেই ধান কাটার কাজ শেষ হবে।
এই আমন মৌসুমে রংপুর মহানগরসহ আট উপজেলায় হাইব্রিড, উফসী ও স্থানীয় মিলে প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর আগের মৌসুমের (২০২০-২১) তুলনায় এবার ২৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি ভালো ফলন হয়েছে। ২০২০-২১ মৌসুমে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর, ২০১৯-২০ মৌসুমে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৫ হেক্টর, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯৫ হেক্টর এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছিল।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি