April 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 26th, 2022, 6:39 pm

রংপুরে ৪০ কোটি টাকার জ্বালানী সাশ্রয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প

আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর :

রংপুর অঞ্চলে বৃষ্টিতে হাসি ফুটেছে আমন চাষিদের মুখে। মাঠে আমন রোপনে ব্যস্ত কৃষক রাতদিন পাড় করছেন । চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে আমন । রংপুর অঞ্চলে রংপুর , কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা,নীলফামারী জেলায় আমনে ৪০ কোটি টাকার জ্বালানী সাশ্রয় করেছে তিস্তা সেচ প্রকল্প। বর্ষার ভরা মৌসুমেও যখন আকাশের বৃষ্টির অভাবে মাটি ফেটে চৌচির তখন তিস্তা সেচ প্রকল্প নির্ভর কৃষকরা রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। নাম মাত্র খরচে সেচ সুবিধা পাওয়ায় বাম্পার ফলনেরও আশা করছেন প্রকল্পভুক্ত কৃষকরা।সরেজমিনে ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে। তবে সার ও কিটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ধানের নায্য মূল্য না পাওয়ায় শংকা রয়েছে তাদের।জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক অনিল চন্দ্র রায় বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে আমন করেছি। তিস্তা ক্যানেল না থাকিলে মরণ হইল হায় হামার। আকাশের পানি নাই। ক্যানেলের পানি হামরা জমিত দিবার পারিছি যখন প্রয়োজন তখন, কিন্তু যেইলা কৃষক ক্যানেলের গোড়োত নাই ওমরা তো শ্যাষ। পানি দিবার পায়ছে না জমিত।মাঝাপাড়া এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, তিন বিঘা জমিত আবাদ করিছি তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে। পানির কোন সমস্যা নাই। ৫০টাকা বিঘা প্রতি পানির জন্য দিবার নাগে।এইবার আকাশের অবস্থা খুব খারাপ, পানি না হওয়ায় জমি ফাটি যায়ছে মাইনসের। পানি বগলে(পানি অভাবে) ক্ষেত নষ্ট হয়ছে আর হামরা ক্যানেলের পানি পায়া ওই কষ্টোত নাই।

একই এলাকার বিধু রায় বলেন, ধানের চারা রোপণ থাকি ছয়বার পানি দিলে আর নাগে না। পর্যাপ্ত পানি ক্যানেলোত আছে, পাইছিও হামরা। ধানের চারা সবল আছে, ভালো ফলন হইবে আশা করি।তবে সুবিধা না পাওয়ায় আক্ষেপ রয়েছে অন্য কৃষকেরও। চাঁদেরহাট এলাকার কৃষক আফতাব উদ্দিন বলেন, দশ বিঘা জমিত আমন করিছি। আকাশের পানি নাই। খুব খরচ হয়ছে হামার। শ্যালো দিয়া পানি দিবার নাগেছে। ডিজেলের দাম বেশি, সারের দাম বেশি। হামরা বিপদোত আছি।তিনি বলেন, আমার বাড়ির পাশ পর্যন্ত তিস্তার ক্যানেল রয়েছে কিন্তু সেখান থেকে আমরা সুবিধা পাচ্ছি না। ক্যানেলটি সম্প্রসারণ করা হলে হামার এলাকার অনেক মানুষের উপকার হইল হয়।পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) নীলফামারী ডিভিশন সূত্র জানিয়েছে, খরার কারণে চলতি আমন মৌসুমে ৪০কোটি টাকার ডিজেল সাশ্রয় করেছে তিস্তা সেচ প্রকল্প। সেচ সুবিধা পাওয়ায় ব্যবহার করতে হয়নি শ্যালো মেশিন বা অন্য কোন সেচ যন্ত্র।১লাখ চার হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বিভিন্ন স্থানে ক্যানেল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ৭০ হাজার হেক্টরে সেচ দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্পের।তবে কৃষকদের চাহিদার ফলে এখন পর্যন্ত ৪৫হাজার হেক্টর জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করতে পেরেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর এই সুবিধা পেয়েছেন নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২উপজেলার প্রায় ১৫লাখ কৃষক।তীব্র তাপদাহের পর শ্রাবণের বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেশের উত্তরের জেলা রংপুরে। ফলে বিনা সেচে অধিক উৎপাদনের আশায় আমান চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি না পেয়ে কৃষক সেচ দিয়ে আমন চাষ করছে। এতে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় হতাশ তারা।কিছুটা দেরিতে হলেও বৃষ্টির পানি পেয়ে ফসল উৎপাদনে পুরোদমে জমিতে বেড়েছে কৃষকের ব্যস্ততা। এই মৌসুমেবৃষ্টি হওয়ায় সেচ খরচেও লাভবান হবেন কৃষকেরা।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্ট্র এবং নীলফামারীতে ১লাখ ১৩ হাজার ১০০ হেক্টর।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য সূত্রে আরও জানা গেছে, এ বছর রংপুর জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত রোপণ সম্পন্ন হয়েছে ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে। আমন ফসলে সারের চাহিদা বিঘা প্রতি গড়ে ২৫ কেজি। তবে ফসল ফলানোর প্রতিযোগিতায় সারের ব্যবহারে এখনো সচেতন নন কৃষকরা। ফলে ফসল অনুযায়ী চাহিদার তুলনায় বেশি সার ব্যবহার করছেন তারা।
জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী সারের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে রংপুরে। এ জেলায় ইউরিয়া সার রয়েছে ৩৯০০ মেট্রিক টন, টিএসপি ৫৮৮০ মেট্রিক টন, ডিএপি ৩১৮৬ মেট্রিক টন, এমওপি ৬৩৫১ মেট্রিক টন। সার কিনতে আসা কৃষক আলী হোসেন বলেন , ‘ দুই দোন জমিতে ধান চাষ করি। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উপকার হইছে। জমিতে সেচ দিতে হয় নাই। এই আবাদ দিয়ে সংসার চলে। বৃষ্টি হয়্যা বাড়তি খরচ কমছে। শুনছি সারের দাম বাড়ছে। কিন্তু আজকেও আগের দামেই সার কিনছি। ইউরিয়া প্রতি বস্তা ৮০০ টাকা। সারের দাম কম থাকলে আমাদের জন্য ভালো হয়। আবাদ করি পরিবার নিয়া সুখে- দুঃখে দিন কাটে।’
রংপুর মেট্রোপলিটন মাহিগঞ্জ -১ এর সার মনিটরিং দায়িত্বরত উপ সহকারী কৃষি অফিসার নুরুন্নাহার খানম বলেন, ‘সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে আনতে সারের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সার পর্যাপ্ত রয়েছে। নায্য মূল্যে সার বিক্রিতে মাঠে আমরা তৎপর। এখন পর্যন্ত আগের দরেই সার বিক্রি হচ্ছে।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মাহবুবার রহমান বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পরপরই কৃষি অধিদপ্তর তৎপর হয়। যে মূল্যে সার কিনেছে ডিলাররা সেই মূল্যেই সার বিক্রি করতে হবে তাদের। আর তাই মনিটরিংয়ের কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
সারের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিসিআইসি অনুমোদিত ডিলাররা বলেন, বর্তমান সারের দাম কিছুটা বেড়েছে। পর্যাপ্ত সার মজুত থাকায় মনে হয় না অস্বাভাবিক পরিস্থিতির শিকার হতে হবে কৃষকদের। কৃষকদের সুষম মাত্রার সার ব্যবহার,জৈব, অজৈব ও গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ এবং পোকা দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।রংপুরের তারাগঞ্জের কৃষক শাকিল আলম, মনজুর আলী মনজু বলেন, আষাঢের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। তাই আমরা আষাঢ়ের বৃষ্টির পানিতেই রোপা আমন ধান চাষের প্রস্তুতি নেই। মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বুজরুক হরিপুর গ্রামের বর্গাচাষি মো: খয়বর হোসেন, আমরুল ইসলাম , আরজুর জানান পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে আমন ধান রোপন করা হয়েছে । বিনা রংপুর কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড, মোহাম্মদ আলী জানান ,চলতি বছর রংপুর অঞ্চলে বিনা -১৭ জাতের ধান চাষ করে কৃষকদের আগাম চাষে উদ্ভুদ্ধ করা হয়েছে । বিনা থেকে সার বীজ দেয়া হয়েছে । এতে করে কৃষক ওই জমিতে পরে রবি সস্য চাষ করতে পারবে । তিনি আরও বলেন এ রংপুর অঞ্চলে কৃষকদের হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হয়েছে । পরবর্তীতে কৃষক আগাম আলু, সরিষা, গম , ভ’ট্টা ইত্যাদি ব্যাপক ভাবে চাষ করতে পারবে । অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় কৃকি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৫ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্ট্র এবং নীলফামারীতে ১ লাখ ১৩ হাজার ১০০ হেক্টর। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান চলতি বছর রংপুর জেলায় আমনের বাম্পার ফলন হবে । তিনি বলেন এ বছর প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৭ হাজার কৃসককে আনা হয়েছে । তিনি আর ও বলেন একজন কৃষক উচ্চ ফলনশীল ৫ কেজি ধান ১০ কেজি ডিএপি ও এমওপি সার দেয়া হয়েছে । ##